ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ঔপনিবেশিক ভারতের বিলাতি নারীরা | আদনান সৈয়দ (পর্ব ১)

ধারাবাহিক রচনা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৫
ঔপনিবেশিক ভারতের বিলাতি নারীরা | আদনান সৈয়দ (পর্ব ১)

স্বপ্নের ভারতযাত্রা |
“ভারত পৌঁছতে হাতে এখনও অনেক সময় বাকি। এদিকে ক্যাপটেন মশাই জানিয়ে দিলেন আর কয়েক ঘণ্টা পরই আমাদের জাহাজটি দক্ষিণ আটলান্টিকের সেন্ট হেলেনায় পৌঁছে যাবে।

সেখান থেকে খাবার পানি আর কিছু শুষ্ক খাবার-দাবার বোঝাই করে আমাদের জাহাজ আবার সমুদ্রে ভাসবে ভারতের ঠিকানায়। আহা কী আনন্দ! বন্দরের দেখা মিলবে অবশেষে! ভারত! নামটা উচ্চারণ করলেই গায়ে শিহরণ জাগে! কেমন জানি দেশটা। কিন্তু এখন কী করি? হাতে তো সময় অনেক! জাহাজের ডেকে উঠলে কেমন হয়? আকাশের গায়ে তারাগুলো যেন ফুলের মতো ফুটে আছে আর যেন আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আহা! প্রকৃতি কতই না সুন্দর। খুব ইচ্ছে করছে এই জাহাজের ডেকে খোলা আকাশের নিচে একটু নাচতে। কিন্তু কে নাচবে আমার সাথে? কেউ কি আছে?”—কথাগুলো বলছিলেন অ্যানি উইলসন নামের এক বিলাতি নারী যিনি ১৮৯০ সালে লন্ডন থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে জাহাজে চড়েছিলেন তার স্বামীর সাথে দেখা করতে।

ভারত ততদিনে ইউরোপের কাছে বেশ জনপ্রিয় আর লোভনীয় একটি নাম। বিশেষ করে ১৫৯৯ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গোড়াপত্তনের পর থেকেই ভারত থেকে জাহাজবোঝাই পণ্য সামগ্রী নিয়ে ইউরোপের বাজারে চড়া দামে বিক্রি করা ছিল রীতিমতো লোভনীয় একটি বিষয়। শুধু ব্যবসায়িক লগ্নি নয় সেই সাথে রয়েছে ভারতের সম্পদের প্রতি ইউরোপিয়ান বণিকদের লোভাতুর চোখ। যে কোনোভাবে ভারত দখল করা চাই। এ কথা ঠিক যে ভারত সে সময়ে তার সমসাময়িক দেশগুলোর তুলনায় বেশ বড় একটি রাজ্য। কিন্তু বড় রাজ্য হলেও ভারতের মোগল শাসন ছিল তুলনামূলক দুর্বল।



ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যাত্রা থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে ঔপনিবেশিক ভারতে স্থায়ীভাবে জীবনযাপন করতে বিলেতিরা তাদের স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেন। শুধু বিলেতি পুরুষ নন, সেই স্বপ্নের মোহে প্রতিনিয়ত আচ্ছন্ন ছিলেন বিলেতি নারীরাও। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে বিলেত থেকে ভারতে আসতে শুরু করলেন। তাদের কেউ ভারতে এলেন সেখানে তাদের কর্মরত স্বামীর সাথে স্থায়ীভাবে সংসার যাপন করতে, কেউ ভারতে এলেন কোনো ধনবান পয়সাওয়ালা স্বামীর খোঁজ পেতে, আবার কেউ মিশনারির কাজের উদ্দেশ্যে জাহাজে চড়ে বসলেন, কেউ হাসপাতালের নার্স হয়ে, কেউ ভালো একটি চাকরির সন্ধানে আবার কেউ কেউ ভালোরকম ব্যবসাপাতির খোঁজে নিজ দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমালেন।



“প্রথমেই বুঝতে হবে যে মোগল সাম্রাজ্য কোনো শৃঙ্খলাবদ্ধ শাসন ছিল না। তারা এমনকি তাদের সমসাময়িক শাসক অটোমান এবং পারস্য শাসকদের মতোও সংঘবদ্ধ ছিল না। রোমান শাসকদের কথা বাদই দিলাম। ” (ক্লাইভ অব ইন্ডিয়া: এ পলিটিক্যাল অ্যান্ড সাইকোলজিক্যাল এসে, নীরদ চন্দ্র চৌধুরী, বেরি অ্যান্ড জেনকিনস লিমিটেড, ১৯৭৫)

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সে খবরটি জানত এবং এর পূর্ণ সুযোগের অপেক্ষায় ছিল মাত্র। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কুইন এলিজাবেথ ওয়ান জাহাজটির একচেটিয়া ব্যবসা ছিল রীতিমতো চোখে পড়ার মতো। এ ব্যবসার বিস্তৃতি ছিল ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে পূর্ব কেপ অব গুড হোপ পর্যন্ত। অন্যদিকে ইউরোপীয় বাজারে ডাচ বণিকদের উপস্থিতি ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি মজবুত এবং নিয়ন্ত্রিত। সেক্ষেত্রে বিলেতের পক্ষে ডাচ বণিকদের সাথে টেক্কা দিয়ে খুব সহজে ব্যবসাপাতি করা সহজ কোনো ঘটনা ছিল না। সে কারণেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে অনেক কূটচাল এবং সেই সাথে মোগলদের অনুকম্পা পেতে বেগ পেতে হয়েছিল বৈকি! বিভিন্ন রকম কূটকৌশল এবং যুদ্ধ বিগ্রহের পর শেষপর্যন্ত ভারতের বিশাল বাজার চলে আসে বিলেতিদের করতলে। সেই থেকেই শুরু। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যাত্রা থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে ঔপনিবেশিক ভারতে স্থায়ীভাবে জীবনযাপন করতে বিলেতিরা তাদের স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেন। শুধু বিলেতি পুরুষ নন, সেই স্বপ্নের মোহে প্রতিনিয়ত আচ্ছন্ন ছিলেন বিলেতি নারীরাও। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে বিলেত থেকে ভারতে আসতে শুরু করলেন। তাদের কেউ ভারতে এলেন সেখানে তাদের কর্মরত স্বামীর সাথে স্থায়ীভাবে সংসার যাপন করতে, কেউ ভারতে এলেন কোনো ধনবান পয়সাওয়ালা স্বামীর খোঁজ পেতে, আবার কেউ মিশনারির কাজের উদ্দেশ্যে জাহাজে চড়ে বসলেন, কেউ হাসপাতালের নার্স হয়ে, কেউ ভালো একটি চাকরির সন্ধানে আবার কেউ কেউ ভালোরকম ব্যবসাপাতির খোঁজে নিজ দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমালেন। দেখা যায় ঔপনিবেশিক ভারতে বিলেতি নারিদের জীবনযাপন পরবর্তী সময়ে ভারতের সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম এবং প্রধান একটি অংশ হয়ে পড়ে।

উনিশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত আইরিশ, ইংলিশ, স্কটিশ নারীদের ভারতভ্রমণ অব্যাহত ছিল। “নথিপত্র অনুযায়ী ১৬১৭ সালে মিসেস হাডসন এবং তার কাজের মেয়ে ফ্রান্সিস ওয়েব প্রথম ভারত আসা দুই বিলেতি নারী। ” (ওমেন অব দি রাজ: দি মাদারস, ডটারস, ওয়াইভস অ্যান্ড ডটারস অব দ্য বৃটিশ এমপায়ার ইন ইন্ডিয়া। লেখক মারগারেট মেকমিলান, রেনডম হাউস ট্রেড, ২০০৭, পৃষ্ঠা ১)



পরিসংখ্যান করলে দেখা যায় যে বেশিরভাগ বিলেতি নারী ভারতে এসেছিলেন তাদের ভারতে চাকুরিরত স্বামীদের সাথে বসবাস করতে। তবে একটা বিষয় বিবেচ্য যে, উন্নত জীবনের আশায় যেসব ইউরোপিয়ান বণিক ভারতের বন্দরে তাদের ভাগ্যকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন তারা অনেকেই স্থানীয় ভারতীয় রমণীদের বিয়ে করে সংসার পাততে শুরু করেছিলেন। অনেকেই ভারতীয় রমণীদের বিয়ে করে তাদেরকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিতও করেছিলেন।



তারা দুজনেই একজন ভারতে জন্মগ্রহণকারী আর্মেনিয়ান মহিলার সাথে ভারতে আসার পরিকল্পনা আঁটেন। মজার কথা হলো কাজের মেয়ে ফ্রান্সে ওয়েব ভারত আসার পথেই জাহাজের এক নাবিকের সাথে প্রেমে সিক্ত হন। সে নিয়ে সেই সময় বেশ মজার মুখরোচক খবর বাতাসে বেড়াতে শুরু করে। তবে পরিসংখ্যান করলে দেখা যায় যে বেশিরভাগ বিলেতি নারী ভারতে এসেছিলেন তাদের ভারতে চাকুরিরত স্বামীদের সাথে বসবাস করতে। তবে একটা বিষয় বিবেচ্য যে, উন্নত জীবনের আশায় যেসব ইউরোপিয়ান বণিক ভারতের বন্দরে তাদের ভাগ্যকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন তারা অনেকেই স্থানীয় ভারতীয় রমণীদের বিয়ে করে সংসার পাততে শুরু করেছিলেন। অনেকেই ভারতীয় রমণীদের বিয়ে করে তাদেরকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিতও করেছিলেন। বলা প্রয়োজন যে, বিলেতের নারীদের কাছে তথ্যটি অজানা ছিল না। তাদের অনেকেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজে চড়ে, কখনো মাছ ধরার জাহাজে চড়ে অথবা বিভিন্ন উপায়ে ভারতে আসতে শুরু করলেন। অনেক বিলাতি নারী ভারতে এসে বিভিন্ন রকম অনৈতিক কাজেও জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১৬৭৫ সালে  লন্ডন থেকে বোম্বের ডিপুটি গভর্নরকে লেখা এক চিঠিতে তারই আভাস পাওয়া যায়। “ভারতে আসা আমাদের কিছু বিলাতি নারীরা বিভিন্ন রকম সামাজিক স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়েছে এবং তা আমাদের জাতির জন্য কলঙ্ক বয়ে এনেছে। আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি তাদেরকে যথাযথভাবে সতর্ক করে দিন এবং সভ্যভব্য হয়ে ভদ্র খ্রিস্টানের মতো চলতে তাদের বলুন। ”


ভারতের পুনেতে একটি ব্রিটিশ বিবাহ অনুষ্ঠান। ছবি: সাইমন ডার্নফোর্ড

কথা হলো সেই সময়ে ঔপনিবেশিক ভারতে বিলাতি নারীদের কদর কেমন ছিল? ১৯৯৫ সালে মারাঠি ভাষার লেখক এবং সাহিত্যিক কিরণ নাগরকার-এর একটি উপন্যাস ‘রাবন অ্যান্ড এডি’-তে ঔপনিবেশিক  ভারতের বিলেতি নারীদের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। তিনি উপন্যাসে চরিত্রের প্রয়োজনে উল্লেখ করেছেন, “পৃথিবীতে দুরকম জাতির মানুষ রয়েছে। প্রথমটি হলো যারা ইংরেজি ভাষা জানেন আর দ্বিতীয়টি হলো যারা জানেন না। ইংরেজি একটি মন্ত্র, মহামন্ত্র। এটি একটি উন্মক্ত সাগর। এটা শুধু নতুন দরজা উন্মুক্ত করে না বরং নতুন বিশ্বকে উন্মুক্ত করে যেখানে আপনি একটি বিশ্ব থেকে আরেকটি বিশ্ব অতিক্রম করতে পারবেন। যদি ইংরেজি জানা থাকে আপনি কোনো বিলাতি মেয়েকে নাচের জন্যে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। ইংরেজি জানা থাকলে কোনো ইংলিশ রমণীকে ঠোঁটে চুমু খেতে পারবেন। ”



বিলেত থেকে ভারতে যাত্রাপথ ন্যূনতম সময়সীমা ছিল দু’মাস। তবে প্রতিকূল আবহাওয়া এবং জাহাজ বিকল হয়ে পড়লে সেই সময়সীমা ছয় মাসও হয়ে যেত। কখনো হাওয়া জাহাজের বিপক্ষে কাজ করলে বিশেষ করে আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল এলাকায় জাহাজকে ব্রাজিল পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে ঘুরে কেপ অব গুড হোপে আসতে হতো। সবকিছুকেই নির্ভর করতে হতো হাওয়ার জোরের ওপর। বাতাস জাহাজের প্রতিকূলে থাকলে এতসব চিন্তা করতে হতো না। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এই জাহাজগুলো ছিল খুব নোংরা এবং বসবাসের অযোগ্য। যারা জাহাজে কেবিন পেত তাদের কথা আলাদা। তবে সেই ভাগ্যবানরা ছিল সমাজের উপরতলার মানুষ। সাধারণ চাকুরে বা সৈনিকদের জায়গা হতো জাহাজের ডেকের ওপর।



বিলাতি নারীদের সামাজিক মর্যাদা ভারতের মাটিতে যে অনেক বেশি ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বিলেত থেকে জাহাজে চড়ে সোজা ভারতে চলে আসা এত সহজ ঘটনাও না। প্রথম কথা হলো সেকালের জাহাজগুলো ছিল কাঠের তৈরি। সে সময়ে সমুদ্রের ঝড়ের কবলে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটা ছিল খুব সাধারণ একটি বিষয়। পাশাপাশি দক্ষিণ আটলান্টিক এবং ভারত মহাসাগর ঝড়ের জন্যে সেই সময় থেকেই বিখ্যাত ছিল। একবার ঝড়ের কবলে পড়লে আর রক্ষা নেই। ১৮৩০ সালে ‘দি রেভারেন্ড হবার্ট’ জাহাজের রেকর্ডে টুকে রাখা তথ্য থেকে সে খবরটা জানা যায়। “আমাদের মাঝে তিনি ছিলেন একমাত্র  বিলাতি নারী যিনি প্রতি মুহূর্তেই থেকে থেকে ভয় পাচ্ছিলেন। যখনই আমাদের জাহাজ প্রচণ্ড ঝড়ে দুলে উঠছিল তখনই তিনি ভয়ে চিৎকার করছিলেন। সে ঝড়ে জাহাজের যাবতীয় আসবাবপত্র ওলট-পালট হয়ে যায়। জাহাজে রক্ষিত কামানগুলো ভিজে নষ্ট হয়ে পড়ে। ” ইভেন কাউন্টার নামের একজন নারী পর্যটক অনেকটা একই রকম অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা দেন। তার ভাষায়, “অতিরিক্ত পরিমাণে ভয়াবহ!” এদিকে রাত নামে। ঝড়ের বেগ বাড়তে থাকে। ইভান কাউন্টারের কক্ষটি ছিল জাহাজের ক্যাপটেনের কক্ষের ঠিক পাশেই। হঠাৎ করেই ঝড়ের তাণ্ডবে কাউন্টার মেঝেতে পড়ে যান। জাহাজের পাটাতন তখন পানির নিচে। ঝড়ের ঝাপটায় তিনি মেঝেতে পানিতে সাঁতার কাটতে থাকেন এবং মূর্ছা যান। পরে জাহাজের ক্যাপটেন এসে তাকে উদ্ধার করেন। (ওমেন অব দি রাজ: দি মাদারস, ডটারস, ওয়াইভস অ্যান্ড ডটারস অব দ্য বৃটিশ এমপায়ার ইন ইন্ডিয়া। লেখক মার্গারেট ম্যাকমিলান, রেনডম হাউস ট্রেড, ২০০৭, পৃষ্ঠা ১৬)

বিলেত থেকে ভারতে যাত্রাপথ ন্যূনতম সময়সীমা ছিল দু’মাস। তবে প্রতিকূল আবহাওয়া এবং জাহাজ বিকল হয়ে পড়লে সেই সময়সীমা ছয় মাসও হয়ে যেত। কখনো হাওয়া জাহাজের বিপক্ষে কাজ করলে বিশেষ করে আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল এলাকায় জাহাজকে ব্রাজিল পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে ঘুরে কেপ অব গুড হোপে আসতে হতো। সবকিছুকেই নির্ভর করতে হতো হাওয়ার জোরের ওপর। বাতাস জাহাজের প্রতিকূলে থাকলে এতসব চিন্তা করতে হতো না। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এই জাহাজগুলো ছিল খুব নোংরা এবং বসবাসের অযোগ্য। যারা জাহাজে কেবিন পেত তাদের কথা আলাদা। তবে সেই ভাগ্যবানরা ছিল সমাজের উপরতলার মানুষ। সাধারণ চাকুরে বা সৈনিকদের জায়গা হতো জাহাজের ডেকের ওপর।   তাদেরকে হিসেব করে দুই মগ নোনা পানি দেওয়া হতো। এক মগ পানি তারা টয়লেটের জন্যে ব্যবহার করত আর আরেক মগ পানি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্যে। মিসেস শেরউড উনিশ শতকের প্রথম দিকে তার সেনাকর্মকর্তা স্বামীর সাথে ভারত ভ্রমণের একটি বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন জাহাজের ডেক ঝড়ের পানিতে এতই নোংরা ছিল যে তাকে শেষপর্যন্ত কামানের ওপর পেতে দেওয়া কোনো রকম একটি শক্ত বিছানায় রাত কাটাতে হয়েছিল। বিলেত থেকে ভারতে যাওয়ার এত প্রতিকূলতার কথা জানা থাকলেও বিলেতের নারীরা ভয়ে কখনো ভারতভ্রমণের চিন্তা থেকে পিছিয়ে থাকেন নি। কারণ ভারত যে তাদের হাতছানি দিয়ে ডাকত!

পর্ব ২ পড়তে ক্লিক করুন



বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।