মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মহাকবি মধুসূদন পদক ২০২৩’ পেলেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখায় গবেষণাধর্মী সাহিত্যকর্ম ক্যাটাগরিতে তাঁকে এই পদক দেওয়া হয়।
মধুমেলার ষষ্ঠ দিন সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় খুলনার ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুর ইসলাম সাগদাঁড়ির মধুমঞ্চে ড. কুদরত-ই-হুদার হাতে পদক তুলে দেন।
এ বছর মধুসূদন পদকপ্রাপ্ত কুদরত-ই-হুদা শ্রীনগর সরকারি কলেজ, মুন্সিগঞ্জের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তিনি ১৯৭৮ সালের ২৫ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙা উপজেলার ব্যাংকেরচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
২৫ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত যশোরের সাগরদাঁড়িতে অনুষ্ঠিত মধুমেলার ষষ্ঠ দিনে এবারের পদক প্রদান করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান। কুদরত-ই-হুদার হাতে সম্মানজনক মধুসূদন পদক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এবং খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. শহীদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ সাধন রঞ্জন ঘোষসহ বিশিষ্টজনেরা।
পদকের সাথে ড. হুদার হাতে তুলে দেওয়া হয় এক লাখ টাকার চেক ও একটি সনদ। তিনি তাঁর গবেষণাকর্ম জাতীয়তাবাদী চিন্তার বিকাশ: বাংলাদেশের ষাটের দশকের কবিতা গ্রন্থের জন্য এবছর মধুসূদন পদক লাভ করেন।
মধুসূদন পদকের জুরিবোর্ডের অন্যতম সদস্য প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ তাঁর বক্তৃতায় গ্রন্থটি সম্পর্কে বলেন, ‘আমি জুরিবোর্ডের একজন সদস্য ছিলাম। কুদরত-ই-হুদা যে গবেষণাগ্রন্থটি রচনা করেছেন, এটি আমাদের গবেষণাসাহিত্যে নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংযোজন। ’
জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘ষাটের দশক বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রস্তুতির সময়। এই সময়ের কবিতায় জাতীয়তাবাদী চিন্তার প্রকাশ নিয়ে কুদরত-ই-হুদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। আমরা তাঁকে মধুসূদন পদক প্রদান করতে পেরে আনন্দিত। ’
পদকপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হুদা বলেন, ‘আপনারা যারা আমাকে চেনেন না তারা ভাবতে পারেন আমি এখানে আগন্তুক। কিন্তু আমি কোনো আগন্তুক নই। আমার বাবা কবিরত্ন এম এ হককে সেই ষাটের দশকে ‘কবিরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করে এই যশোরেরই একটি সংগঠন ‘যশোর সাহিত্য সংঘ’। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় এই মধুমেলায় নিয়মিত আসতেন। মধুস্মরণে নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন আমার বাবা ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙা উপজেলা থেকে। ‘মধুস্মরণে’ নামে আমার বাবার লেখা কবিতা আমি কৈশোরেই পড়েছি। ফলে আমি এখানে কোনো আগন্তুক নই; পরম্পরা হিসেবেই এসেছি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এই পদকের জুরিবোর্ডের সদস্যবৃন্দ ও মধুসূদন ফাউন্ডেশনের সভাপতিকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই বিচারকাজে সৎ থাকার জন্যে। তাঁদের নিরপেক্ষতাই আজ আমাকে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। নতুবা আমার এই পদক অর্জনের কী সাধ্য! আমরা তো আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত দেখি কত বড় বড় পুরস্কার বিচারকাজের নয়-ছয়ের কারণে দিন দিন কতই না ছোট হয়ে যাচ্ছে। মধুসূদন পদক এভাবে তার মর্যাদা ধরে রাখুক; কখনো ছোট না হোক সেই কামনা করি। ’
পদকপ্রাপ্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি। আপনারা আজ আমাকে পদকের যে-পতাকা প্রদান করলেন আমি যেন তা চিরকাল বহন করার শক্তি পাই সেই প্রার্থনা করবেন। ’
ড. কুদরত-ই-হুদার পদকপ্রাপ্ত ‘জাতীয়তাবাদী চিন্তার বিকাশ: বাংলাদেশের ষাটের দশকের কবিতা’ গবেষণাগ্রন্থটি ২০২২ সালে বাংলা একাডেমি থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বিশেষ প্রকাশনা হিসেবে প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৩
এমজেএফ