ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

গুচ্ছ কবিতা | তন্ময় মণ্ডল

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৮
গুচ্ছ কবিতা | তন্ময় মণ্ডল গুচ্ছ কবিতা | তন্ময় মণ্ডল

বস্তু ও বাস্তব
চোখ বন্ধ করেও অনেক কিছু দেখা যায়।

ক্লান্ত শহরের শরীর থেকে
দু-চার ফোঁটা অন্ধকার তুলে নাও।
একটা টেস্টটিউবে রাখো।


এরপর বেখেয়ালে মিশিয়ে দাও স্মৃতির বুদবুদ

হলফ করে বলতে পারি
প্রিয়জন বলে যে অনাকাঙ্ক্ষিত গন্ডিকে চিনেছো এতকাল
দেখবে তার বেশিরভাগই ধূসর চরিত্র পোড়া ছাই।

তবু, মানুষকে যদি বস্তু ভাবো
তবে জীবন এক কাকতলীয় নীরবতা।

ছায়া
নদীর জলে ভেসে থাকে যে ছায়া,
আমি তাকে সমর্পিত আত্মা বলি।

কত জল
বয়ে যায়...
পাড় ভাঙে

              বাঁধ ভাঙে...

বেঁচে থাকে, থাকার চেষ্টা করে
কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ছায়া

কত জল শুষে নেয় কালের প্রলেপ।
রঙ লাগে, ফিকে হয়
নিয়তিই শেষ কথা বলে

সময় সবটা জানে। ভেসে থাকা ডুবে থাকা সবই

আগুনের গান আসে, ছায়া পোড়ে
পুড়ে যায় নদীটির দুপাশের তীর
তবুও ক্ষণিক সুখে
নদীকে জীবন ভেবে

              আগলে রাখে

                     কিছু ছায়ার শরীর...

অপ্রাপ্তি
কোলাপসেবল গেটের মতো আমার দ্বিখণ্ডিত মনকে
দু’দিক থেকে টানছে এক অদৃশ্য শক্তি

কষ্ট কীভাবে দুঃখ হয়ে ওঠে তা আমার জানা নেই...
তবে যখন মডার্ন বাসস্টপে কোনো ওড়না পরা যুবতীর মুখের আদল
বড্ড চেনা লাগে,
কেন যেন মনে হয়, 
হেরে যাওয়া আর হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে যেমন বিস্তর ফারাক, 
ঠিক তেমনি ছোঁয়া আর ছুঁয়ে থাকার মধ্যেও।

বছর দিয়ে আমি কখনও স্মৃতির বয়স মাপিনি অবন্তিকা,
যতবার স্মৃতিরা পলি হয়ে মিশে যেতে চায়
চোখের অতল গহ্বরে- মহানন্দায়; 
ততবার আমি
ছোঁয়াকে ছুঁয়ে থাকা ভাবি
আর আমার নির্বাসিত দৃষ্টি এক অমোঘ প্রাপ্তি নিয়ে চেয়ে থাকে
অপ্রাপ্তির দিকে...

দৃশ্যপট
একটা বিরাট স্থাপত্যের ভগ্নস্তূপে আমার বাস,
যেখানে ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ছে আমার অতীত।
প্রশ্বাস আর নিঃশ্বাসের ব্যাবধানে
যেখানে পরাগরেণুর মতো ভেসে বেড়াচ্ছে
অগনিত দৃশ্যপট...

আমি সেই বিরাট স্থাপত্যের বাসিন্দা
যার আকাশ-বাতাস
এমনকি চোখ ছুঁয়ে যাওয়া বৃষ্টিফোঁটাও
অবন্তিকাকে চেনে।

ঝরে ঝরে পড়া অতীত ক্রমশ স্তুপের আকার নিচ্ছে।
আর তার এককোণে শরীরহীন অবন্তিকার অবয়ব
আড়চোখে চেয়ে আছে আমার দিকে।

একটি শীতের কবিতা
প্রচণ্ড শীতের ভেতর থেকে যখন
উষ্ণতা উঠে আসে,
জেনে বুঝে ঘুম বালিশের চোখ ফাঁকি দিই।

আমার অন্ধকার অবচেতনে শিল্পীর নিপুণ তুলির টানে
ফুটে ওঠে তোমার সদ্য স্নান সেরে আসা খোলা চুলের অবয়ব।

বছর বারো আগে শেষ ঘণ্টা শুনেছি কলেজের,
সেই শব্দ যেন আরও কাছাকাছি চলে আসে

কলেজ ফেস্ট... প্রথমবার তোমার কণ্ঠে
‘আমারো পরানো যাহা চায়’...
মনে পড়ে।
ভেসে ওঠে বইয়ের ভাজে রঙ হারানো ঝাউপাতার মতো
স্মৃতির ক্যানভাস।
একটা চেনা সুর ভেসে যায়
নেপালের অচেনা খুপরি থেকে ক্যানিং পেরিয়ে সিলেট-চট্টগ্রাম... 

প্রচণ্ড শীতেও আঙুলের উষ্ণতা মাপি-

যখন শহর কলকাতা বলে ওঠে,
শীত বোধ হয় পাহাড় থেকে নেমে এলো এবার!
আমি মুচকি হেসে শীতের চোখে তাকাই...
তোমার আঙুল শুধু এ শরীর ছুঁয়েছিল
আঙুলেও এত উষ্ণতা থাকে,
যার কাছে হাঁটু গেড়ে বসে শীত!

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৮
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।