ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ক্যাম্পাসের মায়াবী বাঁশিওয়ালা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
ক্যাম্পাসের মায়াবী বাঁশিওয়ালা শিল্পী বারী সিদ্দিকী। ছবি: সংগৃহীত

আশির দশক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজি মুহাম্মদ মহসিন হলের আবাসিক ছাত্র আমি, বললেন  ধানমণ্ডি আনাম-প্লাজার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন। তখন শিল্পী বারী সিদ্দিকীও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। থাকতেন স্যার এ. এফ. রহমান হলে। বারী ভাইয়ের মরমী বাঁশির সুরে আমাদের সেসব দিনগুলো রঙিন হয়ে উঠেছিল।

শাহ ইস্কান্দার আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমি ছিলাম মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র। সুযোগ পেলেই সহপাঠী বন্ধু টিটুর কাছে স্যার এ. এফ. রহমান হলে যেতাম।

টিটুর রুমমেট ছিলেন শিল্পী বারী ভাই।

তিনি বলেন,  সময় পেলেই অদ্ভূত নেশার টানে বারী সিদ্দিকী ভাইয়ের মোহনীয় বাঁশি শুনতে যেতাম। মুগ্ধ হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুনেছি বাঁশরীর করুণ সুর। বাঁশিতে মায়াময় যাদুকরী সুর তুলতেন তিনি, আবেগে আপ্লূত স্বপন বলেন।

বারী সিদ্দিকীর ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতিচারণে আপ্লূত শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন।  অবশ্য  রাতের গভীরতা ভেদ করে শীতের হাওয়ায় ভেসে এসে তাঁর বাঁশির করুণ সুর প্রায়শই মুহসীন হলে পৌঁছাতো শিউলি ঝরার সময় অবধি । আমরা ঠিকই বুঝতে পারতাম, বারী ভাই বাঁশির সুরে তন্ময় হয়ে আছেন। মুগ্ধ হয়ে শুনেছি। কিংবা একাকী বা দলবেঁধে চলে গেছি দরদী শিল্পী বারী ভাইয়ের কাছে। এমনই গভীর টান ছিল তাঁর বাঁশির সুরে।

শাহ ইস্কান্দার আলী বলেন, আমার বাড়ি কিশোরগঞ্জ আর বারী ভাইয়ের বাড়ি নেত্রকোনা, পাশাপাশি জেলা। আমরা খুবই নিবিড় সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ ছিলাম। সুর আর সঙ্গীত ছাড়া বারী ভাইয়ের জীবনে আর কিছুই ছিল না। তিনি সঙ্গীতময় একটি বর্ণিল জীবনই সব সময় যাপন করেছেন।

বাঁশির সাথে বারী সিদ্দিকীর সঙ্গীত জীবনই শুধু নয়, মিশে আছে ব্যক্তিগত অনেক আনন্দ ও আবেগ। শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন বলেন, ‘একদিন বিকেলে তাঁর রুমে ঢুকেই দেখি তিনি ছোট্ট একটা বাঁশি যত্ন করে ব্যাগে পুরছেন, আর ব্যস্ত হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন এই বলে যে, নেত্রকোনা থেকে খবর এসেছে  তাঁর ছেলে সন্তান জন্ম নিয়েছে। এই বাঁশিটি তিঁনি তাঁর নবজাতক সন্তানের জন্য উপহার হিসেবে নিচ্ছেন । ’

জর্ডানো বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ ইসকান্দার আলী স্বপনের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদরের অষ্টবর্গ গ্রাম, বারী সিদ্দিকীর বাড়ি নেত্রকোনা থেকে খুব দূরে নয়। তিনি বলেন, বারী ভাইয়ের বাঁশির বেশ বড় কালেকশন ছিলো। প্রায় বাঁশের মতো মোটা এবং বেশ লম্বা এসব বাঁশিতে  ফু দিয়ে তিঁনি যখন করুণ সব সুর তুলতেন, আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনতাম।

একজন বারী সিদ্দিকী শিল্পকে এভাবেই লালন করেছিলেন তাঁর সমগ্র  জীবনে । সুর ও সঙ্গীতকে জীবনের ধ্রুবতারা করেই তিনি অবগাহন করেছেন সুরের সাগরে। সুরের ইন্দ্রজাল ছড়িয়েই তিনি মিশে গেছেন মানুষের অমল স্মৃতিতে। রেখে গেছেন প্রিয় বাঁশি, প্রিয়তম সন্তান, লক্ষ শ্রোতা আর মায়াময় সুরের আবেশ।

অধরা জগতের দূর নীলিমায় ‘সুয়া চান পাখি’
আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকি?

 

বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
এমপি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।