ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

নতুন বই ও সাহিত্য আড্ডায় মোহিত কামালের জন্মবার্ষিকী

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২০
নতুন বই ও সাহিত্য আড্ডায় মোহিত কামালের জন্মবার্ষিকী নতুন বই ও সাহিত্য আড্ডায় মোহিত কামালের জন্মবার্ষিকী-ছবি:বাংলানিউজ

ঢাকা: নতুন বই ‘ঈর্ষার ঘোরমগ্ন সময়’ এর পাঠ উন্মোচন এবং সাহিত্য আড্ডার মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হলো সময়ের নন্দিত কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের ৬১তম জন্মবার্ষিকী।

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে এই উদযাপনের আয়োজন করে বিদ্যাপ্রকাশ প্রকাশনী। আয়োজনে নতুন বই পাঠ উন্মোচনের সাথে ফুলের শুভেচ্ছা এবং বিশিষ্টজনদের শুভেচ্ছা ভালোবাসায় সিক্ত হন নন্দিত সাহিত্যিক মোহিত কামাল।

সন্ধ্যায় মোহিত কামালের জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানান কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস। তিনি বলেন, বয়স যখন ৬০ পেরিয়ে যায়, তখন সে আসলে জীবনের বিকেলের লগ্নে এসে উপস্থিত হন। এই সময়টা অনেকটা ক্রিকেট মাঠে বিকেল বেলা ব্যাটিং করার মতো। দিনশেষে কুয়াশায় ভিজে আর সারাদিন ক্রমাগত বলের আঘাতে পিচ ভেঙে যায়। যারা তরুণ, যারা ভাবে এসময়টি আরাম আয়েশ করে কাটানোর সময়, তাদের জন্য বলবো এ সময় আসলে তেমন নয়। এই সময়ে পথ চলাটা সত্যিই কষ্টকর।

তিনি বলেন, মোহিত কামাল যেভাবে সকলকে গভীরভাবে ভালোবাসতে পারেন, তার সূত্র আমরা শিখতে চাই। সকলকে ভালোবেসে নিজেকে তৈরি করার সৌধ তিনি নির্মাণ করতে শিখেছেন। যে লেখক মানুষকে ভালোবাসতে পারেন, তার লেখা সময়কে ছাড়িয়ে যায়।

মোহিত কামালের লেখা নিয়ে তিনি বলেন, এই লেখকের লেখায় গল্প যেমন আছে, তার থেকেও মানুষের ভেতরের অন্তক্ষরণের বিষয়টা বেশি মিশে আছে। ঘটনার সাথে সাথে তিনি তার লেখায় মনকেও তুলে ধরেছেন অনন্য মাত্রায়।

বক্তব্য রাখছেন মোহিত।  ছবি:বাংলানিউজ

জীবনের সময়কালকে ঘুম, বৈষয়িক আর তরুণ; এই তিন ভাগে ভাগ করে কবি কামাল চৌধুরী বলেন, মোহিত কামাল এখন একজন তরুণ, অন্তত আমি সেটাই মনে করি। তিনি শুধু একজন লেখক নয়, বরং বাংলাদেশের মানুষের মনের হাসপাতাল বলে যদি কিছু থাকে, তিনি তার লেখার মধ্য দিয়ে সেই জায়গাটি নিজের করে নিয়েছেন।

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, সৃষ্টিশীলতা ও মননশীলতার সংযোগ ঘটিয়ে নিজের লেখার ভূবন তৈরী করেছেন মোহিত কামাল। মানুষের সংবেদনশীল মন নিয়ে তিনি যেভাবে আমাদের তার লেখাগুলো উপহার দেন, সেসব নিয়ে তিনি আমাদের দৃষ্টান্ত।

এসময় তিনি লেখকের লেখাগুলো ইংরেজিতে অনুবাদের জন্য অনুরোধ জানান।

নতুন প্রকাশিত ‘ঈর্ষার ঘোরমগ্ন সময়’ বইটি নিয়ে সাহিত্যিক মনি হায়দার বলেন, লেখকের এই বইটিতে বরাবরের মতো মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলি কাজ করেছে। এতে মানুষের বিশ্বাস, বিশ্বাসের ভঙ্গুরতা, সামজিক সমস্যা, মানুষের ভেতরের মনন, রমণ, ক্রোধ, ঘৃণার বিচিত্র রূপ ফুটে উঠেছে। সমাজ বাস্তবতার নিরিখে বহুমাত্রিক উপলব্ধির প্রকাশ পাওয়া যায় এই বইয়ে।

মানব জীবনের নানন রকম বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনার ছোট ছোট গল্প নিয়েই গড়ে উঠেছে ‘ঈর্ষার ঘোরমগ্ন সময়’ বইটি। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত লেখকের নতুন এই বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ।

কবি, গবেষক ও লেখক তপন বাগচী লেখককে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, নিজের রচনা গুণে বাঙালী পাঠককে আকৃষ্ট করেছেন মোহিত কামাল। একজন লেখক হিসেবে যেমন দারুণ, তেমনি কর্মজীবনে একজন চিকিৎসক হিসেবেও তিনি অনন্য। বড়দের পাশাপাশি লিখেছেনে ছোটদের জন্যও। ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি তার ভালোবাসার প্রকাশ পাওয়া যায় তার লেখার মধ্য থেকেই। একইসাথে তার সাহিত্য পত্রিকা ‘শব্দঘর’ অনন্য ভূমিকা পালন করছে বাংলার সাহিত্য অঙ্গনে।

ছবি:বাংলানিউজ

আহমাদ মোস্তফা কামাল বলেন, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আর সারল্যে নিজের কাজের পরিচয় ছাপিয়ে লেখক হয়েছেন তিনি। লেখক হিসেবে তার অগ্রযাত্রা সুদূরপ্রসারী।

শুধু সাহিত্য বোদ্ধারা নয়, জন্মদিনের মঞ্চে লেখককে নিয়ে কথা বলেন তার সহধর্মীনী মাহফুজা আক্তার মিলিও। অনুরাগে ভালোবাসা ফুটিয়ে তিনি বলেন, একটি কবিতার মাধ্যমে পরিচয় মোহিত কামালের সঙ্গে। এখন বিবাহিত জীবনের ৩৪টি বসন্ত। সুখময় এই পথচলা আরো সামনে এগিয়ে যাক, আরো বড় হোক নিজের প্রাণপ্রিয় মানুষটি। জন্মদিনে এই প্রত্যাশা।

শুভেচ্ছায় সিক্ত মোহিত কামাল বলেন, সকলের ভালোবাসায় আমি সিক্ত। এখানে বসে বসে আমি নিজেকে আবিস্কার করেছি। আমার ঘাটতিগুলো, ভালোকাজগুলো ধরতে পেরেছি। আশা করি আগামীতে এগুলো আরো ভালোভাবে আমার লেখায় কাজে লাগাতে পারবো, নিজেকে আরো সুন্দর করে গড়তে পারবো।

তিনি বলেন, সাহিত্য হতে হবে জীবন ঘনিষ্ঠ। তা আমাদের স্পর্শ করলেই হবে না, তাকে অবশ্যই আমাদের হৃদয়-মন জয় করতে হবে। তবেই তা সত্যিকারের সাহিত্য হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিদ্যাপ্রকাশ প্রকাশনীর পক্ষে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন রহমানুর নবী প্রিয়। এসময় লেখককে ফুল আর ভালোবাসার উক্তিতে আরো শুভেচ্ছা জানান গোয়েন্দা লেখক অরুণ কুমার বিশ্বাস, বাংলা একাডেমির পরিচালক সাহিদা খাতুন, লেখক ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল, জয়দেব দে, উৎপল দত্ত, মণীশ রায়, সুরমা জাহিদ, মোজাম্মেল হক নিয়োগী, ড. মিল্টন বিশ্বাস, পরিচালক রেজা ঘটক, ছড়াকার আলম তালুকদার, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার ফয়সল হাসান সহ বিশিষ্ট জনেরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সৈকত হাবিব।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে কাটা হয় জন্মদিনের কেক। এসময় শিশু শিল্পীদের কণ্ঠে ভেসে ওঠে তার প্রিয় লালন সঙ্গীত।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২০
এইচএমএস/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।