ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ঢাকার ভালোবাসা মনে রাখার মতো, ভাঙা বাংলায় নন্দিতা দাস

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৮
ঢাকার ভালোবাসা মনে রাখার মতো, ভাঙা বাংলায় নন্দিতা দাস নন্দিতা দাস/ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: নন্দিতা দাস প্রথমত ভিন্ন ঘরানার চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। তারপর পরিচালক। এ পর্যন্ত দশটি ভাষার চল্লিশটির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন ভারতীয় এ অভিনেত্রী। সফলতা পেয়েছেন পরিচালক হিসেবেও। ঢাকা লিট ফেস্টে এ পরিচালক হাজির হয়েছেন তার পরিচালিত তৃতীয় সিনেমা (পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা হিসেবে ২য়) মান্টো নিয়ে।

বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে প্রদর্শন করা হয় মান্টো। তবে এর আগে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় ২০০৮ সালে হিন্দি, উর্দু ও গুজরাটি ভাষায় মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র 'ফিরাক' নির্মাতার।

পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে নন্দিতা দাস কখনো কোনো কিছুকেই বাধা মনে করেননি। তবে বাংলাটা বেশ ভালো জানলেও মিষ্টি হেসে বললেন, 'আমি বাঙালি নই, তাই আগেই বলে দিচ্ছি, আমি ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা বলবো।

‘এশিয়ান ফেস্টিভ্যাল অব ফার্স্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’, ‘নন্দী পুরস্কার’, ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব কেরালা অ্যাওয়ার্ড’ সহ অনেক পুরস্কার লাভ করেছেন এই চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাই যে চলচ্চিত্র নিয়ে লিট ফেস্টের আসরে তার যাত্রা, কথা হয় সেই 'মান্টো' নিয়ে।  

তিনি বলেন, কান ফেস্টিভ্যালে যাত্রা শুরু করে 'মান্টো'। সিডনি, টরেন্টো, লন্ডনসহ বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে মান্টো দেখানো হলেও এটাই প্রথম পাবলিক স্ক্রিনিং এবং এটা ঢাকায়। আমাদের প্রডিউসারও বলছিলেন কোনো পাইরেসি হবে না তো? আমি বলেছিলাম না, ঢাকাতে এদের উপর আমার খুব বিশ্বাস আছে। এখানে প্রিমিয়ার করছি, এরপর চেষ্টা করবো ডিস্ট্রিবিউট করার। তখন আপনারা সবাই দেখতে পাবেন এই ছবিটা।

সিনেমার কাহিনী নিয়ে তিনি বলেন, ১৯৪৬ সাল। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ইংরেজদের সূর্য প্রায় অস্তমিত। ইন্দো-পাকিস্তানি এক উর্দু লেখক বম্বের ঝলমলে সিনেমা জগৎ আর লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত। ব্যক্তিটির নাম সাদাত হাসান মান্টো। মান্টোর প্রগতিবাদী লেখকদের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক। বন্ধুদের মধ্যে আছে নারীবাদী লেখকও। এরপর ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলো। মানুষের জীবনে পরিবর্তন এলো। পরিবর্তনের স্পর্শ থেকে বাদ যায় না মান্টোর জীবনও। পরিবর্তনের সূত্র ধরে হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় স্বাভাবিক জীবন। এমনই এক গল্প দেখা যায় ‘মান্টো’তে।

নন্দিতা দাস/ছবি: জিএম মুজিবুরদু'বার কান চলচ্চিত্র উৎসবের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এ নির্মাতা তার নিজের নির্মাণ এবং উৎসব সম্পর্কে বলেন, ঢাকা লিটারেচর ফেস্টিভ্যালে আমি আগেও এসেছি, ২০১২ সালে। এখন এসে দেখছি এটা আরো বড় হয়েছে। আর আমি খুব খুশি যে এখানে আমি মান্টোর কথা, মান্টোর গল্প বলতে পারছি। কেননা মান্টো ৭০ বছর আগেও ছিল এবং এখনো আছে। এই দেশে, ইন্ডিয়াতে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।

তিনি বলেন, অনেকেই তাদের সত্য বলার জন্য সংগ্রাম করছে, তাদের উপরে অ্যাটাক হচ্ছে, অভিযোগ আসছে, মারা যাচ্ছে। সেটা এই মুভিতেও দেখা যাবে। আমার মনে হয় এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার।

নন্দিতা দাস প্রথম ভারতীয় যিনি শিল্পকলায় অবদানের জন্যে আন্তর্জাতিক নারী ফোরামের কাছ থেকে খ্যাতি অর্জন করেন। কাজ করছেন নারী অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবেও। সে সুবাদেই কথা আসে বর্তমান সময়ের অন্যতম মুভমেন্ট 'মি-টু হ্যাশট্যাগ' নিয়ে।

এ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের সমাজ তো পুরুষ প্রধান। আমাদের সাবকন্টিনেন্টও একই জিনিস। নারীদের অধিকারগুলো কখনোতো সেভাবে ছিল না। তবে এটা অনেক ভালো যে, এটা হচ্ছে। তবে আমাদের এ ব্যাপারে আরো বেশি কেয়ারফুল হতে হবে। এটাকে ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই।

এছাড়া 'সত্যিকারভাবে যারা হ্যারাজ করছে, তাদের সামনে নিয়ে আসা প্রয়োজন। আর এটা শুধু পুরুষদের বিরুদ্ধে নয়, বরং সমস্ত অপশক্তির বিরুদ্ধে। আর এটার জন্য আমাদের সত্যিকারভাবেই অপেক্ষা করতে হবে।  

পরিচালনা বা অভিনয়ের ক্ষেত্রে বাছাই কাজ করেন ‘১৯৪৭ আর্থ’র ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিষেক অভিনেত্রী। ‘ফিল্মফেয়ার স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়া নন্দিতা দাস প্রশংসিত সমালোচক মহলেও।  

সিনেমায় অবদানের কারণে ২০০৯ সালে ফ্রান্স সরকার এই নির্মাতাকে ‘অড্রে দেজ আর্টস অ্যাট দেজ লেটারস’ পদক দেয়। সেখান থেকেই জানতে চাওয়া চলচ্চিত্রের সঙ্গে সাহিত্যের সম্পর্ককে কীভাবে দেখেন তিনি!

নন্দিতা দাস বলেন, খুব কম ছবি হয়েছে রাইটার্সের উপরে। দেখেন, হিন্দি ছবিতে আমি যদি বলি, তবে তা একটাও হয়নি। মান্টাই প্রথম। তারপরও আমি ভাবলাম, যখন একজন ইন্টারভিউয়ার আমাকে জিজ্ঞাসা করলো যে মান্টো তো প্রথম ছবি একজন লেখকের উপরে। তারপর আমার মনে পড়লো মান্টো নিজে একটি ছবির স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন মির্জা গালিবের উপর। সেটা ছিল ১৯৫৫। অনেক মজার বিষয় যে তার একটি স্ক্রিপ্ট ছিল, তারপর ওনার উপর একটা মুভি হচ্ছে যেটা আমি বানিয়েছি।

এতো অর্জনের পরও শুধু অভিনয় আর চলচ্চিত্র নির্মাণেই নিজেকে আটকে রাখেননি নন্দিতা দাস। তার মধ্যে আছে মায়ের মমতাও। তাইতো কথার শেষ পর্যায়ে বলে দেন, আমার একটি ছোট্ট বাচ্চা আছে, আট বছরের। ওকে ছেড়ে এসেছি, ওকে একটু ঢাকা দেখাবো। আর এখানে যে ভালোবাসা আমি পাই, তা সত্যিই মনে রাখার মতো।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৮
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।