ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বিএনপি

সরকার খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে: ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯
সরকার খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে: ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটানোর মাধ্যমে অকালে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না করে অসুস্থ অবস্থায় কয়’দিন পর হুইল চেয়ারে করে আদালতে হাজির করে মানসিকভাবে হেনস্থা করা এই সরকারের একটি ষড়যন্ত্রের অংশ বলে তিনি মনে করেন।  

মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

 

মির্জা ফখরুল বলেন, অত্যন্ত ক্ষোভ ও আশঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করছি, জনগণের ভালবাসায় সিক্ত, জনগণের সমর্থনে নির্বাচিত তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দুইবারের বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাজা দিয়ে একটি পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশে দীর্ঘ একবছরের বেশি সময় ধরে।

তিনি বলেন, আপনারা সবাই জানেন তিনি যখন কারাগারে গিয়েছিলেন তখন সুস্থ অবস্থায় গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে কারাগারে গিয়েছিলেন। এরপরে দেখলাম তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। গত প্রায় সাড়ে তিন মাস দেশনেত্রীর অসুখগুলো আরও বেড়েছে। বাম কাঁধে ব্যথা বেড়েছে। ডান কাঁধে নতুন করে ব্যথা হচ্ছে। বাম-বাহু ও কব্জিতে ব্যথা অনেক বেড়েছে। ফলে কারও সাহায্য ছাড়া তিনি দাঁড়াতে কিংবা চলতে পারছেন না। প্রচণ্ড ব্যথা ও কাঁপুনির জন্য তিনি হাত দিয়ে কিছু ধরেও রাখতে পারছেন না।

আদালতের নির্দেশে করা মেডিকেল বোর্ড সাড়ে তিনমাস পরে গত পরশু আদালতের নির্দেশে তাকে পরীক্ষা করতে গিয়েছিল। তারা পরীক্ষা করতে গিয়ে বিস্মিত হয়েছেন, গত সাড়ে তিনমাসে তার ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা হয়নি। এক্স-রেও করা হয়নি। ব্লাড প্রেসার মাপা হয়নি। অর্থাৎ কোনো চিকিৎসাও করা হয়নি।

তিনি বলেন, আগে তার পরিবার সদস্য প্রতি সপ্তাহে দেখা করতে পারতেন। এখন ১৫ দিনের আগে কোনো মতে দেখা করতে দেওয়া হয় না। দলের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে ইতোপূর্বে কয়েকবার দেখা করেছি। চারমাস ধরে দলের পক্ষ থেকে কাউকে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এমনকি তার আইনজীবীরাও সাক্ষাতের অনুমতি পাচ্ছেন না।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরানোর জন্য দীর্ঘকাল ধরে পরিকল্পনা করে আসছে। তাকে একটার পর একটা করে মামলাগুলো দেওয়া হচ্ছে, এর কোনোটার কোনো ভিত্তি নেই। ইতোমধ্যে যে তিনি জামিন পেয়েছিলেন তারও কোনো সুবিধা তাকে গ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। আপনারা জানেন প্রায় ৩০টি সম্পূর্ণ সাজানো মামলা। তার বিরুদ্ধে দিয়ে একটার পর একটা নিয়ে আসা হয় আর লোয়ার কোর্টে গেলে অনেক দিন পরে আবার তারিখ দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, আজকে দেশবাসীর কাছে জানাতে চাই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কোনো সরকারের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ তার প্রাপ্য নয়। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তার নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। বিলম্ব করলে দেশনেত্রীর যদি কোনো শারীরিক ক্ষতি হয়, তার সব ধরনের দায় দায়িত্ব এই সরকারের, যারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় তাদের গ্রহণ করতে হবে। তারা যে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে সেই রাজনীতির জন্য তারা দায়ী থাকবে।

অবিলম্বে সু-চিকিৎসার দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তার চিকিৎসার সব ধরনের ব্যয়ভার দলের পক্ষ থেকে বহন করতে রাজি আছি।

খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলেছি খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে ও তার সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দু’বারের বিরোধীদলীয় নেত্রী। এখনও তিনি এই দেশের সর্ববৃহত রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। তার নিরাপত্তা, চিকিৎসা, ন্যায়বিচার তার প্রাপ্য।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন,  প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯
এমএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।