ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

সুপ্রিম কোর্টের আদেশও মানছেন না যমুনা ব্যাংক এমডি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৯
সুপ্রিম কোর্টের আদেশও মানছেন না যমুনা ব্যাংক এমডি

ঢাকা: এক গ্রাহকের রাখা অর্থ (এমটিডিআর) প্রদানে প্রথমে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে আপিল বিভাগেও সেই আদেশ বহাল ছিলো। কিন্তু সেই আদেশ মানলেন না যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল আলম। অথচ সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্ট একটি “কোর্ট অব্ রেকর্ড” হইবেন এবং ইহার অবমাননার জন্য তদন্তের আদেশদান বা দণ্ডাদেশদানের ক্ষমতাসহ আইন-সাপেক্ষে অনুরূপ আদালতের সকল ক্ষমতার অধিকারী থাকিবেন।’

উচ্চ আদালতের আদেশের পরও নিজের অর্থ না পেয়ে সেই গ্রাহক দ্বারস্থ হলেন হাইকোর্টের। মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) হাইকোর্ট এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে যমুনা ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল আলমকে তলব করেন।

আগামী ২৯ জানুয়ারি তাকে স্বশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে। বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সুব্রত ব্যানার্জি ও এ আর এম কামরুজ্জামান কাকন।

২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট এ বিষয়ে ওই গ্রাহকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অবমাননার রুলও জারি করেছিলেন।

ওই সময় আলতাফ হোসেন জানিয়েছিলেন, ২০০৫ সালে ৫ বছরের জন্য তালেবুর নুর নামের এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী যমুনা ব্যাংকের নওয়াবপুর শাখায় ৫১ লাখ টাকার একটি মুদারাবা সঞ্চয়ী (এমটিডিআর) হিসাব খোলেন। এই তালেবুর নুরের সঙ্গে এআইএম হাসানুল মুজিব যৌথভাবে ২০০৬ সালে তুরস্ক থেকে ২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করেন। কিন্তু ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় তালেবুর নুর দেনাদার হন। এ কারণে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে তার ওই যমুনা ব্যাংকের ৫১ লাখ টাকার মালিকানা হাসানুল মুজিবকে দেন। এরপর ২০১১ সালে হাসানুল মুজিব টাকা তুলতে যমুনা ব্যাংকের নওয়াবপুর শাখায় আবেদন করেন। কিন্তু ব্যাংক টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত শেষে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়।  

প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল মালিককে হাজির করতে হবে অথবা বিষয়টি যমুনা ব্যাংক নিষ্পত্তি করবে। এরপর টাকার জন্য হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন হাসানুল মুজিব। এ রিট আবেদনের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে রিট আবেদনকারীকে টাকা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে যমুনা ব্যাংক। কিন্তু আদালত কোনো স্থগিতাদেশ দেননি। এ অবস্থায় টাকা চেয়ে যমুনা ব্যাংকের কাছে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান হাসানুল মুজিব। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় তিনি আদালত অবমাননার আবেদন করেন।  

মঙ্গলবারের আদেশের পর কামরুজ্জামান কাকন বলেন, টাকা প্রদানের নির্দেশের পর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলে গেলেও সাড়া পায়নি যমুনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আপিল বিভাগে তাদের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।  

তারপরও টাকা না পেয়ে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলায় যমুনা ব্যাংকের এমডিকে তলবের আবেদন করেন হাসানুল মুজিব। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২৯ জানুয়ারি যমুনা ব্যাংকের এমডিকে তলব করেছেন।

দেশের আর্থিক খাতে অন্যতম আলোচিত বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় যে পাঁচটি ব্যাংকের নাম এসেছিল, তার মধ্যে ছিল যমুনা ব্যাংকের নামও।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৯
ইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।