বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
বিএনপির এ নেতা বলেন, প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সমতাভিত্তিক সুসস্পর্ক চাই। কিন্তু, সরকার যা করছে তাতে দেওয়া-নেওয়ার বিষয় নেই, আছে শুধু দেওয়ার।
দেশের স্বার্থবিরোধী এসব চুক্তির সমালোচনার জন্য বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে জীবন দিতে হয়েছে মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ববিরোধী চুক্তির প্রতিবাদ করায় গত ৬ অক্টোবর জীবন দিতে হয়েছে বুয়েটের ছাত্র ফাহাদকে। তার পুরো বক্তব্যটি বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে। তাই ফাহাদ বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর। তার এই নির্মম মৃত্যু বৃথা যেতে পারে না। বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। ফাহাদের বিদেহী আত্মা সেদিনই তৃপ্ত হবে, যেদিন জনগণের নির্বাচিত সরকার দেশের স্বার্থ-বিরোধী সব চুক্তি বাতিল করবে।
‘জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়, এমন একটি শক্তি যখন কৌশলে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তখন তার পরিণতি দেশ ও দেশের জনগণের জন্য কতটা ভয়াবহ ও ক্ষতিকারক হয়, তার সাম্প্রতিক প্রমাণ প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের ফলাফল। এ সফরে চুক্তির মাধ্যমে সরকার ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার সাব্রুম শহরের জনগণের জন্য ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর নির্বিঘ্নে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। বাংলাদেশের সমূদ্র উপকূলে যৌথ পর্যবেক্ষণের জন্য রাডার বসানোর অনুমতি দিয়েছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশ থেকে এলপিজি গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েছে। অথচ বহু বছর ধরে তিস্তা ও ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার ব্যাপারে শুধু আলোচনাই করে চলেছে। এসব নিজ দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে শক্তিমান প্রতিবেশীকে খুশি করে ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখার সাময়িক ও ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র। ’
সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে ক্ষোভের সঙ্গে এ নেতা বলেন, ইতোমধ্যেই দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থবিরোধী এসব চুক্তির প্রতিবাদে দেশবাসী ফুঁসে উঠেছে। সচেতন ছাত্রসমাজ আন্দোলনে সোচ্চার হয়েছে। সমালোচনায় ভীত সরকার তার দলীয় লাঠিয়ালদের দিয়ে ফেসবুকে প্রতিবাদী পোস্ট দেওয়ার জন্য বুয়েটের মেধাবী ছাত্র ফাহাদকে খুন করেছে। কিন্তু, এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড আন্দোলনের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে মাত্র। কাউকে ভীত করতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার (৯ অক্টোবর) ভারত সফরপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সরকারের বিপুল সাফল্য ও বিএনপি সরকারের ব্যাপারে যেসব সমালোচনা করেছেন তা অবান্তর ও অসত্য দাবি করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, অনেক বিষয়ের মধ্যে আজ শুধুমাত্র গঙ্গা চুক্তি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভারত সফর নিয়ে তিনি যেসব কথা বলেছেন, সে ব্যাপারে সত্য কথা জানাতে চাই। প্রকৃতপক্ষে ৭৫-এর আগে গঙ্গার পানি নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি হয়েছে ১৯৭৭ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে। এ চুক্তিতে যে গ্যারান্টির ধারা ছিল, তা ১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়। যার ফলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ভারত সফরের সময় গঙ্গার পানির কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাও অসত্য।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
এমএইচ/এইচজে