যাতে কখনও প্রত্যক্ষ, কখনও পরোক্ষভাবে উপস্থিত হয়েছিলেন একজন মানুষ। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
যার মধ্যমণিতে ছিলেন জনপ্রিয় লেখক ও দৈনিক কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামাল।
রোববার (০৬ অক্টোবর) রাজধানীর পরীবাগে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের ড. আসমা চৌধুরী মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এ ‘দ্বিতীয় বইআড্ডা’র আয়োজন করে শ্রাবণ প্রকাশনী।
সহযোগিতায় রয়েছে ঢাকা ইনিশিয়েটিভ। আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার রয়েছে কালের কণ্ঠ। আড্ডায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
আর কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ছিলেন বিশেষ অতিথি হিসেবে। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান এবং লেখক ও রংপুরে প্রতিষ্ঠিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন- শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবিন আহসান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী নুসরাত শারমীন।
কে এম খালিদ বলেন, আমি খুব বেশি বই পড়ি না। তবে যখন পড়ি, তখন মন দিয়ে পড়ি। মোস্তফা কামালের লেখা আমি মন দিয়ে পড়েছি। তিনি ইতিহাসের সত্য ঘটনাকে উপস্থাপনের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।
সেলিনা হোসেন বলেন, অগ্নিপুরুষ-এই একটি শব্দ ব্যবহার করে মোস্তফা কামাল উত্তাল সময়কে তুলে ধরেছেন। এ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা বড় কোনো ইতিহাস বই পাঠ না করে, উপন্যাস তিনটি পড়ে ইতিহাস জানতে পারবে।
‘এরপর তারা নিজেদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুকে জেনে নিতে পারবে। তাদের কাছে নতুন দিক উন্মোচন করবে। ইতিহাস পাঠ করার পাশাপাশি ইতিহাসের মানুষদেরও জানতে পারবে। সময়ের চিত্রকে উপন্যাসে চিত্রিত করা বড় কারিগরের কাজ। সে কাজটি মোস্তফা কামাল করেছেন। ’
মোস্তফা কামাল বলেন, ১৯৮৪ সাল থেকে লেখালেখি শুরু করলেও, নিয়মিত লিখছি ১৯৯১ সাল থেকে। আমি প্রতিদিন লেখি। এটা আমার কাছে প্রার্থনার মতো। বড় একটি কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। আমি ১৮ বছর টানা ইতিহাসভিত্তিক বই পড়া শুরু করি। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়কালের উপরে প্রচুর বই বের হয়েছে। কিন্তু ভালো কোনো কাজ হয়নি।
তিনি বলেন, আমি ইতিহাসের বইকে কঙ্কাল বলি। লেখকেরা সেই কঙ্কালে জীবন দান করেন। আমি সেই চেষ্টা করেছি মাত্র। বঙ্গবন্ধু ও সময়- উপন্যাসগুলোর মূল চরিত্র। ইতিহাসের মূল লক্ষ্য সত্যনিষ্ঠা। এটা উপন্যাসে তুলে ধরা কঠিন কাজ।
‘যেসব চরিত্রকে কখনও দেখিনি, সেসব চরিত্রের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়েছে। বই পড়ে চরিত্রগুলোকে আত্মস্থ করার চেষ্টা করেছি। আমি ইতিহাস ও চরিত্রকে ঠিক রেখে লেখার চেষ্টা করেছি। সবাইকে ইতিহাস পড়ানো সম্ভব না। গল্পের মাধ্যমে ইতিহাস বললে, অনেক মানুষকে পড়ানো সম্ভব। সামাজিক দায়বদ্ধতা ও নিজের তাগিদ থেকে এ বইগুলো লিখেছি। ’
কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান বলেন, সাংবাদিকতা সহায়ক পাঠ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু একটা সময় সাংবাদিকতা ছেড়ে দিতে হবে। মোস্তফা কামাল বড় সাংবাদিক হয়েও, এত মোটা মোটা বই লিখছেন এটা বিস্ময়কর। এ কারণে তাকে শ্রদ্ধা জানাই।
‘আমাদের ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক দায় রয়েছে। যা মোস্তফা কামাল নিজের লেখায় বাস্তবায়ন করেছেন। আমরা ইতিহাস বিচ্যুতি জাতি। সেজন্য এ ধরনের ইতিহাসআশ্রিত বই জাতির কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন। ’
আলোচক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস তিনটিতে মোস্তফা কামাল যে সময়কে তুলে ধরেছেন, সে সময়ের মানুষের মনোজগত পাঠ করেছেন। যা বিরল। ফলে ইতিহাস পাঠ করা পাঠকের কাছে এটি ভিন্ন স্বাদ দিচ্ছে।
‘এই বইগুলো ইতিহাস পাঠ না করা পাঠককে ইতিহাস পাঠের স্বাদ দেবে। তিনি সফলতার সঙ্গে পাঠকের কাছে ইতিহাসকে তুলে এনেছেন। এতটাই বস্তুনিষ্ঠ ছিল যে, ইতিহাসের চরিত্রেরও নামও পরিবর্তন করেননি। ’
শ্রাবণ প্রকাশনীর রবিন আহসান বলেন, শহর জীবনে অনেক আড্ডা এখন আর নেই। সেখানে আমরা বইআড্ডার আয়োজন করছি। বইমেলার পর বই নিয়ে সেভাবে আলোচনা বা সমালোচনা হয় না। বইমেলার বাইরেও যে বইয়ের একটি সংস্কৃতি রয়েছে। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা বইআড্ডার আয়োজন করছি।
শ্রাবণ বইগাড়ির এই স্বত্ত্বাধিকারী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ৪০টি বই নিয়ে বইআড্ডার আয়োজন করা হবে। এজন্য শ্রাবণ বইগাড়ি নিয়ে শহরে শহরে ঘুরে ফিরছি। পনের দিন পর পর বইআড্ডার আয়োজন করা হবে।
বইআড্ডা শেষে ছিলো বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতার আবৃত্তি। আবৃত্তি করেন লায়লা আফরোজ, নাজমুল আহসান, জাহান বশির, মাহফুজ আহসান, মাসুদুজ্জামান, মাসুম আজিজুল বাসার, আবু নাসের মানিক, নাঈমা রুম্মান, লিজা চৌধুরী, পলি পারভীন, ফারজানা ইসলাম, আহমেদ মাসুম ও শ্রাবণী আক্তার।
এর আগে মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাকের ‘বিদেশি গণমাধ্যমে ১৯৭১’ বই নিয়ে শ্রাবণ প্রকাশনী বই আড্ডার আয়োজন করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৯
ডিএন/এমএ