ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

বিমানের চোখ ইউরোপের আকাশে

মাছুম কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৪ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
বিমানের চোখ ইউরোপের আকাশে

ঢাকা: নতুন উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের আকাশপথে নেটওয়ার্ক বাড়াতে চায় রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তাই বাহরাইনের রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা গাল্ফ এয়ারের সঙ্গে কোড শেয়ারিং চুক্তি করতে যাচ্ছে বিমান।

মূল কথা, ইউরোপের আকাশে চোখ পড়েছে বিমানের। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতিও নিচ্ছে সংস্থাটি।

গাল্ফ এয়ার বর্তমানে ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার প্রায় ৫০টি গন্তব্যে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে। একটা সময় এ বিমান সংস্থাটি ছিল বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কাতার ও ওমানের একমাত্র আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোড শেয়ারিং বাস্তবায়িত হলে এখন যে রুটগুলোয় ফ্লাইট চালানোর অনুমোদন আছে, কিন্তু ফ্লাইট নেই, সেই রুটগুলোয় নিজেদের নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারবে বিমান।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেছেন, এটা (কোড শেয়ারিং) বিমানের জন্য খুব ভালো হবে। কারণ, অনুমোদন থাকলেও যে রুটে বিমানের ফ্লাইট যাচ্ছে না বা যেতে পারছে না, সেখানে চলাচল শুরু হলে রুটটি আমাদের জন্য ডেভেলপ হবে। এটি চালু হলে আন্তর্জাতিক অন্য রুটগুলোতেও বিমান সুবিধা পাবে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

নজরুল আরও বলেন, এ রুটে নিয়মিত চলাচল শুরু হলে মানুষ বিমানকে চিনতে শুরু করবে। টিকিট কাটতে গেলে বিমানের টিকিট কাটতে হবে। উড়োজাহাজ একটাই হবে কিন্তু টিকিট হয়তো বিমান ইস্যু করবে। নারিতায় যদি বিমান ফিফথ ফ্রিডম পায়, তাহলে অস্ট্রেলিয়া যাওয়াটাও ভালো সিদ্ধান্ত হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমান গত কয়েক বছর ধরেই বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কোড শেয়ারিং চুক্তি করার চেষ্টা করছে। এ তালিকায় জাপান এয়ার ও এয়ার কানাডার মতো এয়ারলাইন্সের নামও আছে। তবে সেগুলো এখনও সফলতার মুখ দেখেনি। ইতোমধ্যে কানাডার টরন্টোয় ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বিমান। এছাড়া, জাপানের নারিতায় বহুল কাঙ্ক্ষিত ফ্লাইট শুরুর কথা রয়েছে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে।

এ বিষয়ে বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, বিমানের সঙ্গে এই প্রথম বাংলাদেশের ইতিহাসে কোড শেয়ারিং হচ্ছে। থার্ড টার্মিনাল হচ্ছে বা কক্সবাজারের বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করার চেষ্টা হচ্ছে। বাংলাদেশকে যদি আমরা হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, তাহলে বিমানকেই এগিয়ে আসতে হবে।

শফিউল আজিম বলেন, আমাদের সঙ্গে গাল্ফ এয়ারের এই প্রথম কোড শেয়ারিং হচ্ছে। আমাদের ইউরোপে প্যাসেজ না থাকলেও এই কোড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে আমরা ইউরোপে আমাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে পারব। তাদের উড়োজাহাজে আমাদের বোর্ডিং পাস নিয়ে যাত্রীরা যেতে পারবেন।

কোড শেয়ারিং কী?
কোড শেয়ার হলো দুটি এয়ারলাইন্সের মধ্যে একটি জোট। এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে এ ধরনের চুক্তি থাকলে একজন যাত্রী কোনো একটি এয়ারলাইন্সের টিকিট কেটেই অন্য এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারেন। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স এই পদ্ধতিতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

সিডনি-লস এঞ্জেলেসেও যেতে চায় বিমান
ঢাকা-নারিতা ফ্লাইট শুরু হলে জাপান হয়ে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে পাখা মেলতে চায় বিমান। এ জন্য জাপানের কয়েকটি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কোড শেয়ার চুক্তি করার আলোচনা চলছে বলে জানান বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

শফিউল আজিম বলেন, শুধু নারিতা নয়, নারিতা থেকে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের সঙ্গে ইন্টারলাইন করতে চায় বিমান। এ ক্ষেত্রে অন্য এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে কোড শেয়ারের সম্ভাবনা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। বিমানের চোখ এখন আমেরিকার ওয়েস্টকোস্ট ক্যালিফোর্নিয়া বা লস এঞ্জেলেসের দিকেও।

শফিউল আজিম আরও বলেন, এমনকি আমরা চেষ্টা করছি নারিতা থেকে সিডনিতে কোনোভাবে আমাদের ফ্লাইট অপারেশন করা যায় কিনা। জাপানের টিম ঘুরে গেছে কয়েকদিন আগে। আমরা এটা নিয়ে ডিটেইল আলোচনা করেছি। এটার প্রফিটিবিলিটি, যাত্রীদের প্রেফারেন্স ও কানেক্টিভিটি নিয়ে (আলোচনা হয়েছে)। আমরা বিমানের কানেক্টিভিটি ৩৬০ ডিগ্রি করতে চাই। শুধু পূর্ব-পশ্চিমে নয় বা শুধু উত্তর-দক্ষিণে নয়।

বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে পয়েন্ট টু পয়েন্ট সেবা দিয়ে থাকে বিমান। এক সময় অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ফ্লাইট চলাচল করলেও এখন সেগুলো বন্ধ। একই অবস্থা ইউরোপের ক্ষেত্রেও। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বিমানের ফ্লাইট আছে বর্তমানে শুধু লন্ডনে। আগে ম্যানচেস্টার, রোম, ফ্রাঙ্কফুর্টে ফ্লাইট থাকলেও সেগুলো এখন বন্ধ।

বর্তমানে বিমানের বহরে লম্বা দূরত্বে উড়তে সক্ষম অন্তত ১০টি উড়োজাহাজ থাকলেও রুট না থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই সেগুলোর সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি বোয়িং-৭৮৭ ও চারটি বোয়িং-৭৭৭ মডেলের উড়োজাহাজ। এগুলো প্রত্যেকটি টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম।

এর বাইরেও বিমান সম্প্রতি ইউরোপীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের কাছ থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে দুটি এয়ারবাস কেনার সিদ্ধান্ত অনেক দূর এগিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে সেটি ইউরোপে বিমানের কাঙ্ক্ষিত নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
এমকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।