ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

শুরু হলো জাতীয় কবিতা উৎসব

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২০
শুরু হলো জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু হলো জাতীয় কবিতা উৎসব।

ঢাকা: বাংলার মানুষের হৃদয়ের স্পন্দনকে যিনি মুক্তির সঞ্জীবণী মন্ত্রে গেঁথেছিলেন, সেই বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে ‘মুজিব আমার স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি’ প্রতিপাদ্যে শুরু হলো দু’দিনব্যাপী জাতীয় কবিতা উৎসব।

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সংলগ্ন হাকিম চত্বরে এ উৎসবের আয়োজন করে জাতীয় কবিতা পরিষদ। উৎসব উদ্বোধন করেন কবি মহাদেব সাহা।

তবে শারিরীক অসুস্থতার কারণে তিনি উৎসবস্থলে উপস্থিত না থাকায় তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ।

লিখিত উদ্বোধনী বক্তব্যে কবি মহাদেব সাহা বলেন, ৩৩ বছর আগে ইতিহাসের এক ভয়ংকর দুঃসময়ে স্বৈরাচারী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এদেশের মূলধারার কবিরা যে অনন্য ও অসাধারণ সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন, কালের ধারায় তা আজ এক মহা ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। নতুন যুগের নবীন কবিরা এ উৎসব আরও সমৃদ্ধ, বেগবান ও ঐশ্বর্যমণ্ডিত করে তুলবে। সারাবিশ্বের কবিদের মিলিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাই হবে কবিতাবিশ্ব।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের কবিতার মূলধারা গণ-আন্দোলন, প্রতিবাদ ও মিছিলের উষ্ণ সহচার্যে বেড়ে উঠেছে। বাংলা কবিতা তাই শিল্পে, প্রতিবাদে ও মানবিক বোধে দীপ্র। মানব সভ্যতার বিকাশ ও বিনির্মাণে কবিতার অবদান অসামান্য।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা কবি কাজী নজরুল ইসলামের মাজার, শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী কামরুল হাসানের কবর হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। এরপর জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। শুরুতে দেশের সাম্প্রতিক সময়ে নিহতদের জন্য শোক প্রস্তাব ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

উদ্বোধনী পর্বে জাতীয় কবিতা পরিষদের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বাঙালির বিবর্তনজাত বিজয়ের অনেক যুক্তির মধ্যে প্রধানতম যুক্তি হলো, স্মরণপূর্ব কাল থেকে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে বাঙালি টিকে আছে নিদেনপক্ষে তার ব্যক্তি পরিচয়ে। তার প্রথম অস্ত্র ভাষা, যা তার মায়ের মুখ থেকে শেখা। দ্বিতীয় অস্ত্র সদাচার এবং তৃতীয় অস্ত্র সংঘবদ্ধতা, যা তার পরিবার বা সমাজ তাকে শিখিয়েছে। এ সমন্বিত অস্ত্রটি বাঙালি প্রয়োগ করেছে তার সত্যস্বরে উচ্চারিত প্রতিটি মুক্তশব্দ তথা কবিতা দিয়ে। স্মরণপূর্ব কাল থেকে এ সৃষ্টিশক্তির সম্মিলিত সাহসে এগিয়েছে ব্যক্তি বাঙালি ও জাতি বাঙালি। একইসঙ্গে এগিয়েছে তার সচেতন গণইতিহাস।

কবিতা উৎসবের আহ্বায়ক কবি শিহাব সরকার বলেন, কবিদের চিরায়ত ধর্ম অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং শুভ ও মঙ্গল আবাহনে পূর্ণাঙ্গভাবে দীক্ষিত হয়ে গেছে কবিতা উৎসব। আমরা লড়াই করেছি শৃঙ্খল মুক্তির জন্য, স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িকতা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। সর্বোপরি আমাদের লক্ষ্য বিশুদ্ধ গণতন্ত্র।

সভাপতির বক্তব্যে কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আমরা নিজের দেশ এবং বিশ্বের মানবিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংকটের অবসান কামনায় সময়ের দাবি উচ্চকিত করে বিগত ৩৩টি উৎসবের কণ্ঠে নতুন নতুন মর্মবাণী তুলে ধরেছি। আমরা জানি সব কবির কর্তব্য মানুষের জন্য অনিন্দ্য সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন রচনা করা।

উৎসবে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত, কবি আমিনুর রহমান সুলতান, আনিসুল হক, কবি কাজী রোজী, দিলারা হাফিজ, কবি রবীন্দ্র গোপ, নিপু শাহাদাত, পিয়াস মজিদ, ফকির আলমগীরসহ কবিতা পরিষদের কবিরা। উদ্বোধনী আয়োজন শেষে মঞ্চে কবিতা পাঠ করেন বিদেশি কবিরা।

এবারের উৎসবে সুইডেন, উজবেকিস্তান, কোলকাতা, আসাম, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় একশ’র বেশি কবিকে কবিতা পাঠের জন্য এ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রায় দু’শ কবি এ কবিতা উৎসবে অংশ নিয়েছেন। দু’দিনের এ উৎসবে রয়েছে কবিতা পাঠ, নিবেদিত কবিতা, সেমিনার, আবৃত্তি ও সংগীত আয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২০
এইচএমএস/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।