ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

খুললো শিল্পকলার দ্বার, বৈরী আবহাওয়ায়ও মিললো প্রাণের উচ্ছ্বাস

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২০
খুললো শিল্পকলার দ্বার, বৈরী আবহাওয়ায়ও মিললো প্রাণের উচ্ছ্বাস

ঢাকা: নাট্যকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে অবশেষে খুলে দেওয়া হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির সবগুলো মিলনায়তন। আর সঙ্গে সঙ্গেই ফের সরব হয়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক অঙ্গন।

শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) দীর্ঘদিন পর আলোর ঝলকানি ও সংস্কৃতিকর্মীদের শৈল্পিকতায় নতুন করে প্রাণ ফিরে পেলো একাডেমির মঞ্চগুলো। জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন, পরীক্ষণ থিয়েটার হল ও স্টুডিও থিয়েটার হলে নাট্যকর্মীদের সংলাপ আর অভিনয়শৈলীতে তৈরি হয় নান্দনিক আবহ।

শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নীতিমালা মেনে সীমিত পরিসরে এখন থেকে খোলা থাকবে শিল্পকলার মিলনায়তনগুলো। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো চাইলে নীতিমালা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারবে।

এদিকে দিনভর বৃষ্টি থাকলেও মঞ্চে নাটক দেখা ও অনুষ্ঠান উপভোগের ক্ষেত্রে হেমন্তের বেরসিক বৃষ্টির চোখ রাঙানি  ঘরের চারদেয়ালে বন্দি রাখতে পারেনি শিল্পানুরাগি দর্শকদের। বরং বিকেলে সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে শরৎ উৎসবের রঙে প্রাণের উচ্ছ্বাস তৈরি হয় সমগ্র একাডেমিজুড়ে। সবমিলিয়ে শিল্পী ও দর্শকদের কোলাহলে ছুটির দিনের সন্ধ্যাটা মুখরিত ছিল শিল্পের আলোয়।

দীর্ঘবিরতির পর শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হয় পালাকারের নাটক ‘উজানে মৃত্যু’। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর উপন্যাস অবলম্বনে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন শামীম সাগর। অভিনয় করেছেন দলের নিয়মিত শিল্পীরা।

একই সময়ে পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় জাগরণী থিয়েটার প্রযোজিত নাটক ‘রাজার চিঠি’। রবীন্দ্রনাথের শাহজাদপুরের স্মৃতিধন্য কাহিনী নিয়ে নাটকটি রচনা করেছেন মাহফুজা হিলালী আর নির্দেশনা দিয়েছেন দেবাশীষ ঘোষ। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন দলটির নিয়মিত শিল্পীরা।

অন্য দু’টি নাটকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্টুডিও থিয়েটার হলে শুরু হয়েছে খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা একেএ কবীরের স্মরণে দুই দিনব্যাপী স্মরণানুষ্ঠান। দলের নিজস্ব প্রযোজনার নাটক ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’, মৈত্রী থিয়েটারের ‘চা অথবা কফি’, এবং উৎস নাট্যদলের ‘পতাকায় বঙ্গবন্ধু’ নাটকের অংশবিশেষসহ এ উৎসবে আরও থাকছে গান, কবিতা ও স্মৃতিচারণ।

শুধু নাটক নয়, সন্ধ্যার নাটকের দৃশ্যের আগে বিকেলের শেষ আলোয় নৃত্য, সঙ্গীত, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে শরৎ উৎসবের আয়োজন করে সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী। অসিত বিশ্বাসের এস্রাজ বাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শরত নিয়ে হেমন্তকালের এ আয়োজন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, রজনীকান্ত, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, দেশাত্মবোধক গান, যন্ত্রসঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্য দিয়ে সাজানো ছিল শরৎ উৎসব। সুরের মূর্ছনা, নৃত্যের ঝংকার ও আবৃত্তির দীপ্ত উচ্চারণে হৈমন্তী সন্ধ্যায় গোটা মিলনায়তনে মূর্ত হয়ে উঠে শারদীয় আবহ।

এদিকে দীর্ঘদিন পর মঞ্চে নাটক উপভোগ ও শিল্পীদের নৃত্য-গীতের ঝংকার দর্শকদের মাঝে ভিন্ন এক ভালোলাগার সৃষ্টি করেছে। ভার্চ্যুয়াল জগত ছেড়ে মিলনায়তনের অনুষ্ঠান যে অনেক বেশি উপভোগ্য, সেটাই যেন প্রমাণ করে গেছে এদিন দর্শকদের উপস্থিতি। তাইতো খুব দ্রুতই শিল্পকলা একাডেমিতে ফের প্রাণের উচ্ছ্বাস ফিরে আসবে বলেই মনে করছেন সবাই।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২০
এইচএমএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।