ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ইউরোপের প্রাচীনতম হ্রদে (পর্ব-৩)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৬
ইউরোপের প্রাচীনতম হ্রদে (পর্ব-৩)

[পূর্ব প্রকাশের পর]

বসন্তের শেষে ফুটে থাকা লোহিত বর্ণের টিউলিপের পাপড়ির মতোই যুবতীর গণ্ডদেশে অপরাহ্নের তেজ হারানো কিরণ ঠিকরে পড়ে সৃষ্টি করে লালচে আভার। সেই ভাজা মাছের দোকান থেকে বেরিয়ে এ পথ পেরিয়ে যাওয়ার সময়ে যুবতীর সেই তীব্র আকর্ষণী মুখখানা আবার দর্শিত হয়।

কিছু কেনার ইচ্ছে বা প্রয়োজন না থাকলেও আমি এক ফচকে চ্যাংড়ার ভঙ্গিতে সেই টং ঘরের দিকে আগাই, আর মনে মনে ভাবি, বাদাম-তেলেভাজা থেকে শুরু করে মণি-মাণিক্য যাই বেচা হোক না কেন পকেটের শেষ মুদ্রা দিয়েও আমি আজ তা কিনতে রাজি আছি। যদিও সেখানে গিয়ে জানতে পারি ঠিক তেমন কিছু যুবতীর ভাণ্ডারে নেই বেচার জন্যে, তবে চাইলে আমি দূরের এক দ্বীপে যাওয়ার জাহাজের টিকিট তার কাছ থেকে কিনতে পারি। চাইলে মানে, অবশ্যই চাই, একশ বার চাই। দাও এখনই টিকেট দাও।

ভুবনমোহিনী একখানা হাসি নিক্ষেপ করে যুবতী আমাকে জানায়, ঠিক এই মুহূর্তেই টিকিট না কিনলেও চলবে। তাদের জাহাজে কমসে কম চারজন যাত্রী না হলে তারা আগামীকাল সকালে পাল তুলবে না। আর তখনও বেচারা একটি টিকিটও বিক্রি করতে পারেনি। আমাকে তাই সে বলে, আমি আছি এখানে রাত নটা অব্দি, তুমি বরং রাতে দোকান গোটাবার আগে এসে খোঁজ নিয়ে যেও। যদি আরও তিনখানা টিকিট এর মধ্যে বিক্রি করতে পারি, তবেই নিশ্চিন্ত মনে তোমার কাছে চতুর্থ টিকিটখানা গছাবো।

আমার অবচেতন মন এই প্রস্তাবে কেন যেন আনন্দিত হয়ে ওঠে। কে জানে আমার চোখের ঝিলিক হয়তো মেয়েটির সংবেদনশীলতায় ধরা পড়ে। নিজ থেকেই তাই সে আমার কাছে জানতে চায় কোথা থেকে এসেছি আমি, কি আমার পরিচয়। এ অঞ্চল সম্পর্কে টুকটাক ধারণা থাকলেও আমি তার কাছে আরও গভীর ধারণা আর পথঘাটের হদিস জানার চেষ্টা করি।

আগ্রহী ছাত্রকে শিক্ষিকারা যেমন করে হাতে কলমে সবকিছু বুঝিয়ে দেন, মেয়েটিও আমাকে তার নিজের কাছে থাকা একটি ম্যাপে পেন্সিল দিয়ে একে বুঝিয়ে দেয় ঠিক কোন পথে হেঁটে শহরের কোন প্রান্তে পৌঁছুতে হবে, আর আসন্ন গোধূলির আগেই ঠিক কোথা থেকে অখ্রিদ শহরের কিছু সুন্দরতম দৃশ্যকে ফ্রেমবন্দি করা যায়। আমি আরও জেনে নেই সারাহ অর্থাৎ, এই কাঞ্চনাক্ষী মেয়েটির বাড়ি অখ্রিদ শহরের খুব কাছেই, যদিও ও এখন থাকে ওর দিদিমার সঙ্গে এই স্থানের খুব কাছেই এক বাড়িতে।

কলেজের পাট চুকিয়ে আর ক’দিন বাদেই সে যাবে রাজধানী স্কপিয়ের বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে, তাই মাঝের গ্রীষ্মের এ কটা দিনকে কাজে লাগিয়ে কিছু বাড়তি পয়সা রোজগার করে নিচ্ছে। অখ্রিদ শহরে পাকাপাকিভাবে থাকা বাসিন্দার চেয়ে সারাহর মতো মৌসুমি বাসিন্দার সংখ্যাই বেশি, যারা গ্রীষ্মের সময়টায় পর্যটনকে কেন্দ্র করে কিছু রুটি রুজির ব্যবস্থা করে নেয়, আর শীত পড়ে এলেই এ শহর থেকে পালিয়ে গিয়ে শহরটিকে পরিণত করে নিঝুম পুরীতে। অখ্রিদ সম্পর্কে এমন বেশ কিছু সমকালীন ধারণা পাওয়ার পর সারাহকে আমি সামাজিক করমর্দনের মাধ্যমে কিছু আবেগমন্থিত অণু-পরমাণু চালান করে দিয়ে ওর এঁকে দেওয়া মানচিত্রে আবারও চোখ বুলাই, তারপর সেটি সযত্নে ভাঁজ করে বুক-পকেটে পুরে সেই নির্দেশিত পথে পা বাড়াই।

আঁকা-বাঁকা গলি ঘুপচি পেরিয়ে আমি পৌঁছে যাই হ্রদের কিনারায়, বলা চলে এটিই আমার অখ্রিদ হ্রদকে প্রথমবারের মতো দর্শন।
চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।