ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সাজ্জাদ শরিফের কবিতা পাঠ ও আলাপন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২০
সাজ্জাদ শরিফের কবিতা পাঠ ও আলাপন

ঢাকা: যখন সুহৃদের ডাক থাকে, তখন সব বাধা নস্যি হয়ে যায়। করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক, সপ্তাহের শেষ দিনের যানজট- এসব কিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সমবেতরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনলেন কবি সাজ্জাদ শরিফের কবিতা। শুনলেন, বললেন সাজ্জাদ শরিফের কবিতা নিয়ে, ব্যক্তিজীবন নিয়ে।

বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) কবি সাজ্জাদ শরিফকে নিয়ে ‘কবির কবিতা পাঠ’ শিরোনামের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গালুমগিরি সংঘ।

রাজধানীর কাঁটাবনের বইঘর দীপনপুরে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে সাজ্জাদ শরিফের কবিতা নিয়ে আলোচনা করেন কবি আলতাফ হোসেন, শান্তনু চৌধুরী, মৃদুল মাহবুব ও তানভীর মাহমুদ।

আরও আলোচনা করেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক কবি জুয়েল মাজহার ও কথাসাহিত্যিক মাসরুর আরেফিন।

অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন গালুমগিরি সংঘের সমন্বয়ক কবি শিমুল সালাহ্উদ্দিন।

দর্শকসারির একাংশপ্রচার সহযোগী হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ আয়োজনটি সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। এ আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল সিটি ব্যাংক।

আলাপনের শুরুতেই সাজ্জাদ শরিফ বলেন, পুরান ঢাকার জিন্দাবাহারে আমার জন্ম। সে হিসেবে আমার এখন ইসলামপুরে থান কাপড়ের দোকানে বসে টাকা-পয়সার হিসাব করার কথা। কিন্তু আমি আজকে আপনাদের সামনে কবিতা পড়তে এসেছি।

‘আমার বাবা ভবঘুরে ছিলেন। যা আমার পরিবারের জন্য বিব্রতকর ছিল। আমার মা একা হাতে সংসার চালাতেন। এমন সময় আমার কোনো খেলনা ছিল না। এমনকি একটি বলও ছিল। সে সময় আমি বই পড়তাম আর কল্পনা করতাম। এটাই ছিল আমার শৈশব।

মঞ্চে কবি ও আলোচকরাতিনি বলেন, ছোটবেলায় আমাদের পাশে থাকতেন শাহিদা আপা। তিনি কবিতা লিখতেন। তার কাছ থেকে আমি ভাষা পেয়েছিলাম। মূলত তার কাছ থেকে কবিতা লেখার আগ্রহ তৈরি হয়। এর জন্যই আমার প্রথম বইটি তাকে উৎসর্গ করেছিলাম।

‘আমার চার বছরের বড় ভাইয়ের একটা সংঘ ছিল। সেখানে আমি কবিতা পড়তাম। সে সময় আমার মনে হলো, যে ভাষায় আমরা কবিতা লিখছি। সেটা আমার ভাষা নয়। কবিতার জন্য আলাদা ভাষার প্রয়োজন রয়েছে। এসময় আমি ‘রাত্রি’ নামে একটি কবিতা লিখি। এ কবিতাটি আমাকে মুক্তি দিয়েছিল। ’

তিনি বলেন, গাণ্ডীব ছেড়ে আসা, অফিসের ব্যস্ততা ও নিজের লেখার প্রক্রিয়ার কারণে কম লেখা হয়েছে। আমি এক বসায় যদি কবিতা লিখতে না পারি, তাহলে আর কবিতা লেখা হয় না। আমি আরও কবিতা লিখতে চাই। এবং অপেক্ষা করি কখন কবিতাটা আমার কাছে আসবে।

আলাপনের ফাঁকে ফাঁকে সাজ্জাদ শরিফ তার কাব্যগ্রন্থগুলো থেকে নির্বাচিত কবিতা পাঠ করেন।

দর্শকসারির একাংশআলোচনায় অংশ নিয়ে সাজ্জাদ শরিফের স্ত্রী শাওন আজিম বলেন, ছোটবেলায় কবিকে যে রকম চিন্তা করতাম, সেখান থেকে সাজ্জাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভীষণ গোছানো, পরিপাটি মানুষ। সংসারের সব কাজ সে করে। বাজার সে করে, খাবারের মেন্যুটাও সে ঠিক করে। তার কাছে একটাই চাওয়া যেরকম আছো, তেমনই থাকো। আমাদের আদর, ভালোবাসায়।

অনুষ্ঠানে কবি জুয়েল মাজহার তার অনূদিত সাজ্জাদ শরিফের ‘বনপরী’ কবিতাটির ইংরেজি অনুবাদ আবৃত্তি করেন।

সাজ্জাদ শরিফের কবিতার বিশ্লেষণ করে আলতাফ হোসেন বলেন, আশির দশক থেকে সাজ্জাদ শরিফ কবিতা লিখছেন। তার সবচেয়ে বড় দিক, তার অগাধ পড়াশোনা। কবিতা ছাড়াও তিনি বিচিত্র বিষয়ে লিখেছেন। অনুবাদও করেছেন অনেক।

শান্তনু চৌধুরী বলেন, আমাদের সময়ের অগ্রবর্তী পাঠক ছিলেন সাজ্জাদ শরিফ। তার পাঠের কারণে আমরা আলোকিত হয়েছি, উজ্জীবিত হয়েছি।  

‘আমাদের সময়ে কবিতা ছিল এককেন্দ্রিক। আমরা এখান থেকে বেরিয়ে আসার কথা ভাবতাম। সাজ্জাদ সে চিন্তায় পুষ্টি জুগিয়েছিল। কবিতার নতুন অবয়ব পড়ার পেছনে তার ভূমিকা ছিল অগ্রবর্তী। ’

মৃদুল মাহবুব বলেন, আশির দশকের কবিতার পটপরিবর্তনে দার্শনিক, ভাবগুরু ছিলেন সাজ্জাদ শরিফ। আমার চোখে তিনি বুদ্ধদেব বসু। তিনি আরও লিখবেন, এটাই আমার প্রত্যাশা।

তানভীর মাহমুদ বলেন, সাজ্জাদ শরিফ বিমূর্তধারার ভাষায় নাটকীয়তা দিয়ে কবিতা লিখেছেন। সে সঙ্গে কবিতার ঐতিহ্যকে ব্যবহার করেছেন। তবে এটা তার কাছে মুখ্য বা মোক্ষ নয়।

মাসরুর আরেফিন বলেন, আমার লেখক হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা সাজ্জাদ শরিফের। তিনি না থাকলে হয়তো মফস্বল থেকে আসা আমার পায়ের নিচে মাটি পেতাম না। তিনি ছবি ও দৃশ্যসম্পন্ন একজন কবি।

অনুষ্ঠানে নিজের করা সাজ্জাদ শরিফের কবিতার ইংরেজি অনুবাদ পড়ে শোনাচ্ছেন জুয়েল মাজহার।  ছবি- শাকিল আহমেদ

এর আগে আলোচনার সূচনা বক্তব্যে শিমুল সালাহ্উদ্দিন বলেন, ২০০৫ সালে প্রথম গালুমগিরি সংঘের আয়োজনে ‘কবির কবিতা পাঠ’ আয়োজন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে তিনজন কবি এতে অংশ নেন। এর পর ২০১২ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ের আয়োজনে দশজন কবি অংশ নেন। তৃতীয় পর্যায়েও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে দশজন কবিকে নিয়ে মাসিকভিত্তিতে আয়োজন করার।

তিনি জানান, এপ্রিল মাসের ‘কবির কবিতা পাঠ’ অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করবেন কবি শোয়াইব জিবরান।

অনুষ্ঠানে দর্শকসারিতে উপস্থিত ছিলেন কবি সাজ্জাদ শরিফের সহধর্মিণী  শাওন আজিম, কবি জাহিদ হায়দার, শামসেত তাবরেজী, ফরিদ কবির, সেলিম মোরশেদ, গুলতেকিন খান, আব্দুর রাজ্জাক, জুনায়েদ সাকী, ওয়াসী আহমেদ, ব্রাত্য রাইসু, কামরুজ্জামান কামু, সুমন রহমান, সাখাওয়াত টিপু, মারুফ রায়হান, হামীম কামরুল হক, শিবব্রত বর্মন, জয়া আহসান, অপি করিম, এনামুল করিম নির্ঝর, ফৌজিয়া খান, আফসানা বেগম, শোয়াইব জিবরান, মাহবুব মোর্শেদ, মিথিলা ফারজানা, সোহরাব হাসান, অরুণ বসু, মাহবুব আজীজ, জাহিদ রেজা নূর, ফয়জুল ইসলাম, সুহিতা সুলতানা, ফিরোজ এহতেশাম, আলতাফ শাহনেওয়াজ, পিয়াস মজিদ, ফাতেমা আবেদীন নাজলা, সৌভাত হীরা, তানিম কবির, হাসান রোবায়েত, ফরিদ ছিফাতুল্লাহ, সুমন পাটওয়ারী, প্রমুখ।

তৃতীয় পর্যায়ের আয়োজনে এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি সৈয়দ তারিক এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজু আলাউদ্দিন কবিতা পাঠ করেন। আলোচনায় অংশ নেন ফরিদ কবির, হিজল জোবায়ের, আফসান চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুস সেলিম ও রিফাত মুনিম।

এর আগে ‘কবির কবিতা পাঠ’র প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে কবিতা পড়েছেন যথাক্রমে কবি শুভাশিস সিনহা, রায়হান রাইন, মাসুদ খান, জুয়েল মাজহার, আলফ্রেড খোকন, চঞ্চল আশরাফ, কাজল শাহনেওয়াজ, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, শামীম আজাদ, শামসেত তাবরেজী, ফরিদ কবির।

কবিদের কবিতা নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা করেছেন নওশাদ জামিল, পিয়াস মজিদ, সুমন সাজ্জাদ, শোয়াইব জিবরান, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সাখাওয়াত টিপু, আজফার হোসেন, সোহেল হাসান গালিব, আব্দুন নূর তুষার, বিবি রাসেল, সলিমুল্লাহ খান, খালেদ হামিদী, খান রুহুল রুবেলসহ অনেকে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২০
ডিএন/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।