ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

যতো ভালোবাসা গম্ভীরায়

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮
যতো ভালোবাসা গম্ভীরায় চারুকলার বকুলতলায় গম্ভীরা সংগীত পরিবেশনা

ঢাকা: একটু আগেই শেষ হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৪তম দিনের আয়োজন। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে বেশ কিছু বই কিনে শাহবাগ হয়ে মিরপুর ফেরার কথা সরকারি চাকরীজীবী মঈন আহমেদের। কিন্তু চারুকলার পাশে এসেই কি এক সুরের মূর্ছনায় ঢুঁ দিলেন বকুলতলায়। এসেই আটকে গেলেন বাঙালি লোকসঙ্গীতের অন্যতম ধারা গম্ভীরার ছন্দে।

রাতের আঁধারে লাল-সবুজ আর নীল-হলুদ আলোর মঞ্চে তখন গান ধরেছেন সূর্য দিগন্ত গম্ভীরা দল। ঘুরে ঘুরে নেচে নেচে গাইছেন- হে নানা, সোনার বাংলা গড়তে...! আর মঞ্চের সামনে সে পরিবেশনা মগ্ন হয়ে উপভোগ করছেন শত শত লোকঐহিত্য প্রেমীরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে গম্ভীরার প্রচলন সবথেকে বেশি। দলবদ্ধভাবে গাওয়া গম্ভীরা বর্ণনামূলক গান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা অঞ্চলের গম্ভীরার মুখ্য চরিত্রে নানা-নাতি খুব জনপ্রিয়। ধারণা করা হয় যে, গম্ভীরা উৎসবের প্রচলন হয়েছে শিবপূজাকে কেন্দ্র করে। শিবের এক নাম ‘গম্ভীর’, তাই শিবের উৎসব গম্ভীরা উৎসব এবং শিবের বন্দনাগীতিই হলো গম্ভীরা গান।

সহমত পোষণ করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ডিন ও উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য অধ্যাপক নিসার আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের লোকসংস্কৃতির অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও আদি রূপের একটি হচ্ছে গম্ভীরা। মানুষ এটাকে ভীষণভাবে ভালোবাসে। মহাদেব শিবের আরেক নাম গম্ভীর। সেই গম্ভীর দেবের রুদ্র কঠিন চিত্তকে প্রশান্ত করতে যে সংগীত প্রাকৃতজনরা গেয়েছেন, তাই গম্ভীরা।

তার মতে, গম্ভীরা হাস্যরস ও ব্যঙ্গ পরিহাসের মধ্য দিয়ে নিপুণ কৌশলে আমাদের নাগরিক জীবনের নানাবিধ সমস্যা-সংঘাত ও সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করে থাকে। এর উপস্থাপন এতটাই মুগ্ধ হবার মতো যে, পুরো পরিবেশনা শ্রোতাদের অন্তরে গেঁথে যায়! দর্শক যতবার এর পরিবেশনা দেখে, ততবারই যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে অভিভূত হয়।

গম্ভীরা গানের মধ্য দিয়ে সমালোচনা করা যায়। সাধারণ মানুষের কথা বলা যায়। এ গানের সাহায্যে সমাজের বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের কাছে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন শিল্পীরা। এ সংগীতের রয়েছে বিধিবদ্ধ একটি সাংগীতিক রীতি। তবে রীতি ভেঙে নতুন পদ্ধতিতে বাংলাদেশের গম্ভীরা নতুন পথ রচনা করছে বলেও জানান অধ্যাপক নিসার আহমেদ।

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি নানা-নাতির হাস্য-রসাত্মক কথোপকথন আর সুক্ষ্ম সমালোচনার মধ্য দিয়ে এসব গম্ভীরায় বর্তমান সরকারের উন্নয়ন যাত্রা, সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের চাওয়া পাওয়া, সোনার বাংলাদেশ ও অমর একুশ কে তুলে ধরা হয়। এদিন থেকে ভোলাহাট গম্ভীরা দল, রসকস গম্ভীরা দল, সংগীতা সংগীত নিকেতন গম্ভীরা দল, সূর্য দিগন্ত গম্ভীরা দল ও প্রয়াস ফোক থিয়েটার ইনস্টিটিউট গম্ভীরা পরিবেশন করে।

আয়োজন সম্পর্কে আয়োজক সংগঠন ‘দিয়াড়’র সভাপতি মোখলেসুর রহমান মুকুল বলেন, গম্ভীরার ভিন্নতা হচ্ছে তা সমাজের তথা রাষ্ট্রের যে অবক্ষয়, তা মানুষের কাছে তুলে ধরে এবং এর একটা সমাধান দেয়।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংস্থা দিয়াড়ের দুই দিনব্যাপী জাতীয় গম্ভীরা উৎসবে আয়োজনে শুরু করে। আয়োজনের উদ্বোধন করেন বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।