ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

বিমানে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা উপেক্ষিত

বসেনি রাঙাপ্রভাত, অরুণআলো, আকাশপ্রদীপ, পালকির নামফলক

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৬ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৫
বসেনি রাঙাপ্রভাত, অরুণআলো, আকাশপ্রদীপ, পালকির নামফলক

ঢাকা: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে দফায় দফায় উপেক্ষিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাশা ও নির্দেশনা। অন্তত দুই দফা নিজে তাগীদ দেওয়ার পরেও বাংলাদেশ বিমানের চারটি বোয়িং উড়োজাহাজের ভিতরের দেয়ালে নামফলক বসেনি।



বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এই চারটি বোয়িং ৭৭৭ এয়ারক্র্যাফট আনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সেগুলোর নাম দেন পালকি, অরুণ আলো, আকাশ প্রদীপ ও রাঙাপ্রভাত। এই নামগুলোই উড়োজাহাজের ভেতরে বসানো দেখতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
 
দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এক্ষেত্রে বিমান চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অবঃ) জামাল উদ্দিন আহমেদেরও ছিলো একটি নির্দেশনা। এক বছরেরও আগে দেওয়া সে নির্দেশনাও উপেক্ষিত হচ্ছে বিমানের প্রকৌশল বিভাগে।

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নামগুলো ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে বিভিন্ন মহলে। আর সুন্দর নাম দিতে পেরে তিনি নিজেও খুশি যা বিভিন্ন সময়ে বক্তৃতায় প্রকাশ করেছেন। একাধিকবার উড়োজাহাজের ভিতরে যাত্রীদের সামনে যাতে প্রতিটি ফ্লাইটের নামফলক বসানো থাকে সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।

সবশেষ, প্রধানমন্ত্রী শেখ ‍হাসিনা এ বিষয়ে কথা বলেন গত ৫ এপ্রিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য নতুন দুটি উড়োজাহাজের উদ্বোধন করতে গিয়ে। সেদিন ভিভিআইপি টার্মিনালে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করছিলেন অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলের জন্য দুটি এয়ারক্র্যাফট। এই দুটিরও নাম দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে।

‘ময়ূরপঙ্খী’ ও ‘মেঘদূত’ এই দুই নামের উড়োজাহাজ দুটি অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে চলবে তারই উদ্বোধন করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিনও তার দেওয়া নামের প্রশংসা হচ্ছিলো। এরপর নিজের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সে প্রসঙ্গ টেনেই বলেছিলেন, ‘নামের প্রশংসা হয়, কিন্তু উড়োজাহাজে উঠে কখনোই জানতে পারিনা কোনটিতে চড়লাম। ’

এসময় প্রতিটি উড়োজাহাজের ভিতরেই নামগুলোর ইংরেজি অর্থসহ প্লেট বসানো প্রয়োজন বলেও সেদিন নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি এও বলেন, ‘উড়োজাহাজের গায়ে বাইরে নামগুলো খুব ছোট করে লেখা হয়েছে এগুলো বড় করে লেখা যেতে পারে। ’

তবে এরপর দুই মাস পার হয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সেদিনের বক্তব্যে আমলেই নেয়নি বিমান কর্তৃপক্ষ।

বিমানের জনসংযোগ বিভাগে কথা বললে এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) খান মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ওই দিনের কর্মসূচিতে নিজে অনুপস্থিত থাকায় বিষয়টি তার জানা নেই।

বাংলানিউজের পক্ষ থেকে ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার ওপর প্রকাশিত খবরে ওই বিষয়ে তার বক্তব্য নজরে আনা হলে বিভাগের কর্মকর্তাদের ডেকে জিএম নিশ্চিত হন প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেছিলেন।

বিমানের উর্ধ্বতনদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর নিজের এমন একটি বক্তব্য কিভাবে উপেক্ষিত থাকলো তা জানতে চাইলে কোনও উত্তর দেন নি জনসংযোগ বিভাগের জিএম।

তবে তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে বছর খানেক আগে থেকেই কাজ চলছে কিন্তু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

গত ৫ এপ্রিলের আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্লাইটগুলোর ভেতরে নাম ফলক বসানোর প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, পরে সে অনুযায়ী বিমান চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত নির্দেশ দেন। এরপর জনসংযোগ বিভাগ থেকে উদ্যোগ নিয়ে নকশা চুড়ান্ত করে সিঙ্গ‍াপুর থেকে নাম নামফলকগুলো তৈরি করেও আনা হয়। তবে এখনও ওগুলো কেনো লাগানো হয়নি তা জনসংযোগ বিভাগের জানা নেই।

এদিকে, দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে এপ্রিলে তার এই আগ্রহের কথা প্রথম জানান। পরে ৫ মে বিমান চেয়ারম্যান একটি নির্দেশনা পাঠান। বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ নামফলক বসানোর সম্ভব্যতা নিশ্চিত করলে জনসংযোগ বিভাগ সে অনুযায়ী উদ্যোগ নেয়।

খোঁজ খবর নিয়ে সিঙ্গাপুরের এঙ্গ লঙ্গ মেটালিক (ইএলএম) নামের একটি কোম্পানির কাছ থেকে গোল্ড প্লেটেড ৮টি নাম ফলক বানিয়ে আনা হয়। প্রতিটি উড়োজাহাজের বিজনেস ও ইকোনমি উভয় শ্রেণির সামনে একটি করে প্লেট বসানোর জন্যই এগুলো তৈরি হয়। প্রতিটি প্লেট ১৪ ইঞ্চি/ ২২ ইঞ্চি মাপের। যার খরচ পড়ে প্রতিটিতে ৪৭০ ডলার করে মোট ৩৭৬০ ডলার। এছাড়া জনসংযোগ বিভাগের জিএম নিজেই সিঙ্গাপুর সফর করে কাজটি সুসম্পন্ন করার বিষয়গুলো চূড়ান্ত করেন।

সূত্র জানায়, নাম ফলকগুলো তৈরি হয়ে আসার পরে তা বিমানের প্রকৌশলী বিভাগে দেওয়া হয়। কিন্তু এগুলো আনার পরে তাদের নজরে আসে কাঠের ফেমের নাম ফলকগুলো বসালে তা উড়োজাহাজের ভেতরে শব্দ তৈরি করবে। বা খুলেও পড়তে পারে। এ কারণে সিদ্ধান্ত হয় ফ্রেম খুলে কেবল প্লেটগুলো পেস্ট করে লাগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে সে সিদ্ধান্তও এ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা যায়নি।

প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় দফায় এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করার আগেই কাজটি চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিলো জানিয়ে খান মোশাররফ বলেন নিজেই এই নামফলকগুলোর নকশা করে, কবিতায় নামগুলো তুলে ধরে সেগুলো সিঙ্গাপুর থেকে তৈরি করে আনেন। তবে শেষ পর্যন্ত কেনো ফলকগুলো উড়োজাহাজের ভিতরে বসানো গেলো না তা তার জানা নেই।

এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশলী বিভাগের পরিচালক দেবব্রত বনিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। বাংলানিউজের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে আরেকটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, প্রকৌশল বিভাগ ওই নাম ফলকগুলো বসানোর প্রাথমিক আলোচনায় এর কারিগরি দিকগুলো নিশ্চিত করেই তা চূড়ান্ত করেছিলো।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি বড় কোনও ইস্যু নয় এর জন্য প্রকৌশল বিভাগকে উদ্যোগী হতে হবে। তবে উড়োজাহাজের ভেতরে এই প্লেট বসানোর আগে অবশ্যই বোয়িং’র অনুমোদন প্রয়োজন রয়েছে।

বাংলাদেশ সময় ০৯৫৬ ঘন্টা, জুন ০৮, ২০১৫
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।