ঢাকা: উড়োজাহাজের ভেতরের স্পর্শকাতর স্থান ব্যবহার করে আবারও স্বর্ণের বড় চালান পাচারের পরিকল্পনা করছে চোরাকারবারি সিন্ডিকেটগুলো। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের এমন তথ্যের উপর ভিত্তি করে উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর জন্য এয়ারক্রাফট অপারেটিং কমিটিকে (এওসি) পরামর্শ দিয়েছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন।
এর আগেও বিমানের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও উড়োজাহাজ কর্মীদের ম্যানেজ করে বিশেষ কায়দায় প্লেনের স্পর্শকাতর অংশে ভরে বড় বড় স্বর্ণের চালান নিয়ে এসেছে চোরাকাবারি চক্রগুলো। তবে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত শুল্ক, শুল্ক গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় ধরা পড়ে বেশ কয়েকটি বড় চালান। চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকায় গ্রেফতার হয়েছেন প্লেনের পাইলট, কেবিন ক্রু থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মকর্তা পর্যন্ত। সম্প্রতি কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির কারণে এই প্রবণতা কমে গেলেও আবারও উড়োজাহাজের স্পর্শকাতর অংশ ব্যবহার করে স্বর্ণের চালান নিয়ে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে একটি চক্র।
সম্প্রতি এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন লিখিত আকারে এওসিকে এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন শিমুল বাংলানিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
সূত্র জানায়, উড়োজাহাজের যে সমস্ত জায়গা সচরাচর কখনও তল্লাশির আওতায় আসে না বলে ধারণা করা হয় সে সমস্ত স্পর্শকাতর জায়গাকে স্বর্ণ রাখার আদর্শ স্থান হিসেবে নির্বাচিত করে স্বর্ণ চোরাকারবারিরা। পরে উড়োজাহাজের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা, পাইলট, কেবিন ক্রু এমনকি লোডারদের ম্যানেজ করে সেখানে ভরা হয় স্বর্ণ।
এর মধ্যে কিছু চালান ধরা পড়লেও বেশিরভাই চালানই নিরাপদে বিমানবন্দরের সীমানার বাইরে চলে গেছে বলে ধারণা করা হয়।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানা যায়, উড়োজাহাজের সবচেয়ে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা মনে করা হয় কার্গো হোলের ভেতর পাশের প্যানেল বক্স। এখানে ১২টি পর্যন্ত প্যানেল বক্স থাকে। এগুলোর কাভার প্লেট আঁটা থাকে স্ক্রু দিয়ে। এই প্যানেল বক্সের ভেতর উড়োজাহাজের যাবতীয় ইউটিলিটি পাইপ এবং অন্যান্য সংবেদনশীল কানেক্টিভিটি আউটলেট থাকে যেখানে উড়োজাহাজের টেকনিশিয়ান ছাড়া অন্যরা যেতে পারেন না। এজন্য জায়গাটিকে উড়োজাহাজের খুবই সংবেদনশীল স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এছাড়া উড়োজাহাজের ওয়াশরুমকেও স্বর্ণ পাচারের নিরাপদ জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর পাশাপাশি কমোডের পাশ, লুকিং গ্লাসের পেছন, গ্যাস মাস্ক সকেট এবং যাত্রী আসনের নিচের স্থানও স্বর্ণ পাচারের আদর্শ স্থান।
প্রতিবেদনে প্যানেল বক্স থেকে মালামাল নামানোর সময় একাধিক সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারির পরামর্শ দেয়া হয়। পাশাপাশি হ্যাঙ্গারে নিয়ে এসে উড়োজাহাজ পরিষ্কারের সময় সেখানে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিরও সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পূর্বে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ১২৪ কেজি স্বর্ণের চালান নিয়ে আসা হয়েছিলো প্যানেল বক্সের ভেতর করে। পরে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ও কাস্টমস যৌথ অভিযান চালিয়ে স্বর্ণের চালানটি উদ্ধার করে। এছাড়াও সিটের পেছনে, গ্যাস মাস্ক সকেট, কমোডের ভেতরে বিশেষ কায়দায় রাখা অবস্থায়ও স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনা রয়েছে।
সিনিয়র এএসপি আলমগীর হোসেন শিমুল বাংলানিউজকে বলেন, এখন থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে আবারও বড় বড় চালান নিয়ে আসবে চোরাচালান চক্র।
তিনি বলেন, বিপুল অর্থের লোভ দেখিয়ে এক শ্রেণীর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চোরাকারবারিরা নিরাপদে এই প্রক্রিয়ায় স্বর্ণ পাচার করে থাকে।
আবার ওই চক্রটি এই পাঁয়তারা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে আমরা সতর্ক রয়েছি। উড়োজাহাজের ওই সব স্থানকে বিশেষ নজরদারির আওতায় আনার জন্য আমরা সুপারিশ করেছি।
শুল্ক, শুল্ক গোয়েন্দা ও এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের সূত্র জানায়, গত দুই বছরে বিমানবন্দরে এক টনেরও বেশি স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২৪ কেজি, ১১৪ কেজি, ৬০ কেজিসহ বড় বড় চালানগুলো উড়োজাহাজের অভ্যন্তর থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় উড়োজাহাজের পাইলট, কেবিন ক্রু, কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়েছেন। আবার অনেকেই গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
আইএ/আরআই