ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ৬) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ৬) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

তৃতীয় খণ্ডের ৫র্থ কিস্তি
___________________________________


কণ্ঠ নামিয়ে আনল এবার, কেউ যখন স্রেফ চিকিৎসার কারণে কিছু অশ্লীল উচ্চারণে বাধ্য হয় ঠিক তেমনই তার অভিব্যক্তি।

‘বিগ ব্রাদার নিপাত যাক!”—হ্যাঁ, ঠিক সে কথাটাই বলেছি আমি। একবার না, বারবার বলেছি। দ্যাখো বিষয়টা স্রেফ তোমার আর আমার মাঝে, বুড়ো ভাম, আরো বাড়াবাড়ি কিছু করে ফেলার আগেই ওরা আমাকে ধরে ফেলেছে, এতেই আমি খুশি। তুমি কি জানো ওরা আমাকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর আগেই আমি কী বলতে যাচ্ছি? “তোমাদের ধন্যবাদ”—ঠিক এই কথাটিই আমি ওদের বলব, বলব “খুব দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই তোমরা আমাকে রক্ষা করেছো এই জন্য ধন্যবাদ”। ’
‘কে ধরিয়ে দিল তোমাকে?’—প্রশ্ন উইনস্টনের।
‘আমার ছোট মেয়ে’—বলল পারসন্স। দুঃখভরা গর্বের উচ্চারণ তার। ‘চাবিপথে আড়ি পেতে ও শুনে ফেলেছে। ও শুনতে পেয়েছে আমি কথাগুলো বলেছি, আর পরের দিনই তা টহলদারদের কাছে বলে দিয়েছে। সাত বছরের এই দুধের বাচ্চার জন্য এ এক দারুণ কাজ, কী বলো? এ জন্য ওর প্রতি আমার এতটুকু অভিযোগ নেই। আসলে ওর জন্য আমি গর্বিতই বোধ করছি। এতে বোঝা গেল, আমি ওকে সঠিকভাবেই বড় করে তুলতে পেরেছি। ’

আবারও উপর-নিচে ঝাঁকি দিতে দিতে কয়েক পা হাঁটল সে, পায়খানার প্যানটির ওপর দৃষ্টি ফেলে রেখে কয়েকবার হাঁটাহাঁটি করল। এরপর হুট করেই শর্টসের ফিতা খুলে নামিয়ে দিল।
‘ক্ষমা করো, বুড়ো ভাম’—বলল সে। ‘আর পারছি না ধরে রাখতে। ’
বৃহৎ পাছাখানি পায়খানার প্যানে ঝুলিয়ে দিল সে। আর উইনস্টন দুই হাতে মুখ ঢাকল।
‘স্মিথ!’—চিৎকার দিয়ে উঠল টেলিস্ক্রিন। ‘৬০৭৯ স্মিথ ডব্লিউ! মুখ খোলো। কারাকক্ষে মুখ ঢাকা চলবে না। ’



‘কে ধরিয়ে দিল তোমাকে?’—প্রশ্ন উইনস্টনের।
‘আমার ছোট মেয়ে’—বলল পারসন্স। দুঃখভরা গর্বের উচ্চারণ তার। ‘চাবিপথে আড়ি পেতে ও শুনে ফেলেছে। ও শুনতে পেয়েছে আমি কথাগুলো বলেছি, আর পরের দিনই তা টহলদারদের কাছে বলে দিয়েছে। সাত বছরের এই দুধের বাচ্চার জন্য এ এক দারুণ কাজ, কী বলো? এ জন্য ওর প্রতি আমার এতটুকু অভিযোগ নেই। আসলে ওর জন্য আমি গর্বিতই বোধ করছি। এতে বোঝা গেল, আমি ওকে সঠিকভাবেই বড় করে তুলতে পেরেছি। ’



মুখ থেকে হাত সরাল উইনস্টন। পারসন্স পায়খানা সারছে অঢেল আর সশব্দে। অতঃপর দেখা গেল ফ্ল্যাশ কাজ করছে না, ফলে পরের কয়েক ঘণ্টা হাগার ভয়াবহ গন্ধে ডুবে থাকল পুরো কারাকক্ষ।

পারসন্সকেও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রহস্যজনকভাবে এমন আরো বন্দি এলো আর গেল। এক নারী বন্দিকেও আনা হয়েছিল। তাকে যখন বলা হলো ‘রুম ১০১’—উইনস্টন লক্ষ্য করল, শব্দ দুটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে তার মুষড়ে যাওয়া শরীর আর রঙ পাল্টে যাওয়া চেহারার অভিব্যক্তি। একটা সময় এলো, তাকে যদি এখানে সকালে আনা হয় তাহলে তখন বিকেল, আর যদি বিকেলে আনা হয়, তাহলে তখন মধ্যরাত। তখন নারী পুরুষ মিলিয়ে প্রকোষ্ঠে ছয় কয়েদী। সবাই স্থির বসে আছে। উইনস্টনের উল্টোদিকে বসে এক ব্যক্তি, চোয়ালবিহীন দাঁতাল চেহারা, যেন কাঠবিড়ালির বড় অহিংস্র রূপ। তার থলথলে, ঝুলে থাকা গালদুটো নিচের দিকে এতটাই ভারী যে ওখানে কিছু খাবার জমিয়ে রাখা হয়েছে সে কথা মনে না করাটাই কঠিন। ফ্যাকাশে ধূসর চোখদুটো ভয়ার্ত চাহনিতে একের পর অন্যের মুখের ওপর কিছুটা লটকে রেখে অন্যপক্ষ টের পাওয়ার আগেই সরিয়ে নিচ্ছিলেন।

দরজা খুলে গেল, আরেকজন কয়েদীকে ঢোকানো হলো যাকে দেখে উইনস্টনের ভেতরে একটি হিম শীতল অনুভূতি বয়ে গেল। বৈশিষ্ট্যহীন, সাধারণ চেহারার লোকটি প্রকৌশলী বা কারিগর গোছের কিছু একটা হবেন। তবে তার চেহারায় ফুটে ওঠা দুর্বলতা ছিল চমকে দেওয়ার মতো। ওটা যেন স্রেফ একটা খুলি। মুখমণ্ডল এতটাই শুকনো যে চোয়াল আর চোখদুটো মনে হচ্ছিল অপেক্ষাকৃত বড়, আর সে চোখে মেখেছিল কারো কিংবা কোনো কিছুর প্রতি তীব্র ঘৃণা।

উইনস্টনের অদূরেই বেঞ্চির ওপর বসলেন তিনি। উইনস্টন তার দিকে দ্বিতীয়বার তাকাচ্ছিল না, কিন্তু খুলির মতো দেখতে মুখখানি তার মনের মধ্যে এমনভাবে গেঁথে থাকল যেন সেটি ঠিক তার মুখের সামনে। হঠাৎই তার মাথায় এলো ঘটনাটা আসলে কী। লোকটি মূলত ক্ষুধার কারণেই মরতে চলেছে। কারাকক্ষের বাকিদের মাঝেও যেন একই সময়ে সেই একই চিন্তা বয়ে গেল। কারণ বেঞ্চির চারিদিকে সকলের মুখেই তখন একই থমথমে ভাব। চোয়ালবিহীন লোকটিও চোখ দুটো খুলিমুখো মানুষটির ওপর কিছুক্ষণ স্থির করে রেখে অপরাধীর মতো আস্তে সরিয়ে নিলেন, এরপর এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণে আবার চোখ দুটো ঘুরিয়ে নিলেন তার দিকে। এসময় বসে বসে দুলছিলেন তিনি। অবশেষে তিনি সটান উঠে দাঁড়ালেন, অস্থিরভাবে প্রকোষ্ঠের ভেতর এদিক-ওদিক করলেন, আলখেল্লার পকেটে একবার হাত ঢুকিয়ে দিলেন, আর, অতি লজ্জিত মুখে হাতে তুলে আনা এক টুকরো কালচে রুটি খুলিমুখো লোকটির সামনে ধরলেন।

তৃতীয় খণ্ডের ৮ম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।