ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (৫)

শামীম খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২১
সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (৫)

শামীম খান। বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।

সম্প্রতি তিনি রাশিয়া ভ্রমণ করেছেন। পাঠকের জন্য তিনি তুলে ধরেছেন সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আর রাশিয়ার এগিয়ে চলার খণ্ড খণ্ড চিত্র। আমরা তা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছি। আজ থাকছে এর পঞ্চম পর্ব।

রাশিয়া থেকে ঘুরে আসার পর পাওয়ার প্লান্টকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই নভোভরোনেস শহর সম্পর্কে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সঙ্গে আলাপকালে জানান,  নভোভরোনেসের মতো রূপপুপর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরেও আধুনিক শহর গড়ে তুলবে বাংলাদেশ সরকার।  

তিনি জানান, রাশিয়ার শুধু নভোভরোনেসে নয়, অন্যান্য পাওয়ার প্লান্টকে কেন্দ্র করেও আধুনিক শহর গড়ে উঠেছে। রূপপুরেরও স্কুল, কলেজ, হাসপতালসহ নাগরিক সুবিধার জন্য আধুনিক সব স্থাপনা গড়ে তোলা হবে। এখানে একটি মিনি ক্যান্টনমেন্ট হবে, ঈশ্বরদী বিমান বন্দরকে আধুনিকায়ন করা হবে, ইতোমধ্যে নদী বন্দর করা হয়েছে। রূপপপুরকে কেন্দ্র করে পুরো ঈশ্বরদীই বদলে যাবে। এখানে করা হবে একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন। ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আধুনিক শহরের জন্য যা যা দরকার সব করা হবে এখানে।

রাশিয়ার বর্তমান রাজনীতি সম্পর্কে জানার একটা আগ্রহ আমার ছিলো। কিন্তু আমাদের চলাফেরা মেলামেশা ছিলো মুলত সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তাদের কথা বলার ধরণ মেপে মেপে বিষয়ভিত্তিক। অর্থাৎ যে যে দায়িত্বে আছে তার ব্ইারে অন্য আলোচনায় সহজে কেউ যেতে চায় না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই মেশার সময় ও সুযোগ বলতে গেলে আমাদের ছিলো না। যাদের সঙ্গে মেশা হয়েছে তাদের নির্দিষ্ট বিষয়ের বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলতে তেমন আগ্রহও দেখা যায়নি। বিশেষ করে রাজনীতির বিষয়ে। শুধু সরকারি কর্মকর্তা নয়, সার্বিকভাবেই রুশদের রাজনীতির প্রতি আগ্রহ কমছে। মাক্সিমের কথায়ও এমনটাই জানা গেলো। ম্যাক্সিম, এ্যাঞ্জেলিনাসহ কয়েক জনের কথায় বোঝা গেলো আমাদের দেশের বা প্রতিবেশী ভারতের মানুষ যেমন পরস্পর রাজনৈতিক আলোচনায় সহজেই মেতে ওঠে এবং দ্রুত তা তীব্র থেকে জটিল রূপ নিতে পারে, রাশিয়ার মানুষ এর ধারের কাছেও নেই। আমাদের দেশে শহরে, গ্রামে, রাস্তার চায়ের দোকান থেকে অফিস আদালতে রাজনৈতিক আলোচনা-সমালোচনা বলতে গেলে প্রতিদিনের অংশ। ভারতেও মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা কমতি নেই।  

একবার শিলং থেকে ফেরার সময় ট্যাক্সি ড্রইভার রাম জীবনের সাথে কথা প্রসঙ্গে সেখানকার রাজনীতির কথা তুলতেই সে আগ্রহ ভরে আলোচনা শুরু করে। শুধু মেঘালয়ই নয় পার্শ্ববর্তী আসাম রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও আগ্রহ নিয়ে সে কথা বললো এবং তার বেশ ভালো ধারণা রয়েছে। তখন আসামে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিলো, বিধান সভার পরবর্তী নির্বাচনে বিজেপি আসতে পারে বলেও সে জানালো। সে একজন কংগ্রেসের সমর্থক এটা সে জোর দিয়ে বললো। পরের নির্বাচনে ঠিকই বিজেপিই সেখানে ক্ষমতায় এসেছে। ভারতের প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি যখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন ওই সময়টায় আমি কলকাতা ছিলাম। সেদিন কলকাতায় সর্বত্র আলোচনায় ছিলো পশ্বিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমমতা বন্দোপ্যাধায়ের তৃণমূল কংগ্রেস লোকসভায় প্রবণ মুখার্জিকে সমর্থন না দেওয়া। মির্জা গালিব স্ট্রিটে দুপুরে ফুটপাতের এক চায়ের দোকানে বিষয়টি নিয়ে কয়েক জনের তুমুল আলোচনা শুনছিলাম। এর মধ্যে একজন এসে যোগ দিয়েই বলে উঠলো ”দেখেছিস দিদি (মমতা ব্যানার্জি) কি করলো, প্রবণ বাবুকেও সমর্থন দিলো না। ” ওই দিন বিকেলে কলকাতার সাংবাদিক বন্ধু রক্তিম দাসের সঙ্গে টালিগঞ্জে তার মামার বাসায় গিয়েছিলাম। সেখানেও এই আলোচনাটি তুঙ্গে ছিলো এবং মমতা ব্যানার্জি কাজটি ভালো করলো না-এ কথাটাই ঘুরে ফিরে আসছিলো তাদের মুখে। আমাদের মতো এই পরিস্থিতি রাশিয়াতে হয়তো পাওয়া যাবে না, সেটাই মনে হয়েছে। সোভিয়েত পরবর্তী প্রেক্ষাপটে রাজনীতির প্রতি রাশিয়ার মানুষের মধ্যে একটা অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে তাদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া যায়। এ সম্পর্কে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রসঙ্গক্রমে জানার চেষ্টা করেছিলাম। কেউ কেউ কিছু কথা বললেও আগেই তারা চিন্তা করে সাংবাদিকদের সঙ্গে রাজনীতির বিষয়ে কথা বললে এ বিষয়ে লেখালেখিতে তাদের নাম উঠে আসে কি না। এক বার কথা প্রসঙ্গে রাজনীতির বিষয়ে আলোচনা তুললে একজন সরাসরি স্মরণ করিয়ে দিলো, রাজনীতি সংক্রান্ত কোনো লেখায় যেনো তাদের নাম উল্লেখ না করা হয়।  

এর মধ্যে মস্কো এবং নভোভরোনেস শহরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে ও আলাপচারিতায় বোঝা যায় রাজনীতির প্রতি বিশেষ কোনো আকর্ষণ বোধ করেন না তারা। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা কম। যার যার কজেরর প্রতিই তারা বেশি মনোযোগী। সোভিয়েত পরবর্তী সময়ে সেখানকার মানুষ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। নিজের কাজ ছেড়ে রাজনীতি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা তাদের কাছে অনেকটাই যেনো স্বাভাবিক বিষয় নয়। কথা প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম। তিনি জানান, সোভিয়েত পরবর্তী রাশিয়ার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রার ওপরেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে এবং পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে রাজনীতির প্রতি ধীরে ধীরে আগ্রহ কমে যাওয়ার বিষয়টি অন্যতম। আর এই প্রভাব সোভিয়েত পরবর্তী নতুন প্রজন্মের ওপরই বেশি পড়েছে।  

রাশিয়ার রাজধানী মস্কো এবং নভোভরোনেস শহরের দেখা গেলো মানুষের সার্বক্ষণিক কর্মব্যস্ততা। সেখানার প্রত্যেক মানুষের জীবনের গতি অনেকটাই যান্ত্রিক। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে তাদের তৎপরতা যন্ত্রের মতই। এদের প্রতি মুহূর্তের জীবনযাত্রার গতিবিধি দেখে সহজেই এটি উপলব্ধি করা যায়। এক্ষেত্রে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের সাথে তুলনা করলে রাশিয়ার মানুষের অবস্থান বিপরীত। বিশেষ করে সময়ে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতেই তারা অভ্যস্ত। সময় সচেতনতার ব্যাপারে রাশিয়ার মানুষের থেকে আমরা অনেক পেছনে বলতে হবে। এ সময় নভোভরোনেস ও রোসাটমের বেশ কিছু উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছে। সেখানেই যে কর্মসূচিতে আমরা গিয়েছি, যার সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎকারের যে সময় দেওয়া ছিলো দেখেছি তার থেকে এক মিনিটও বেশি সময় আমাদের অপেক্ষা করতে হয়নি।  

এখানে যত্রতত্র কাউকে স্মোকিং করতে দেখা যায় না। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, অফিস বা কর্মস্থলের সামনের চত্বরে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে স্মোকিং জোন। সে সব স্থানগুলোতেও একটি বিষয় বার বার নজরে এসেছে স্মোকিং জোনে যারা আসে তারা পরস্পর কথা বলার মধ্যেই স্মোকিং শেষ হওয়ার সাথে সাথে স্থান ত্যাগ করে। আলাপ দীর্ঘ বা যার সঙ্গে কথা চলছিলো তার জন্য অপেক্ষার করতে দেখিনি। প্রতিদিন সকাল ৯টায় আমরা হোটেল থেকে বের হতাম। প্রথম দিন সকালে হোটেল থেকে বের হয়ে সবাই আমরা নির্ধারিত স্থানে দাঁড়িয়ে স্মোকিং করছি। ম্যাক্সিমও আছে, তবে সে দ্রুত স্মোকিং শেষ করে ৯টার আগেই গাড়িতে উঠে যায়। গাড়ির কাছে আসতে আমাদের একটু দেরি হয় এবং গাড়িতে উঠার পর মাক্সিম আমাকে বললো- শামীম, টু মিনিট লেট। চলবে...

সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (১)
সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (২)
সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (৩)
 সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (৪)

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২১
নিউজ ডেস্ক 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।