ঢাকা: নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে ধার করা ধনে হয়তো সমৃদ্ধি অর্জন করা যায়, কিন্তু তা কতটা স্থায়ী সে প্রশ্ন থেকেই যায়। শিকড়সন্ধানী না হয়ে আমাদের শিকড়হীনভাবে এগিয়ে যাওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট সাহিত্য বোদ্ধারা।
সাহিত্য শিল্প ও সংস্কৃতিবিষয়ক মাসিক সাহিত্য পত্রিকা কালি ও কলমের ২০ বছরপূর্তি উপলক্ষে ৮ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে তিন দিনব্যাপী সাহিত্য সম্মেলন আয়োজন করেছে। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) তিনটি আলোচনার বিভিন্ন সময় উঠে আসে এমন কথা।
বিকেল ৪টায় ‘লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি-সমকালে শিকড়সন্ধান কতটা জরুরি’ বিষয়ে কথা বলেন লোকসংস্কৃতি গবেষক ও নাট্যকার সাইমন জাকারিয়া, প্রাবন্ধিক ও গবেষক রঞ্জনা বিশ্বাস, গবেষক ও লেখক সঞ্জীব দ্রং এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী।
বক্তারা বলেন, একটি জাতির শিকড় প্রোথিত থাকে তার লোকজ সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মধ্যে। আমার আমিকে ভুলে গিয়ে উন্নতির শিখরে পৌঁছানো হয়তো যায়, নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে ধার করা ধনে হয়তো সমৃদ্ধি অর্জন করা যায়, কিন্তু তা কতটা স্থায়ী সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এ সময়ে সবকিছুতে বৈশ্বিক মানে পৌঁছানোর দৌড়ে লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতিকে একপাশে সরিয়ে রাখার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। প্রশ্ন জাগে, শিকড়সন্ধানী না হয়ে আমাদের কী যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্য কোনো শিকড়ে নিজেদের জুড়ে নেওয়া সম্ভব? কিন্তু আমাদের শিকড়হীনভাবে এগিয়ে যাওয়া উচিত নয়।
বিকেল ৫টায় ‘সৃজনকলার ভেতর-বাইর’ বিষয় নিয়ে কথা বলেন শিল্পী ও শিল্প-লেখক মুস্তাফা জামান, স্থপতি ও শিক্ষাবিদ সাইফ উল হক, আলোকচিত্রী জান্নাতুল মাওয়া এবং নগরবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস নজরুল ইসলাম।
বক্তারা বলেন, সৃজনকলার ক্ষেত্রটি বিস্তৃত, এতে অন্তর্ভুক্ত সাহিত্য থেকে নিয়ে চলচ্চিত্র, শিল্পকলা থেকে নিয়ে স্থাপত্য। সৃজনকলার একটি দিক আছে, আছে কৃত্যের ও সক্রিয়তার আরেকটি দিক। সৃজনকলায় কল্পনা আছে, আবেগ আছে, যুক্তি এবং বুদ্ধির শাসনও আছে। সাহিত্য একসময় শোনা হতো, এখন পড়া হয়, আবার দেখাও হয়। গল্প বলা শুধু গল্প, উপন্যাস, নাটকের বিষয় নয়; পটচিত্রের, চিত্রকলার এবং স্থাপত্যেরও। অর্থাৎ সৃজনকলার কোনটা ভেতরের কোনটা বাইরের তা নির্ণয় করা কঠিন। কিন্তু ভেতর-বাইরের এ দ্বিমুখী স্রোত, একটি কলায় অন্য কলার উপস্থিতি দৃশ্যমান বিশেষজ্ঞতার ও পেশাগত গণ্ডিতে বিভিন্ন কলাকে আলাদা করে রাখা এ যুগে সম্ভব নয়। আধুনিকতার সঙ্গে ঐতিহ্যের, ব্যক্তিগত প্রতিভার সঙ্গে বহুজনের অবদান এবং পেশার সঙ্গে ভালোবাসার সম্মিলন ঘটাতে সাহিত্যের সঙ্গে অন্যত্র শিল্পের সম্পর্কটাও দৃশ্যমান করতে হবে।
সন্ধ্যা ৭টায় ‘তারুণ্য কী সত্যি জাগছে’ বিষয় নিয়ে কথা আলোচনা করেন এভারেস্ট শৃঙ্গজয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাত মজুমদার, গায়ক ও গীতিকার শিবু কুমার শীল, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী, কবি ও সাংবাদিক হানযালা হান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কবি শামীম রেজা।
বক্তারা বলেন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ বাংলা সাহিত্যের যারা দিকপাল তারা সবাই ভরসা রেখেছিলেন তারুণ্যের ওপর। পুরাতনকে সরিয়ে নতুন আলোর আভায় জীবনকে উদ্ভাসিত করবে তরুণরা এমন ধারণাই পোষণ করতেন তারা। আমরাও করি। প্রাচীনকাল থেকে আধুনিককাল পর্যন্ত যত পরিবর্তন আর অর্জন তার বেশিরভাগই ঘটেছে নবীনদের হাত ধরে। ভাষা-আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলন-উন্নয়নের ধারাকে সঞ্জীবিত করতে তরুণদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪
এইচএমএস/আরবি