সৃজনশীলতার ভুবনে এখনও জীবন্ত হুমায়ূন
এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান
জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক, কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ। বাংলা সাহিত্যের এ মহানায়ক অন্যভুবনের পথে পাড়ি জমিয়েছেন প্রায় চার বছর হলো।
আজ তার শূন্যতায় কাঁদে সবাই। হৃদয়ে হারানোর বেদনা জেগে ওঠে। তিনি ছিলেন সাহিত্যলোকের বাসিন্দা। ছিলেন রূপালি পর্দার সফল কারিগরও। জননন্দিত সব নাটকের সিক্যুয়েন্সে তিনি বলে যেতেন জীবনের চেনা-অচেনা গল্প।
প্রকৃতিকে ভালোবেসেছেন নিজের মতো করে। আজও তার মৃত্যু যেনো বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে শোক, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ফুল হয়ে রয়েছে।
পার্থিব ইতিহাসে শিল্পী-সাহিত্যিকরা বাঁচেন হাজার বছর ধরে। শুধু তারা নন, তাদের সৃষ্টিও বারবার ফিরে ফিরে আসে। হুমায়ূন আহমেদ যা সৃষ্টি করে গেছেন তা বহুদিন পর্যন্ত দেশের সমাজ-বাস্তবতাকে প্রতিনিধিত্ব করবে, এ কথা দায়িত্ব নিয়েই বলা যায়।
বাংলা ভাষার কিংবদন্তি এ কথাশিল্পীর আজ ৬৮তম জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর, নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের কুতুবপুরে জন্ম নেওয়া এ মানুষটিই বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। ফলে আজও বাংলা সাহিত্যে নিজেকে অনিবার্য করে রেখেছেন তিনি।
সাড়ে তিনশোর বেশি উপন্যাসের রচয়িতা হুমায়ূন আহমেদ মধ্যবিত্তের চাওয়া-পাওয়া, সুখ-দু:খ ও আনন্দ-বেদনাকে খুব কাছ থেকে চিনেছিলেন।
তার সাহিত্যে বাংলার জীবন ও সমাজের যে সহজ-সরল সত্য মূর্ত হয়েছে, তা বিশ্বসাহিত্যের বিচার-বিশ্লেষণে মৌলিক ও অভিনব।
হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের লেখক হলেও বাংলা ভাষাভাষী সব মানুষের কাছেই তিনি নতুন ধারার গদ্য সাহিত্যের এক অমর ও অবিস্মরণীয় রূপকার, বলেন ময়মনসিংহের প্রবীণ কবি ও সাহিত্যিক শামসুল ফয়েজ।
তিনি আরও বলেন, সাহিত্যের জনপ্রিয়তা নির্মাণে তিনি অবিস্মরণীয় কাজ করে গেছেন।
ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, গীতিকারসহ সব ক্ষেত্রেই সফলতার অধিকারী হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বড় গুণ ছিলো, সেন্স অব হিউমার।
সাহিত্যে তিনি অমর করে রেখে গেছেন পূর্ব ময়মনসিংহের মাটি ও মানুষের জীবনধারা।
হুমায়ূন আহমেদ শিখিয়েছিলেন জীবন উদযাপনের মন্ত্র। তার ‘অয়োময়’ নাটকে পাগলের একটি চরিত্র অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সেই নাটকের প্রমোশন চলাকালেই তিনি একবার এসেছিলেন ময়মনসিংহে।
সেইসময় ময়মনসিংহবাসী তাকে স্বাগত জানাতে মিছিল করেছিল। মিছিলের স্লোগান ছিলো, ‘হুমায়ূন পাগলার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’।
মূলত আবেগ-উদ্দীপ্ত ময়মনসিংহবাসী তাকে সম্মান জানাতেই এ স্লোগান ধরেছিল। হুমায়ূন আহমেদ নিজেও সেটা বেশ উপভোগ করেছিলেন, জানান স্মৃতিকাতরতায় আচ্ছন্ন কবি শামসুল ফয়েজ।
একজন সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে সৃষ্টিশীলতায় মগ্ন ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। উপন্যাসে হিমু, মিসির আলী, শুভ্র আর নাটকে বাকের ভাইয়ের মতো চরিত্রগুলো পাঠকের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছে।
তারুণ্যের কাছে হয়ে উঠেছেন ‘আইকন’। বিরল প্রতিভাবান এ কথাশিল্পী তরুণ প্রজন্মকে প্রবাহিত করেছিলেন তার সাহিত্যের বিচিত্রতা ও দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে।
মধ্যবিত্ত আর তারুণ্যের স্বভাব-বৈশিষ্ট্যকে গভীরভাবে অনুধাবন করেছেন হুমায়ূন। তাই নশ্বর এ পৃথিবীকে শারীরিকভাবে বিদায় জানালেও সৃজনশীলতার ভুবনে এখনও জীবন্ত পাঠকনন্দিত এ লেখক। মৃত্যুর পরেও তার জনপ্রিয়তার স্রোতে ভাটা পড়েনি এতোটুকু। আজও তিনি রয়েছেন পাঠকের ভালবাসায়। জয়তু হুমায়ূন আহমেদ। শুভ জন্মদিন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
এমএএএম/এসএনএস