সে অনেককাল আগের কথা। আজকের বিশাল লোহার পোলটা ছিল বাঁশের সাঁকো, আর ব্যস্ত সড়কটা ছিল ছোট্ট মেঠো পথ মাত্র।
একজন চোর মারা গেছে—এতে কারও ভ্রুক্ষেপ করার কোনও কারণ ছিল না, কিন্তু বিপত্তি ঘটল হামদু চোরার ছাগল চুরির দায়ভার যখন পাড়ার সবচেয়ে প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী ও সম্মানিত জন জাফর সওদাগর-এর ওপর বর্তাল! হামদু চোরা নাকি পিটুনি সহ্য করতে না পেরে মুখ ফসকে বলে ফেলেছে, সে জাফর সওদাগরকে উৎকোচ দিয়ে কাজটা করে যাচ্ছে! সেই দিন থেকে মোড়টার নামকরণ হতে শুরু করল ‘ছাগল চোরার টেক’। সে ছিল দেখার মত দৃশ্য, মুহুরি পাড়ার মানুষ জোরেশোরে প্রচার চালায়, এলাকার নাম ‘ছাগল চোরার টেক’, আর ‘ছাগল চোরার টেক’-এর মানুষ জোরেশোরে প্রচার চালায় এলাকার নাম ‘মোল্লা পাড়া’। চোরের বিপরীতে মোল্লা! সেই ঘটনার জীবন্ত সাক্ষী, তৎসময়ের সাত বছরের বালিকাবধূ এখন নব্বই বছরের বৃদ্ধা সুরতের নেছা প্রকাশ লায়লার মা। এখনও স্মৃতি হাতড়ে কখনও কখনও উত্তর প্রজন্মকে শোনান সেই রমরমা প্রচারণার জমজমাট কাহিনী। তার সেই বর্ণনা থেকে আমরা শুনতে পাই, সাপের মত আঁকাবাঁকা হয়ে চলে যাওয়া একটা রাস্তা, সেই রাস্তার দুই পাশে জঙ্গলাবৃত্ত। রাস্তাটার মাঝ বরাবর এসে দুই ভাগ হয়েছে একটা জলচলাচলের নর্দমা। নর্দমাটার ওপর বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকোর পাশে বসেই হামদু চোর ছাগলের মাংস বিক্রি করত। একদিন ভরদুপুরে হামদু চোরার লাশ মৃত ছাগলের মত দড়ি দিয়ে টানতে টানতে সাঁকোর কাছে এনেছে মুহুরি পাড়ার শ’দুয়েক মানুষ। তারপর লাশটা মধ্যে রেখে মানুষগুলোর সে কি উল্লাস! যেন কোনও মানুষখেকো বাঘকে হত্যা করতে পেরে শিকারি গৌরব প্রকাশ করছে। এই মানুষদের মধ্যে কেউ একজন সাঁকোর ওপর দাঁড়িয়ে নেতার মত অঙ্গুল নাচিয়ে চিৎকার করে কী যেন বলেছিল। কী বলেছিল? সে কথা সূরতের নেছা নিজ কানে না শুনলেও পরে শুনেছে, বৈঠক হয়েছিল সুরতের নেছার ঘরেই।
আজও স্পষ্ট মনে পড়ে সুরতের নেছার, জাফর সওদাগর গর্জন করে বলে উঠেছিল: ‘চোদানির পোয়ালের এত বড় সাহস! আরার পাড়ার নাম দিয়ে নাকি, ‘ছাগল চোরার টেক’, আজিয়াতুন আরার পাড়ার নাম হইবোদে ‘মোল্লা পাড়া’—তোরা কী হছ? উপস্থিত শত শত মানুষ সম্মিলিত কণ্ঠে বলে উঠেছিল ঠিক আছে, ঠিক আছে। সেই বৈঠকের কথপোকথন সেই দিনকার বালিকাবধু সুরতের নেছা আড়াল থেকে শুনেছিল। শুনেছিল, সেদিন সেই নেতার মত লোকটা সাঁকোর ওপর দাঁড়িয়ে বলেছিল, যে পাড়ার সবচেয়ে বড় সম্মানিত মানুষটা চুরির ভাগ নেয়, সে পাড়ার সবাই চোর! তাই আজ থেকে এলাকার নাম হোক ছাগল চোরার টেক। ঘটনার সময় এলাকাবাসী সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদ কিংবা প্রতিরোধ করেনি ঠিকই, কিন্তু জাফর সওদাগরের হুকুমে পালটা প্রচারণায় নেমেছিল কোমর বেঁধে। যার ফল হিসেবে এলাকার উত্তর প্রজন্মের মানুষেরা নিজের ঠিকানা বলতে পারছে ‘মোল্লা পাড়া মোড়’। ‘ছাগল চোরার টেক’ নামটা শুধু সুরতের নেছার স্মৃতিতেই আছে। স্মৃতিচারণ করার জন্য তার মত আজ আর কেউ বেঁচেও নেই।
২.
সাপের মত আঁকাবাঁকা বয়ে-চলা সেই রাস্তাটা এখন ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাংক রোডের প্রধান সংযোগ সড়ক। বাঁশের সেই সাঁকোটা এখন লোহার পোল, জঙ্গলাবৃত্ত সেই জনপদ এখন মানুষের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। আর ধূ ধূ মাঠগুলো এখন আবাসন প্রকল্প। বিশাল ইমারতের মতই অভাব নেই ছোট ছোট খুপরি বস্তির। সেরকম একটা বস্তিতেই দীর্ঘদিন ধরে থাকে এবদা উল্লাহ খান প্রকাশ এবাদ্যা চোরা। তবে এবদা হামদুর মত ছাগল চোর নয়, কিংবা বলা যায় শহরে এখন কেউ আর গরু-ছাগল পোষে না বলে তার পক্ষে ছাগল চোর হওয়া সম্ভব হয় না। সে চুরি করে বাইরে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা জিনিসপত্র, মসজিদে গিয়ে মুসল্লিদের জুতা, পানির মোটর, কিংবা মিটার। সুযোগ বুঝে মোবাইল সেট, সাইকেল কিংবা রিকশা চুরির অভিযোগও তার বিরুদ্ধে আছে। একদিন কোন এক বিল্ডিংয়ের পানির মোটর চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা খেয়েছিল। বিল্ডিংয়ের মালিক তাকে পিটুনি দিয়ে তুলে দিয়েছিল পুলিশের হাতে। ওই চুরির অভিযোগেই এবাদ্যা চোরার একটানা পাঁচ বছর কাটল শ্রীঘরে! এলাকায় যখন হত্যা মামলার দাগি আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তখন কেউ কেউ এবাদ্যা চোরার লঘু অপরাধের গুরু দণ্ডের কথা ভেবে মনে মনে আপসোস করতে শুরু করল। পাক্কা পাঁচ বছর পর এবাদ্যা চোরা একদিন এলাকায় ফিরে আসলো। আসলো না বলে বলা যায় তাকে জেল থেকে বের করে আনা হলো, আর এই মানবিক কাজটা করল হাজি মুরাদ। অনেকের ধারণা, জাফর সওদাগরের উত্তরসূরী ও নগরীর সবচেয়ে বড় রিকশা মালিক হাজি মুরাদের আসন্ন সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এবং নিজের নামের আগে সমাজসেবক তকমা লাগানোর পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবেই এবাদ্যা চোরাকে কারামুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তবে এলাকাবাসি মোটামুটি একমত যে, উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন কাজটা মহৎ। কারণ দেশে বিচার-আচারের যে অবস্থা সেই বিবেচনায় এবাদ্যা চোরা আসলে লঘু অপরাধের গুরু দণ্ডই ভোগ করেছে। বিনা বিচারে জেল খেটেছে টানা পাঁচ বছর, হাজি মুরাদ ছাড়ানোর ব্যবস্থা না করলে হয়ত বাকি জীবন এবাদ্যা চোরাকে জেলেই পঁচে মরতে হতো। হাজি মুরাদ এবাদ্যা চোরাকে শুধু জেল থেকে ছাড়িয়ে দায়িত্ব শেষ করেনি, চুরির স্বভাবের কারণে এলাকার কেউ তাকে কাজ দিচ্ছিল না। হাজি মুরাদ তার গ্যারেজ থেকে একটা রিকশার ব্যবস্থা করে দিল তাকে, যাতে কিছু করে খেতে পারে। তার এই উদ্যোগ এলাকায় রীতিমত চাঞ্চল্য তৈরি করল। খুঁদে মাস্তান ও সিঁদেল চোর এবাদ্যাও গেল পালটে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে মসজিদে গিয়ে। সর্বদা মাথায় থাকে টুপি আর চোখে সুরমা। যদিও এত কিছুর পরেও নামের সাথে চোর বিশেষণটা এখন ঘোচাতে পারেনি সে, তবুও এলাকার সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে, এবাদ্যা চোরা শুধু নামে চোর—বাস্তবে সে এখন ভালো মানুষ। আর একজন চোরের ভালো মানুষ হয়ে ওঠার পুরো কৃতীত্ব স্বাভাবিকভাবেই সমাজসেবক হাজি মুরাদের প্রাপ্য।
৩.
জাফর সওদাগরের উত্তরসূরী হাজি মুরাদ রিকশা ব্যবসা দিয়ে ভালোই সম্পদ করেছে, সে এখন এলাকায় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য। বাড়িভাড়াসহ অসংখ্য ব্যবসার সাথে যুক্ত। তবুও রিকশা ব্যবসা ছাড়েনি। এখনও তার একটা গ্যারেজ আর ৩২টা রিকশা আছে। সেসব রিকশার একটার চালক এবাদ্যা চোরা। তাও আবার আধাবেলার ডিউটি, তাতেই এবাদ্যার বেশ চলে যায়। খরচ বলতে বস্তির একটা ঘর মাসে ছয়শ’ টাকা ভাড়া, আর মেসে তিনবেলা খাবার মাস শেষে হাজার দুয়েক টাকা, এর বাইরে দৈনিক এক প্যাকেট বিড়ি। যদিও জেলে যাবার আগে এবাদ্যা চোরার গাঁজা সেবনের বাতিক ছিল—সেটা হাজি মুরাদের কাছে শপথ করেই ছেড়ে দিয়েছে। এতকিছুর পর এলাকার কোনও প্রকার চুরির জন্যই এবাদের ওপর ন্যূনতম সন্দেহ করার কোনও অবকাশ থাকে না, তা ছাড়া তার মাথার ওপর যে হাজি মুরাদের ছায়া। তাই এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হওয়া সাম্প্রতিক রিকশা চুরির ঘটনা নিয়ে এবাদের নামটা কেউ সন্দেহের তালিকায় রাখেনি। তবে এই চুরির হিসাবও মিলাতে পারছে না মানুষজন।
ঘটনার সূত্রপাত এইরকম, বশিরের বাপ রোজকার মত রিকশাটা মাফুজের দোকানের সামনে রেখে ভাত খেতে ঢুকেছে, খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে এসে দেখে রিকশা নেই! ঘটনা বাইরে ঘটলে একটা ব্যাপার ছিল, কিন্তু এই পাড়াতে হাজি মুরাদের রিকশাতে হাত দেওয়ার মত এত বড় দুঃসাহস কার? নাছোড়বান্দা হাজি মুরাদ, রিকশার ক্ষতিপূরণ বশিরের বাপকে দিতেই হলো কড়ায় গণ্ডায়। এই ঘটনার ঘোর কাটার আগেই মাত্র দুই দিনের মাথায় ঘটল আরেক ঘটনা। হাজি মুরাদের গ্যারেজের তালা ভেঙে এক রাতেই চুরি গেল বিশটা রিকশা। দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত গ্যারেজের দারোয়ান আইয়ুব ঘুণাক্ষরেও টেরও পেল না। অথচ পাড়ার ছেলে আইয়ুব সম্পর্কে কম বেশি সকলেই জানে তার ঘুম ঠিক ঘুম নয়, ঘুমের মত পড়ে থাকা মাত্র! একটা পাতা নড়ার শব্দেও সে জেগে ওঠে। সেই দিন এমন কী হয়েছিল যে এতগুলো রিকশা চুরি হবার পরও আইয়ুব একটু টেরও পেল না? এই মরার ঘুম তার এলো কোথা থেকে! শেষ পর্যন্ত আইয়ুবের চাকরি তো গেলই উপরন্তু বিশটা রিকশার ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে তাকে বিক্রি করতে হলো পৈতৃক ভিটার আধা কাটা জায়গা। এভাবেই একের পর এক রিকশা চুরি হতে হতে হাজি মুরাদের রিকশার সংখ্যা নেমে এলো বত্রিশ থেকে আটে। দু’একজন চালকের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আগেই পালিয়ে যাওয়াটা বাদ দিলে এসব চুরিতে হাজি মুরাদের লোকসান তো নয়, বরং লাভই হয়েছে। কারণ রিকশা খোয়ানোর পর চালকদের কাছে থেকে হাজি মুরাদ যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ আদায় করেছে রিকশাগুলো বাজারে বিক্রি করতে গেলেও এত দাম পাওয়া যেত না।
তবুও এটা তেমন আলোচিত বিষয় নয়, বরং সর্বত্র আলোচনার বিষয় হচ্ছে, কে এই চোর, হাজি মুরাদের রিকশার ওপর যার কুনজর পড়েছে! একের পর এক কাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে, অথচ ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এসব ভাবনায় পাড়ার ছেলে-বুড়ারা যখন ব্যস্ত, তখন স্বল্পভাষী, বুদ্ধিমান ও পৈতৃক ভিটে-হারানো আইয়ুব ভাবে—সেদিন তার এমন মরার ঘুমে পাওয়ার কারণ কী?
৪.
অবশিষ্ট আটটা রিকশার একটার চালক এবাদ্যা চোরাকে বাদ দিয়ে বাকি সাতটা চালানোর মত কোনও চালক পাওয়া যাচ্ছে না। কেনই বা পাওয়া যাবে, যখন সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে হাজি মুরাদের রিকশার ওপর অজ্ঞাত চোরের কু’নজরের কথা! কিন্তু পাড়ার সবাইকে বিস্মিত করে আইয়ুব একটা রিকশা নিল চালাবে বলে। আইয়ুবের এমন সিদ্ধান্ত পাড়ার সকলকেই একপ্রকার হতবাক করে। কিন্তু আইয়ুবের কিছু আসে যায় না, সে চালিয়ে যাচ্ছে তার রিকশা, আপন মনে। গ্যারেজে রিকশা রাখাই যেখানে দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে সারাদিন রিকশা চালিয়ে আইয়ুব তার রিকশা রাখে ঘরের সামনে, খোলা মাঠে। আইয়ুবের এমন উদ্ভট কাণ্ডে মহল্লাবাসি এখন আর তেমন বিস্মিত নয়। সবাই ভাবে, জমি হারানোর শোকে আইয়ুবের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু না, এলাকাবাসি আইয়ুবের মনোভাব ঠিক বুঝতে পারেনি, বুঝল সেইদিন যেদিন মধ্যরাতে আইয়ুবের চিৎকারে এলাকাবাসির ঘুম ভাঙল।
ঘটনাটা এই রকম, আইয়ুব সারাদিন চালিয়ে রাতে ঘরের সামনে রিকশাটা রাখত, আসলে এটা ছিল একটা কৌশল। চোরের জন্য টোপ ফেলা। ঘরে ঢুকে সামনের দরজা সে বন্ধ করে ঠিকই, কিন্তু পিছনের দরজা দিয়ে আইয়ুব ঘর থেকে চুপিসারে বেরিয়ে আড়াল থেকে রিকশা পাহারা দিত। এভাবেই কেটেছে প্রায় তিন মাস, অবশেষে মধ্যরাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে আইয়ুব একটা ছায়ার দেখা পেল। ছায়াটা ক্রমশ কায় হয়ে রিকশার কাছেও আসল, তারপর রিকশা ধরে টান দিতেই আইয়ুব ঝাঁপিয়ে পড়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জাপটে ধরল। তারপর উচ্চস্বরে চিৎকার। আইয়ুবের চিৎকার শুনে ছুটে এলো মানুষ, মুহূর্তের মধ্যে শত শত মানুষ হয়ে গেল তার ঘরের সামনে। আর ততক্ষণেই শুরু হয়ে গেছে গণপিটুনি। গণপিটুনির মধ্যেই কেউ একজন চিৎকার করে বলল, তোমরা পিটুনি বন্ধ কর, চোরের চেহারাটা একবার দেখি। আর সাথে সাথেই কয়েক ডজন টচ লাইটের আলো গিয়ে পড়ল চোরের মুখের ওপর। মুখ দেখে সবাই যেন চমকে উঠল, এত এই পাড়ারই ছেলে এবাদ, প্রকাশ এবাদ্যা চোরা! এবাদ্যা চোরাকে দেখে উপস্থিত মুরব্বি গোছের একজন চিৎকার করে বলে উঠলেন, এই তোরা এখন পিটুনি থামা। মারা গেলে কিন্তু হাজি মুরাদ সবাইরে কেসে ফাঁসিয়ে দেবে। এতক্ষণ গণপিটুনিতে উৎসাহী মানুষজন মুরুব্বির কথা শুনে হঠাৎ করেই যেন একটু আলগা হয়ে গেল। ততক্ষণে অবশ্যই এবাদ্যা চোরা আধমরা হয়ে গেছে। এবার সবাই মিলে স্লোগান দিতে দিতে এবাদ্যা চোরাকে নিয়ে এলো ছাগল চোরার টেক প্রকাশ মোল্লাপাড়া চৌরাস্তার মোড়ে। মোড়েই ডেকে আনা হলো হাজি মুরাদকে।
হাজি মুরাদের কথা কানে যেতেই আধমরা এবাদ্যা চোরা যেন একটু শক্তি ফিরে পেল, শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে বলে উঠল: ‘হাজি সাব আপনার কথায় চুরি করছি, অহন আপনে আমারে বাঁচান। ’ কিন্তু এবাদ্যা চোরার কথাটা হট্টগোলের ভিতরেই বিলীন হয়ে গেল। হাজি মুরাদ এবার মোড়ের উঁচু পোলের ওপর দাঁড়িয়ে উপস্থিত মানুষের সামনে বক্তব্য দেওয়া শুরু করল, ‘ভাইসব একটা চোররে ভালো করতে চাইছিলাম, কিন্তু আজ বুঝলাম কুত্তার লেজ সবসময় বাঁকাই থাকে, আপনারা জনগণেই সিদ্ধান্ত নেন এই চোররে কী করবেন। আমি আপনাদের সাথে আছি। ’ উপস্থিত জনতার করতালির শব্দে বাতাস ভারী হয়ে উঠল, এই করতালির শব্দের ভিতর এবাদ্যা চোরা তার শরীরের সমস্ত জোর দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠল: ‘ভাই রিকশা পিছু আমারে দিছেন পাঁচশত টাকা, বাকি টাকা তো সব আপনেই নিছেন। অহন আমারে বাঁচান!’ কিন্তু এবাদ্যা চোরার এত কষ্টে বলা কথাগুলো নিমিষেই বিলীন হয়ে গেল হাজারও মানুষের করতালির শব্দে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৫