১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
১২তম কিস্তির লিংক
___________________________________
ব্যায়াম শিক্ষয়ত্রী ফের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। ‘এখন আমরা দেখব আমাদের মধ্যে কে কে নিজেদের পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁয়ে দিতে পারি’—বেশ খানিকটা উৎসাহের সঙ্গেই বললেন তিনি। ‘ঠিক নিতম্বের উপর দিকটা ভাঁজ করে, আসুন কমরেডরা, আসুন এক-দুই! এক-দুই!’
ব্যায়ামকে স্রেফ ঘৃণা করে উইনস্টন। এতে তার পায়ের গোড়ালি থেকে নিতম্ব পর্যন্ত ব্যথায় টন টন করতে থাকে। আর প্রায়শই আরেক দমক কাশি ধরিয়ে ছাড়ে। ধ্যানের মাঝে আধাসন্তুষ্টির অভিব্যক্তি উবে গেছে। ফের ভাবনা শুরু, অতীত পাল্টে দেওয়া হয়নি, আসলে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। যখন সবচেয়ে ধ্রুব সত্যটিরও অস্তিত্ব আপনি আপনার নিজের স্মৃতির বাইরে আর কোথাও খুঁজে পাবেন না তখন তা কিভাবেই বা প্রতিষ্ঠিত করবেন?
সে মনে করার চেষ্টা করল, কোন বছর বিগ ব্রাদারের কথা তার প্রথম কানে এসেছিল। তার মনে হলো ষাটের দশকের কোনও একটি সময়েই হবে, তবে ঠিক নিশ্চিত করা অসম্ভব। দলের ইতিহাসে দেখানো হচ্ছে বিগ ব্রাদার বিপ্লবের একেবারে গোড়ার দিনগুলো থেকেই এর নেতা আর অভিভাবক হয়ে আছেন। তার বীরত্বগাঁথা ধীরে ধীরে পেছন থেকে আরও পেছনের সময় পর্যন্ত বিস্তৃত করা হচ্ছে যা এরই মধ্যে চল্লিশের দশক ছাড়িয়ে ত্রিশের দশকের অনুপম বিশ্বের সময় অবধি ডানা মেলেছে, যখন পুঁজিপতিরা অদ্ভুত সিলিন্ডার আকৃতির হ্যাট চাপিয়ে চকচকে মোটরগাড়ি হাঁকিয়ে কিংবা কাচ বসানো ঘোড়ার-শকটে চেপে লন্ডনের রাস্তায় দাবড়ে বেড়াতেন। তার জানা নেই এইসব লৌকিক উপাখ্যানের কতটা সত্য আর কতটা বানোয়াট। উইনস্টনের এও মনে পড়ে না কোন তারিখে এই পার্টির জন্ম হলো।
১৯৬০ এর আগে ইংসক শব্দটি একটিবারের জন্যও শুনেছে বলে সে বিশ্বাসই করে না। তবে হতে পারে ওল্ডস্পিক ফর্মটি ছিল ‘ইংলিশ সোশ্যালিজম’, সেদিক থেকে বলা যায় অতীতেও এর অস্তিত্ব ছিল। সবকিছুই ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন। কখনও একটি সুনির্দিষ্ট মিথ্যার ওপর আপনি অঙ্গুলি নির্দেশ করতে পারবেন না। ধরুন, পার্টির ইতিহাস বইগুলোতে দাবি করা হয়েছে, পার্টি বিমানের আবিষ্কারক। কিন্তু এটা অসত্য। এমন কোনও তথ্যপ্রমাণই নেই। সারা জীবনে কেবল একটিবার তার হাতে পড়েছিল ঐতিহাসিক সত্যকে মিথ্যায়নের নির্ভুল প্রমাণ্য দলিল। আর সে ঘটনায়—
‘স্মিথ!’ টেলিস্ক্রিন থেকে কর্কশকণ্ঠের চিৎকার ভেসে এলো। ‘৬০৭৯ স্মিথ ডব্লিউ! হ্যাঁ, তুমি, দয়া করে নিচে ঝোঁকো! তুমি এর চেয়ে ভালো পারো। তুমি চেষ্টা করছো না। আরও নিচে, প্লিজ! এবার ভালো হচ্ছে, কমরেড। এবার সবাই আরামে দাঁড়াও, আর আমাকে দেখ। ’
হঠাৎ উইনস্টনের সারা শরীর দিয়ে গরম ঘাম ছুটল। চেহারাটি সম্পূর্ণ দুর্বোধ্য হয়েই থাকল। হতাশার অভিব্যক্তি নেই। নেই ক্ষোভেরও প্রকাশ। চোখের পলকে অভিব্যক্তি পাল্টে যাবে। দাঁড়িয়ে থেকে শিক্ষয়ত্রীর মাথার ওপর তুলে ধরা বাহুদুটি দেখছিল সে। দারুণ লাগছে, এমনটা হয়ত কেউই বলবে না, তবে একটা পরিচ্ছন্নতা ও দক্ষতার প্রকাশ ছিল—এরপর নিচু হলেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলী দুটির নিচের প্রথম ভাঁজ পর্যন্ত ছুঁয়ে দিলেন।
‘তিন, কমরেডরা! আমি চাই ঠিক এভাবেই করে দেখাও তোমরা সবাই। আবার আমাকে দেখ। আমার এখন ঊনচল্লিশ বছর। চার সন্তানের মা। ’ এরপর আবারও নিচু হলেন। ‘তোমরা দেখতে পাচ্ছো আমার হাঁটু একটুও ভাঁজ হয়নি। ’ ‘তোমরা সবাই চাইলেই এটা করতে পারো,’ আবার সোজা হয়ে বললেন তিনি।
‘পঁয়তাল্লিশের নিচে যে কেউ সহজেই নিচু হয়ে তাদের পা ছুঁয়ে দিতে পারবে। আমাদের সবার যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে লড়াই করার সুযোগ নেই। কিন্তু আমরা অন্তত আমাদের নিজেদের ফিট রাখতে পারি। মনে রেখ আমাদের ছেলেরা মালাবার যুদ্ধক্ষেত্রে লড়ছে! নাবিকেরা রয়েছে ভাসমান দূর্গে! একবার চিন্তা করো ওদের কত ঝুঁকিই না নিতে হচ্ছে। এখন আবার চেষ্টা করো কমরেডরা, এবার অনেক ভালো হচ্ছে’—বলছিলেন নারী শিক্ষয়ত্রী। ঠিক তখনই উইনস্টন প্রাণপন চেষ্টায় তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁয়ে দিল। গত ক’বছরে এই প্রথম সে কাজটি করতে পারল।
১৪তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (১৩) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।