ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মনোনীত হওয়ার ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে কারাগারে যেতে হলো মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। তার আগে ভারমুক্ত হয়ে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হওয়ায় আদালতকক্ষেই মির্জা ফখরুলকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আইনজীবীরা।
ফলে অভিনন্দনের ফুল নেওয়ার পর পরই কারাগারে যেতে হয়েছে বিএনপির নতুন এই মহাসচিবকে।
বুধবার (৩০ মার্চ) বেলা সাড়ে এগারটায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসা মির্জা ফখরুলকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব মনোনীত করার ঘোষণা আসে। তখন তিনি পল্টন থানার নাশকতার তিন মামলায় ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করে শুনানির অপেক্ষায় ছিলেন। আদালতকক্ষে বসেই তিনি অন্যদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হওয়ার খবর পান।
দুপুর ১২টায় আত্মসমর্পণ ও জামিনের আবেদনের শুনানি গ্রহণ করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম নবী। শুনানি শেষে দুপুর পৌনে ১টায় দুই মামলায় ফখরুলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট।
ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশের পর আদালতকক্ষেই ফুলের তোড়া দিয়ে মির্জা ফখরুলকে শুভেচ্ছা জানান জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ আলম, মোহসীন মিয়াসহ ২০/২৫ জন আইনজীবী।
আইনজীবী ফোরামের নেতা ও বিএনপির বিদায়ী কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব ঘোষণা আসার সময় মির্জা ফখরুল আদালতের এজলাসকক্ষে বসা ছিলেন। জামিন পাওয়া মহাসচিবকেই আমরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাই।
এর আগে সকাল সাড়ে দশটায় সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে পল্টন থানার নাশকতার তিন মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন ফখরুল। ওই তিন মামলার মধ্যে দু’টিতে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। অন্য মামলাটিতে জামিন পেয়েছেন তিনি।
মির্জা ফখরুলের আইনজীবী জয়নুল আবেদিন মেজবাহ জানান, পল্টন থানার নাশকতার ৪/১-২০১৫ নম্বর মামলায় জামিন দিলেও ৫/১-২০১৫ ও ৭/১-২০১৫ নম্বর মামলায় জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মির্জা ফখরুলকে ১৫ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আপিল বিভাগ।
২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনের সময় পল্টন থানার নাশকতার ওই তিন মামলায় মির্জা ফখরুলকে হাইকোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়ে রুল জারি করেছিলেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলে গেলে আপিল বিভাগ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন এবং জামিনের মেয়াদ শেষে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। এছাড়াও হাইকোর্টকে রুল নিষ্পত্তি করতে বলেন।
হাইকোর্ট গত বছরের ২৪ নভেম্বর রুল নিষ্পত্তি করে ওই তিন মামলায় মির্জা ফখরুলকে তিন মাসের জামিন দেন।
তবে ফখরুলের আইনজীবীদের দাবি, রুল নিষ্পত্তির মাধ্যমে সাধারণত মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত জামিন হয়। কিন্তু এখানে মাত্র তিন মাসের জামিন দেওয়া হয়েছে। এ কারণে হাইকোর্টের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে মির্জা ফখরুল গত ০৭ জানুয়ারি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এ আবেদনের শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আবেদনটি ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এ আবেদনের শুনানি চলাকালে সিলেটে বিচার বিভাগ নিয়ে মির্জা ফখরুল মন্তব্য করেছেন বলে নজরে এলে তার কাছে ব্যাখ্যা চান পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ।
২৯ ফেব্রুয়ারি ফখরুলের ব্যাখ্যাসহ জামিনের আবেদনের শুনানি শেষে ১৫ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৬
এমআই/এএসআর