ঢাকা: বাংলাদেশে একটা উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেন জাপানি নাগরিক নাকানি হিরোইসি। বইমেলা ঘুরে দেখতে দেখতে বিকেলে মেলায় কথা হয় তার সঙ্গে।
গল্প-কবিতা, প্রবন্ধ-উপন্যাসসহ বিচিত্র বিষয়ে সৃজনশীল বইয়ের সম্ভার নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাঠক-লেখকদের যে অপূর্ব মিলনমেলা শুরু হয়েছিলো, বসন্ত-সন্ধ্যায় আবেগ ভালোবাসায় ভাঙলো সেই মিলনমেলা। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে কবি-সাহিত্যিক, লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের ভাববিনিময়, মিথস্ক্রিয়ায় এই বইমেলা হয়ে উঠেছিলো বাঙালির প্রাণের মেলা।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ছিলো মেলার শেষ দিন। এদিন বিকেলে বইমেলা প্রাঙ্গণ ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। শেষ বিকেলে বই কিনে ঘরে ফেরার আনন্দে উদ্বেল ছিলেন পাঠকরা৷ বইমেলা শেষ হয়ে গেলেও যেন এর রেশ রয়ে যাবে, অগণিত পাঠকমনে৷ শিশু কিশোর থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ পাঠক তাদের পছন্দের বইটি কিনে কিছুক্ষণ আড্ডা দেন বইমেলা প্রাঙ্গণে।
স্বামীকে নিয়ে বগুড়া থেকে এসেছিলেন বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা মজুমদার। কথা হলে বলেন, ‘মেলার শেষদিনেই আসার ফুরসত পেলাম। আমরা রচনাসমগ্র কিনে নেবো বেশকিছু। পাশাপাশি মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিশোর সমগ্র কিনে উপহার দেব ছোটবোনকে। ’
এ বছর অমর একুশে বইমেলায় নৃ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে তরুণ লেখক কর্মকার অনুপ কুমার ও হাসান মনির ছোট গল্প সংকলন ‘অদ্বৈত’। নৃ প্রকাশনের স্টলে দেখা পাওয়া গেলো অনুপের। তিনি বলেন, ‘একজন গল্পকার তার নিজের অন্তর্চক্ষু দিয়ে উপলব্ধি করা জীবনের অভিজ্ঞতাকে তার গল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন। এ কথা একেবারেই অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, গল্পের জগতের সকল চরিত্র ও ঘটনা বাস্তবে থাকুক বা নাই থাকুক, প্রত্যেক লেখক তার গল্পে নিজের পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের উপলব্ধি ও জীবন-অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নানা ব্যঞ্জনার মাধ্যমে চরিত্রের বর্ণনা ও কাহিনীর বিস্তার ঘটান। ’
এবারের বইমেলা নিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘কোভিড মহামারি পরবর্তীকালে একমাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা আয়োজন সত্যিই আমাদের জন্য বড়ো একটি সফলতা। বিন্যাস ও আঙ্গিকগত দিক নিয়ে এবারের বইমেলা সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে। ’
প্রথমা’র প্যাভিলিয়নের কথা হয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘২০২১-২২ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে মেলাটি বেশ ভালো হয়েছে। তবে বইমেলা আয়োজনে সরকারকে আরও বেশি সহযোগিতা করতে হবে। । ’
বইমেলার সমাপনী অধিবেশনে বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনে বড়ো একটি দিগন্ত। বই পাঠের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে মানবিক দর্শন জাগ্রত হবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। ’
বাংলা একাডেমি আয়োজিত এ বছরের বইমেলার প্রতিপাদ্য ছিলো ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। ’
বইমেলা প্রাঙ্গণে আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণি বলেন, ‘মেলাপ্রাঙ্গণ জুড়ে প্রতি বছরই একটি ইস্যু নিয়ে আমরা কথা বলি, সেটি ধুলো। মেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ছিটানোর কথা থাকলেও আয়োজক প্রতিষ্ঠান সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিদিন। মেলার নান্দনিকতার দায়িত্বে থাকা ক্রসওয়াক কমিউনিকেশনস লিমিটেডের ব্যর্থতাও নজিরবিহীন। ’
মাওলা ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আহমেদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘মেলায় পাইরেটেড বইয়ের সংখ্যা এত বেশি যে ভবিষ্যতে সৃজনশীল প্রকাশনীর ব্যবসা অন্ধকারে ডুবে যাবে। দায়িত্ব নিয়ে যদি এসব প্রকাশনীর দৌরাত্ম্য বন্ধ না করা যায়, তবে সৃজনশীল প্রকাশকরা ধীরে ধীরে নতুন বই প্রকাশ করা বন্ধ করে দেবে। ’
সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘করোনা মহামারির আগে ২০২০ সালে আমরা যে মেলাটি করতে পেরেছিলাম, যে আবহে মেলাটি হয়েছিলো, তা হয়ত আমরা এ বছর করতে পারিনি। কিন্তু দর্শক –পাঠকের সমাগমে আমরা সন্তুষ্ট। আর্থিক অসংগতির কারণে অনেক মানুষ হয়তো এ বছর নতুন বই কিনতে পারেননি। কিন্তু বইয়ের সঙ্গে মানুষের যে অবিচ্ছেদ্য সংযোগ, তাই আমাদের বই প্রকাশে নিরন্তর অনুপ্রেরণা জোগাবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
এইচএমএস/