ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ফারুক আহমেদের কবিতা

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪২ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২০
ফারুক আহমেদের কবিতা

তুমি যতো ভালোবাসা ঢালো

তুমি যতো ভালোবাসা ঢালো
যেন ততো-ই বিরহ জ্বালো।
তুমি নিয়ে আসো ওয়াগান ভরে অধরচিহ্ন;
আমি খুঁটে খুঁটে খাই নীলরঙা বিরহঅন্ন।

আমাদের মাঝখানে আসে পৃথিবীর অসুখ;
তুমি নিয়ে আসো জুঁই, স্পর্শগন্ধ, অশোক।
দেখি তোমার চাহনি ফুটে ভরেছে এভিনিউ
আমি পাই না, অনেক দূরে ডাকে একটি পিউ।


দেখো আমাদের মাঝখানে পড়েছে ধ্বংসস্তূপ
হৃদয়েরা ভালোবেসে নোনা তরঙ্গকে মাপুক।
যতো ভালোবাসা ফোটে
ততোই বিরহ জোটে।
বাহুডোর মুগ্ধঘোর ফালি ফালি করে অঝোরে
তোমার অন্বেষণে বেরিয়ে কম্পনে বুক ভরে।
তোমারে পাই, তোমারে পাই প্রার্থনায়-কোরাসে
যেন বিচ্ছেদ যেন বিচ্ছেদ বা কম্পিত তরাসে।
পথ ভরেছে মেঘে আবেগে মেহনে আয়োজনে
অজস্র বর্ষ থেকে আমরা পাই মুহূর্ত গুণে।
তার ভেতর জ্বরা, রয়েছে বিচ্ছেদভরা মাঠ
তুমি হাত ধরে খুলে দাও মুগ্ধতার কপাট।
এভাবে তোমাকে পাই, পাই না তোমাকে কোথাও
এইভাবে হৃদয়কে তপ্ত হৃদয়ে তুলে দাও
এইভাবে ভালোবাসা ঢেউ আর সুরে অঝোর
যেন যুগল, যেন বিচ্ছেদে অরূপ এক স্বর।
সুতরাং তুমি যতো ভালোবাসা ঢালো
যেন ততো বিরহ অজান্তেই জ্বালো।


বেদনার কী হয় 

আমাদের বিভক্তির কোন রেখা নেই
শতদ্রু বা সিন্ধু, কৌশী আর গঙ্গা, তাতে
স্পষ্ট রেখা জেগে আছে, অথচ আমরা!
দুপুর থেকে বিকাল কখন যে ভাগ হয়ে যায়
কেউ বুঝতে পারে না, টের পায় না কাকপক্ষিও।
আমরা তো বারোটায় এসেই দাঁড়াই মুখোমুখি;
আমি দুপুর আর তুমি রাত বারোটায়...
এমন এক গোলকধাঁধার ভাষা কে বুঝবে;
কে বুঝবে, প্রতিটি সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা ঠকঠক
শব্দে আরো বেশি দূরে ঠেলে দেয় আমাদের।
প্রতিটি সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা ঠকঠক
করে ওঠে, মনে হয় তোমার পায়ের আওয়াজ;
মনে হয় আমার বুকের কাঁটা বেজে যাচ্ছে অনবরত,
মনে হয় প্রতিটি সেকেন্ড অপেক্ষার তালিকা।  
মেঘ জমে তো বৃষ্টি হয়ে ঝরে যায়, বেদনার কী হয়!
বেলাভূমিতে একের পর এক ঢেউ আসে, বড় ছোট
বড় অভিমান, ছোট ছোট অভিমান, আসে আসে;
মেঘ জমে তো বৃষ্টি হয়ে ঝরে যায়, বেদনার কী হয়!


নিরর্থক দিনলিপি 

কবি একটি বৃক্ষ
তার ভেতরে লুকিয়ে থাকে পাখির ঝাঁক
কবি বৃক্ষ নয়,
বৃক্ষের মতো স্থির হয়ে থাকা কবির কাজ নয়।
তাহলে কবি একটি নদী
যার ভেতর মাছের মতো ঘাই দেয় স্মৃতির মিনার
না কবি কোন নদী নয়;
তার গন্তব্যের দিকে তাড়িত হওয়ার ব্যাপার নাই।
তাহলে কবি একটি পথ
যে পথ দিয়ে নিয়ে যায় বর্ণময় কথার মিছিল।
আর কবিকে যেতে হয় চাহনির দোকানে
কবিকে চিনতে হয় অবজ্ঞাফুল।
তাহলে কবি কি মানুষ! না আত্মা শুধু এক
অরূপ ঐশ্বর্যের এক চিরকালের ছাপাখানা।
কবিকে নাম ধরে ডাকো;
কবিকে কবি বলে ডাকো।
 

নিরর্থক দিনলিপি : ২ 

একটা দেখা হওয়ার দাম কত বল!
সপ্তাহ, মাস, বছর না যুগের অপেক্ষা।
ঘাস তুমি সবুজ কোমলতায় বাড়ছো
ফুল তুমি শহরজুড়ে রঙিন পাটি বুনছো
আদিগন্ত মাঠ যেন একেকটা কবিতা;
অথচ কারো সঙ্গে দেখা করতে পারছি না;
এভাবে অসুখ বাড়ছে, বেড়ে যাচ্ছে।
আমার এ অসুখ কবে শেষ হবে
আমাদের অসুখ শেষ হবে কবে!কোথাও আর হাত দিতে পারছি না
না স্বপ্নে, না প্রাত্যহিকতায়।
জীবন একটি আশ্চর্য চমক।
 

নিরর্থক দিনলিপি: ৩ 

একটা আকুতির মতো দাঁড়িয়ে গেছি শহরে
আকুতি যেন মহাপৃথিবীর: ফুল, পাখি, পথেরও।
এ শহরে হারিয়ে ফেলেছি হাসিগুলো; হারিয়েছি
বহু বহু জমে ওঠা বিহ্বল শব্দ, অধোমুখ সন্ধ্যা।
ফলে হারিয়ে ফেলার তালিকায় আছে মুহূর্ত-ঘণ্টা-দিন;
নলখাগড়া বনের মতো সারি সারি ফিরে আসা
সাঁতার কাটতে চলে গেছে অচেনা এক বন্দরে।
আর আমি আটকা পড়েছি নিদানকালের বাহুডোরে।
সকল বাসনা একটা নক্ষত্রের মতো আকাশে বড় হচ্ছে;
আমার থেকে, এ পৃথিবী থেকে বহু দূরে, বহু দূরে
শহরের অসুখ আরো বাড়ুক, হোক আরো রুদ্ধ।
সেখানে যাওয়ার অভিমুখ সব মুখ থুবড়ে পড়ুক।
যাব তবে শব্দের সাঁকো বেয়ে মধুরতর উদ্যানে।
আমাকে দু'হাতে বিহ্ববলতা সরিয়ে যেতে হবে;
যেতে হবে উপমায় বানানো একটা পথ ধরে;
কেননা কবি পৃথিবীর মৌলিক শিল্পী এক।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।