ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (শেষ)

শামীম খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২১
সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (শেষ)

শামীম খান। বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।

সম্প্রতি তিনি রাশিয়া ভ্রমণ করেছেন। পাঠকের জন্য তিনি তুলে ধরেছেন সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আর রাশিয়ার এগিয়ে চলার খণ্ড খণ্ড চিত্র। আমরা তা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছি। আজ থাকছে এর শেষ পর্ব।

রেড স্কয়ার সংলগ্ন রাশিয়ার আরেক গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ক্রেমলিন চত্বর। রেড স্কয়ারের পশ্চিম পাশে রশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু এই ক্রেমলিন অবস্থিত। ক্রেমলিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের অফিস ও বাসভবন। ঐতিহাসিকভাবে ক্রেমলিন নামটি বিশ্বের অনেক মানুষের কাছেই পরিচিত। ১৯১৭ সালে অক্টোবর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর লেনিনের বাসভবনও ছিলো এই ক্রেমলিনে। সোভিয়েত আমলে এই ক্রেমলিন ছিলো বিশ্বের এক পরাশক্তির ক্ষমতার প্রাণকেন্দ্র, একটি বহুল আলোচিত নাম।  

বিশ্বের দুই সামরিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়েনের মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধকালে হোয়াইট হাউস (যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও অফিস) এবং ক্রেমলিনের নাম ছিলো সমানভাবে উচ্চারিত। সোভিয়েত পরবর্তী সময়ে বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে পরাশক্তির ভারসাম্যের ছন্দ পতন ঘটে। তখন ক্রেমলিনের প্রভাব অনেকটা কমলেও গত প্রায় এক দশকে তা আবার ফিরে এসেছে। সোভিয়েত আমলের শেষ দিকে ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে রেড স্কয়ার ও ক্রেমলিনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। এই রেড স্কয়ারে রয়েছে মস্কোর বিখ্যাত ঘড়ি। এখানে স্যাভিয়ার টাওয়ার বা প্যাসকায়া টাওয়ারে ১৬২৫ সালে এই বিখ্যাত ঘড়ি স্থাপন করা হয়। মোট ২৫ টন ওজনের এই ঘড়ির কাঁটা, রিম ও সময় নির্দেশক সংখ্যাগুলো তৈরিতে ২৮ কেজি স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়। ২৩৩ মিটার উচ্চতার স্যাভিয়ার টাওয়ারের চারদিকে এই ঘড়ি স্থাপন করা হয়েছে যা মস্কো শহরের সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণ।  

রেড স্কয়ারে দেখার মতো আরও রয়েছে সেন্ট ব্যাসিলস ক্যাথেড্রাল। ষোড়শ শতকে জার ইভান এটি নির্মাণ করেন। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উপাসনার জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছিলো। নানা কারুকার্য, অসাধারণ নির্মাণশৈলী ও শিল্প নৈপূণ্যের জন্য এই চার্চটি রেড স্কয়ারের আরেকটি মনোমুগ্ধকর স্থাপনা। বর্তমানে এ চার্চটি একটি জাদুঘর।  

রেড স্কয়ারে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শপিং কমপ্লেক্স। রাশিয়ার জার প্রথম আলেকসান্দর ১৮১২ সালে এই বিশাল ভবনটি তৈরি করেন। দৃষ্টিনন্দন এই ভবনটিকে অধুনিককালে শপিং কমপ্লেক্সে রূপান্তরিত করা হয়। এই রেড স্কয়ারেই রয়েছে ঐতিহাসিক মস্কো স্টেট মিউজিয়াম যেটি ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রেড স্কয়ারে আরও রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা যেসবের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকদের বার বার সেখানে ছুটে যেতে চাওয়া অস্বাভাব্কি কোনো বিষয় নয়।

১২ ডিসেম্বর সকালে মেট্রোতে আমরা রেড স্কয়ারে আসি। রেড স্কয়ার সংলগ্ন মেট্রোরেল স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমেই চোখে পড়ে সেখানকার সুসজ্জিত শিল্প নিদর্শন। মেট্রো স্টেশন জুড়ে কয়েক গজ দূরে দূরে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ভাস্কর্য। মেট্রোরেল স্টেশন থেকে উপরে উঠে বেরিয়ে রেড স্কয়ারের দিকে এগোতেই দেখা যায় শূন্যের নিচে ৫ ডিগ্রি (মাইনাস ৫) তাপমাত্রার শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে ছুটছে নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ শত শত মানুষ। মূল চত্বরে প্রবেশ করেই বিভিন্ন বয়সের মানুষ একের পর এক বিভিন্ন স্থাপনার সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন, ছবি তুলছেন। মানুষ আসছে, যাচ্ছে কিন্তু রেড স্কয়ারে ছড়ানো ছিটানো এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত মানুষের কোনো কমতি নেই। ফিরে আসার সময় মাক্সিম জানালেন, এটাই এখানকার প্রতিদিনের চিত্র।  

রেড স্কয়ারে ঘোরার সময় মনে পড়ে ভিয়েতনামের সামরিক জাদুঘরের কথা। ভিয়েতনাম সফরের দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমরা ভিয়েতনামের সামরিক জাদুঘর দেখতে যাই। ওই জাদুঘরের ভেতরে এবং উন্মুক্ত চত্বরে বিশাল এলাকা জুড়ে বিধ্বস্ত মার্কিন যুদ্ধ বিমান এফ-১৬ (তৎকালীন অত্যাধুনিক) থেকে শুরু করে আধুনিক যুদ্ধান্ত্রের ধ্বংসাবশেষ ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতার স্মৃতিহ্নি বহন করে চলেছে। জাদুঘর চত্বরে প্রবেশ করে দেখা যায়, সোভিয়েত নির্মিত মিগ-২৯ বিমান দাঁড়য়ে আছে। এটি ভিয়েতনাম যুদ্ধে ব্যবহৃত হয় এবং এই বিমানটি দিয়ে কয়েকটি মার্কিন জঙ্গি বিমান ধ্বংস করা হয় বলে এটিকে জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো। তৎকালীন বিশ্বে দুই পরাশক্তির একটি সোভিয়েত রাশিয়া বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে জাতিসংঘে ভেটো, নৌবহর পাঠানোসহ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সমুজ্জ্বল। মুক্তিযুদ্ধে অপর পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে নৌবহর পাঠিয়েছিলো, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের পক্ষে সরাসরি অবস্থান না নিলে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় আর কতদিন প্রলম্বিত হতো বা যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি ও পরিণতি কি হতো সে প্রশ্ন থেকেই যায়।  

সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (১)
সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (২)
সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (৩)
 সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (৪)
সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (৫)
সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (৬)
সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (৭)

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২১
নিউজ ডেস্ক 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।