ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রথম সংকলন

পাতায় পাতায় শৈল্পিক প্রতিবাদ

দীপন নন্দী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২০
পাতায় পাতায় শৈল্পিক প্রতিবাদ ..

ঢাকা: তখন এক অদ্ভুত সময়। যার জন্য স্বাধীন ভূ-খণ্ড, তার হত্যার কোনো প্রতিবাদ নেই।

কোথাও উচ্চারিত হচ্ছিলো না ‘বঙ্গবন্ধু’র নাম। এমনই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল আজীজ বন্ধুদের নিয়ে প্রকাশ করলেন ‘এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়’।  

যখন সামান্য প্রতিবাদে নেমে আসতো শাস্তি, তখন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার প্রতিবাদ জানালেন ছড়া-কবিতার ছন্দে।

মাত্র পঁচিশ কপি ছাপা হয়েছিল- এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়। তাতেই হৈচৈ পড়ে যায়। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর এই সংকলনেই প্রথম লেখা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শব্দটি। ১৯৭৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির বইমেলায় যা সংকলিত হয় বই আকারে। ১৯৭৭ সালের অক্টোবরে সংকলনটির প্রচ্ছদ করেন দৈনিক সংবাদের মানিক দে। ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও বইটির নতুন কোনো মুদ্রণ আসেনি।

আবদুল আজীজের মুখে শোনা যাক ‘এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়’-এর প্রকাশের ইতিহাস।

‘তখনকার প্রেক্ষাপট আজকের মতো না। চলছে সেনাশাসন। বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা তখন একপ্রকার নিষিদ্ধ। আমি সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের ছাত্র। হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধুর উপরে একটি সংকলনের চিন্তা এলো। যোগাযোগ করি তিন বন্ধু ভীস্মদেব চৌধুরী, আলতাফ আলী হাসু ও সিরাজুল ফরিদের সঙ্গে। কারো সঙ্গে কারোর সম্পৃক্ততার কথা জানালাম না। সংগ্রহ হতে লাগলো ছড়া আর কবিতা। ’
সংকলনটির প্রকাশক হিসেবে নাম ছিল ‘সূর্য তরুণ গোষ্ঠী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’-এর। এ সংগঠনটি কার- এ প্রশ্ন ছিল আবদুল আজীজের কাছে।

তিনি বললেন, এ নামে আদৌ কোনো সংগঠন ছিল না। গ্রেফতার এড়াতে এ নামে বইটি প্রকাশ করা হয়। যাতে খবর বাইরে না যায়। বইটির মূল্য ছিল পাঁচ টাকা। আর গ্রেফতার এড়াতে বইটি বাচ্চাদের দিয়ে বিলি করা হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুকে নিবেদন করে ৩০ জন কবি-লেখকের ৩০টি কবিতা ও ছড়া স্থান পেয়েছিল সংকলনটিতে। যার শুরুতেই ছিল অন্নদাশংকর রায়ের বিখ্যাত সেই ছড়া- ‘যত দিন রবে পদ্মা যমুনা/গৌরী মেঘনা বহমান/ ততদিন রবে কীর্তি তোমার/শেখ মুজিবর রহমান। ’

পর্যায়ক্রমে বইটিতে থাকা লেখাগুলো ছিল- সিলেট অঞ্চলের কবি দিলওয়ারের ছড়া  ‘এ তো ভঙ্গ বঙ্গ নয়’, শিক্ষাবিদ হায়াৎ মামুদের কবিতা ‘মুজিবের এপিটাফ’, রাহাত খানের ‘যখন সময় হবে’, মাশুক চৌধুরীর ‘চিৎকার’, ফরিদুর রহমান বাবুলের ‘সাম্প্রতিক’, সুকুমার বড়ূয়ার ‘৭ই মার্চ’, মোহাম্মদ মোস্তফার ‘আবার আসে বাং-কর্ণো’, মাহমুদুল হকের ‘বকুল গন্ধ বাঘের চোখে’, আমিনুল ইসলামের ‘বেদু প্রণাম তোমাকে বঙ্গবন্ধু’, নির্মলেন্দু গুণের ‘মুজিব মানে মুক্তি’, তুষার করের ‘বঙ্গবন্ধুর জন্যে’, আলতাফ আলী হাসুর ‘অঙ্গীকার’, মোহাম্মদ রফিকের ‘ব্যাঘ্র বিষয়ক’, আবদুল আজীজের ‘সরম লাগার ছড়া’, শান্তিময় বিশ্বাসের ‘পিতার জন্য’, আখতার হুসেনের ‘সোনার বরণ ছেলে’, ভীস্মদেব চৌধুরীর ‘পিতা:তোমার জন্য’, জিয়াউদ্দীন আহমদের ‘শেখ মুজিব’, জাহিদুল হকের ‘গোলাপ’, ইউসুফ আলী এটমের ‘ছবির ছড়া’, সিরাজুল ফরিদের ‘ছড়া’, ফজলুল হক সরকারের ‘শেখ মুজিব’, মহাদেব সাহার ‘আবার আসিব ফিরে’, জাফর ওয়াজেদের ‘একটি মুজিব’, লুৎফর রহমান রিটনের ‘একটি ছেলের জন্য’, নূর-উদ্‌দীন শেখের ‘সেই ছেলেটি’, ওয়াহিদ রেজার ‘জাতির পিতা’, কামাল চৌধুরীর ‘একজন প্রেমিকের কথা’ এবং খালেক বিন জয়েন উদ্দীনের ‘রাখাল রাজার জন্য’।

এত বছরেও সংকলনটির পুনর্মুদ্রণ কেন হয়নি জানতে চাইলে আবদুল আজীজ বলেন, কলকাতা থেকে সংকলনটি পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। সেখানে কয়েক লাখ কপি বিক্রিও হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে সংকলনটি পরে আর প্রকাশ হয়নি।

সংকলনটি নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানালেন তিনি। বললেন, প্রত্যেক লেখকের সাক্ষাৎকার নিয়ে নতুন করে সংকলনটি প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সে সঙ্গে একটি তথ্যচিত্রও নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২০
ডিএন/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।