শ্রীমঙ্গল থেকে: বাংলাদেশের গড় চা উৎপাদনের হার হেক্টর প্রতি ১২শ’ কেজি। অথচ হেক্টর প্রতি দ্বিগুণ পরিমানে চা উৎপাদন (২০১৫ সালে) করছে জেরিন টি স্টেট।
সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মালিক-শ্রমিকের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে জানান জেরিন টি গার্ডেনের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা। দিন দিন উৎপাদন বাড়ছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চা উৎপাদনকারী বাগানটিতে।
রোববার (০৫ জুন) বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ পরিসংখ্যান জানান সেলিম রেজা। তিনি বলেন, জেরিন টি স্টেট শুধু ব্যবসা নয়, শ্রমিক ও স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়নেও সবসময় সচেতন।
‘আমরা শ্রমিকদের বিষয়ে আন্তরিক, তারাও আমাদের বিষয়ে আন্তরিক। আর দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণে চা উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। ’
২০০৫ সালে জেরিন টি স্টেটে যোগ দেন সেলিম রেজা। তখন এতে উৎপাদনের হার ছিল দুই হাজার কেজি (হেক্টর)। দিনে দিনে বেড়ে আড়াই হাজারে গিয়ে ঠেকেছে। আসছে বছরে আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিশেষ কোনো যাদু জানেন না-কি? লাজুক হাসি দেন সেলিম রেজা। বলেন, এখানে আমার চেয়ে আমার ঊর্ধ্বতনের (জেরিন চায়ের সিওও গোলাম মোস্তফা) কৃতিত্ব অনেক বেশি। তার গাইড লাইনের কারণে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।
জেরিন একমাত্র চা বাগান, যেখানে ২০০৯ সালে শতভাগ স্যানিটেশন নিশ্চিত করেছে। এছাড়া শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন গড়ে দেওয়া হয়েছে কোম্পানির পক্ষ থেকে। টিলার গায়ে বাড়িগুলোতে ওঠা-নামা করতে যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য কংক্রিটের সিঁড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান সেলিম রেজা।
অফিস টিলা, বাংলা টিলা, গারো টিলার অধিবাসীদের জন্য গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। দুর্গম গ্রামগুলো এতোদিন ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত। সেই গ্রামগুলো এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। ৬০ শতাংশ বাড়ি এখন বিদ্যুতের আওতায়। বাকি চল্লিশ শতাংশ চলতি বছরেই বিদ্যুতায়িত হবে বলে জানান তিনি।
অন্য অঞ্চলের মতো সরকারি খরচে বিদ্যুতায়ন হয়নি এখানে। জেরিন টি স্টেট নিজস্ব অর্থায়নেই বিদ্যুতায়িত করে দিয়েছে।
নিজস্ব জমিতে ২০০৯ সালে জেরিন চা বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে। যা ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হয়েছে। জাতীয়করণের আগ পর্যন্ত শিক্ষকের বেতন থেকে যাবতীয় খরচ যুগিয়েছে জেরিন চা। যে কারণে চা বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য পড়ালেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এসব জনহিতকর কাজের জন্য জেরিনকে ‘আপনার’ কোম্পানি বলে ধরে নিয়েছে শ্রমিকরা। আর তারাও প্রতিদানে নিজের শ্রম দিয়ে দেশের শীর্ষস্থানে পৌঁছে দিয়েছে জেরিন টি স্টেটকে। সুন্দরের সঙ্গে মঙ্গল যুক্ত হয়ে গঠিত শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বকোণে অবস্থিত এ বাগানটিতে জমির পরিমাণ ৭৮০ একর।
শ্রীমঙ্গলের সুন্দর চা বাগানগুলোর মধ্যেও এগিয়ে জেরিন। টিলার উপরের বাংলোটি মনোরম পরিবেশে তৈরি। চারপাশে সবুজ লন, নানান প্রজাতির বাহারি ফুল, পাখির কলতান, প্রজাপতির ওড়াউড়ি। বাগানের ভেতর দিয়ে চলে গেছে সর্পিল রাস্তা। প্রত্যেকটি টিলাই এক একটি সবুজের ঢিবি। থরে সাজানো সে সবুজ। এমএম ইস্পাহানী লিমিটেডের মোট ৪টি বাগান। এতে বছরে ৩ মিলিয়ন (৩০ লাখ) টন চা উৎপাদিত হয়। এগুলো হচ্ছে মৌলভীবাজারে মির্জাপুর, জেরিন গাজীপুর ও নেপচুন (চট্টগ্রাম)। কোম্পানিটি দেশে উৎপাদিত চায়ের পাঁচ শতাংশ উৎপাদন করছে। ব্র্যান্ড নেম ইস্পাহানী মির্জাপুর চা, জেরিন নামেও বাজারজাত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৬
এসআই/জেডএস