ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আবদুর রবের একগুচ্ছ কবিতা

আবদুর রব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০
আবদুর রবের একগুচ্ছ কবিতা আবদুর রব, ফাইল ফটো

১. স্পর্শ

 

মালাকাইটের ঝাঁপি খুলে গল্পটা বেরিয়ে পড়ে:
গ্রানাইট সুন্দরি জানে না
কী ঝাপট লাগে তার মনে,
কোথায় তাকিয়ে থাকে সবুজ দু’চোখ!

নরম স্পর্শের লোভে দেহ চায় অলীক পালক—
রহস্যদেবতা!
অসম্ভব তৃষ্ণা তার সোনালি গলায়—
অচেনা এ সম্মোহন;
ডেকে নেয়, চিৎ করে শুইয়ে দেয়,
নয়ানজুলিতে—
যৌবনের গাঢ় নরম ঘাসের বুকে!

প্রতিটি স্পর্শের লিপিচিহ্ন রয়ে যায়:
প্রেমদীপ জ্বেলে
পুরুষ অপেক্ষা করে, নাকি
ব্যাঘ্রাদির ন্যায় শিকার পাহারা দেয়
স্পর্শমাত্র তা সুস্পষ্ট হয়!

স্পর্শে মৃত্যু, পুনর্জন্ম—
স্পর্শগুলি বুড়িরচু, ছুঁয়েই
ছুটে যায়, সাদা-কালো চিন্তার আড়ালে!

 

২. গুহাচিত্র

 

যে গুহায় বাস করতাম,
দেয়ালে দেয়ালে তার এঁকে এসেছি অনেক চিত্র।
একদিন সেগুলিও আবিষ্কৃত হবে।


কান পাতলে শুনতে পাবে,
প্রতিটি কথার প্রতিধ্বনি।
এমন একটা চিত্রময় গুহা
সে আমাকে উপহার দিয়েছিল
যখন আমি তাকে বলেছিলাম—
ভালোবাসি।

 

৩. দৈত্যপুরী

 

এ চিন্তা কতটা আধ্যাত্মিক
তা বলতে পারব না তবে
আত্মা আছে, দৈত্যপুরীতে ঘুমিয়ে থাকা 
রাজকুমারীর মতো; কখন আসবে
রাজার কুমার,
চোখের ওপর থেকে সূচগুলি তুলতে? 
রাজকুমারীর সুপ্ত আত্মা
নিজেকেই অতিক্রম করে যায়—
নীটৎসের প্রটোপ্লাজম।
ঘুম নয়, ক্ষুধা নয়—
দুর্নিবার এক ইচ্ছাশক্তি,
ক্রমশ বিস্তৃত হয় প্রবৃদ্ধি ও সংযোজনের ভেতর দিয়ে।
তার কি একবারও মনে হয় না
সবকিছু এক ধরনের মূল্যায়ন,
ঘুমিয়েও বেঁচে থাকাটা একটা সীমাবদ্ধতা কিংবা
পছন্দসই ভিন্ন কিছু একটা হয়ে ওঠা!

 

৪. জোনাকির ছায়া

 

সময় জানিয়ে দেয়
তোমাদের নগর পরিকল্পনায় আমি
কোথাও থাকব না;
আমাকে ছাড়াই একে একে গড়ে উঠবে
নতুন শহর ও উপশহর।
সেইসব শহরের সিগন্যালে কারা
অপেক্ষা করবে,
আদৌ কোনো সিগন্যাল থাকবে কি না জানি না।
অনেকটা সময় গেল,
অভিবাসনের চেষ্টায়।
অনেক চীৎকার চেঁচামেচি আর প্রচেষ্টা দিয়ে
গড়ে ওঠা অর্জনগুলিও
ফেলে আসতে হয়।
শেষ কবে জোনাকি দেখেছি
মনে নেই, শুধু মনে আছে
একদিন তার নীল আলো
জ্বলে উঠেছিল
আমার বুকের অন্ধকারে।
আমি তাই আজও
জোনাকির ছায়া হয়ে
রয়েছি এখানে…।

 

৫. বাগানের স্মৃতি

 

অন্যদের দেখাদেখি তুমিও বাগান করেছিলে,
হৃদয় সমান।
সময়ের খড়কুটো দিয়ে
ঢেকে দিয়েছিলে বারো হাত কাঁকুড়ের
তের হাত বিচি।
কাঁকুড়ও ফলেছে ঠিকই কিন্তু তা তোমার নয়—
পচনের আগে ওরাও পেয়েছে ভয়;
বাগানের ঝুড়ি দেখে তাই
চলে গেছে নিজস্ব বাজারে;
তোমাকেও ঠকায়নি, রেখে গেছে
বাগানের স্মৃতি!

 

জন্ম ৩০ জুন ১৯৬১ সালে, খুলনা জেলার দক্ষিণের এক গ্রাম ইসলামপুরে। পৈত্রিক নিবাস যশোর। বর্তমান বসবাস ঢাকায়। পেশায় অর্থনীতিবিদ, একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

এ পর্যন্ত তাঁর আটটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয় যৌথ কাব্যগ্রন্থ ‘পূর্ণ প্রাণ যাবো’। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কে ঘুমায় কে জাগে’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৪। তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘রূপান্তরের গান’ বের হয় ২০০৩ সালে। চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘আপেলসূত্র’ প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে। এছাড়া ছোটদের জন্য চীনা গল্পের তিনটি অনুবাদ গ্রন্থও আছে। এগুলো প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে ২০১৭ তে প্রকাশিত হয় অনুবাদ কবিতার বই ‘বৃষ্টির ভেতর এক গলিপথ’।

কবি আবদুর রবের কবিতা যেন শিল্পের অভিকর্ষ রূপ। কখনও ইঙ্গিতময়, অভিজ্ঞতা এবং জীবনের এক গূঢ় অন্বেষণ। অলঙ্কারের বহুমাত্রিক প্রয়োগে তিনি স্বতন্ত্র। ভিন্ন ধরনের রহস্যময়তা আর মুগ্ধ জাদুকরের মতো তাঁর কবিতার উপমা তৈরি করে দারুন এক আবহ।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।