ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বইমেলা

পাণ্ডুলিপি সংকটে হাতেগোনা ভাষার বই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪
পাণ্ডুলিপি সংকটে হাতেগোনা ভাষার বই পছন্দের বই দেখছেন বইপ্রেমীরা। ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: একুশের চেতনাকে ধারণ করে আয়োজিত বইমেলায় ভাষা নিয়ে গবেষণাধর্মী বইয়ের সংখ্যা হাতেগোনা।

প্রকাশকরা বলছেন, পাঠকের চাহিদা থাকার পরও পাণ্ডুলিপি সংকটের কারণেই মেলায় ভাষা বিষয়ক গবেষণাধর্মী নতুন বই তেমন বেশি আসছে না।

বইমেলার জনসংযোগ বিভাগও জানাতে পারেনি, এবার মেলায় ভাষা আন্দোলন বা ভাষা বিষয়ক গবেষণাধর্মী বইয়ের সংখ্যা কত।  

মেলা ঘুরে দেখা যায়, গত এক দশক ধরে প্রকাশিত বইগুলো এখনো বিক্রি হচ্ছে মেলায়। নতুন প্রকাশিত বই তেমন বেশি নেই।

বাতিঘর এবার প্রকাশ করেছে বদরুদ্দীন উমরের লেখা ‘আমাদের ভাষার লড়াই’ এবং বাংলা একাডেমি এনেছে ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন’।

বিগত বছরে ভাষা আন্দোলন নিয়ে সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশ করে আগামী প্রকাশনী। এবার তারা সুজন বড়ুয়ার লেখা ‘আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ নামে একটি বই মেলায় আনছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ওসমান গণি।  

তিনি বলেন, ভাষা নিয়ে বা ভাষা আন্দোলন নিয়ে গবেষণার বইয়ের চাহিদা আছে। এ ধরনের বই সারা বছরই বিক্রি হয়। কিন্তু পাণ্ডুলিপি সংকটের কারণে নতুন বই আনা সম্ভব হয় না।

ভাষা আন্দোলন নিয়ে গবেষকও হাতেগোনা কয়েকজন। ফলে নতুন পাণ্ডুলিপির জন্য তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয় মন্তব্য করে ওসমান গণি বলেন, এম আবদুল আলীম এখন এ বিষয়ে ভালো কাজ করছেন। তার অনেকগুলো বই আমরা করেছি।

মেলায় বায়ান্ন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। অথচ স্টলে গিয়ে পাওয়া যায়নি ভাষা বিষয়ক কোনো বই। বাংলা একাডেমি প্যাভিলিয়নেও এ বিষয়ে মাত্র কয়েকটি বই রয়েছে।

প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মী মাহবুব হোসেন হৃদয় বলেন, বিগত বছরে প্রকাশ হওয়া কয়েকটি বই রয়েছে, আর নতুন প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন’ বইটিই আছে।

গত বছর মেলায় এসেছিল এম আবদুল আলীমের ‘ভাষা আন্দোলনে তাজউদ্দিন আহমদ’, আখতার হোসেন মল্লিকের ‘ভাষা সংগ্রাম ও বইমেলা’, শেলী সেনগুপ্তার ‘নারীর ভাষা আন্দোলন, আফরোজা পারভীনের দুটি বই ‘ভাষা আন্দোলনে নারী’ ও ‘একুশের গল্প’ এবং ফেরদৌসী বেগম বিউটির 'ভাষা আন্দোলনে লালমনিরহাট’।

এছাড়া গোলাম কুদ্দুছের বই ‘বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন’ এনেছিল অন্যপ্রকাশ। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের নয় বছর পর ভারতের আসামের বরাক উপত্যকায় ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিল বেশ কয়েকজন। সে বিষয়টিই গবেষণার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন গোলাম কুদ্দুছ।

গবেষক মফিদুল হক বলেন, বাংলাদেশেই বহুভাষার মানুষ বাস করেন। ভাষা নিয়ে নানা আঙ্গিকে গবেষণা হওয়া জরুরি। বইমেলায় সেসব বই না থাকা মানে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের এ বিষয়ে গবেষণা কম হচ্ছে।

এ ধরনের গবেষণা যে সময় সাপেক্ষ, সে বিষয়টি তুলে ধরে মফিদুল হক বলেন, সংখ্যা দিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করা সমীচীন হবে না। কিন্তু সংখ্যাটি এত কম হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। এ বিষয়ে আরও বেশি গবেষণা হওয়া উচিত। ভাষার জন্য জীবন দেওয়া জাতি আমরা। বিশ্বের সব ভাষা নিয়ে আমাদের কাজ করার দায় অনেক বেশি।

কথাসাহিত্যিক হাসনাত আব্দুল হাই বলেন, ভাষা আন্দোলন নিয়ে এখন নতুন বিষয় খুঁজতে হবে। মোটা দাগে অনেক কিছু নিয়েই লেখা হয়েছে। এখন নতুন বিষয় খুঁজে লিখতে হবে। সেজন্য ভাষা আন্দোলন নিয়ে যত লেখা হয়েছে, সেগুলো পড়তে হবে।

সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন না হওয়ায় একুশের চেতনার ‘আংশিক বাস্তবায়ন’ হয়েছে বলেই মনে করেন হাসনাত আব্দুল হাই।

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন যে চেতনাকে ধারণ করে হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন কিন্তু পুরোপুরি হয়নি। আমরা এখনো বাংলার ব্যবহারই ঠিকমতো করতে পারিনি। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন ছিল ভাষা আন্দোলনের অন্যতম দাবি। এটি সম্ভব হয়নি এখনো।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪
এইচএমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।