ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

পাঠকের চোখ চিরায়ত রচনা, গল্প-সাহিত্যে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪
পাঠকের চোখ চিরায়ত রচনা, গল্প-সাহিত্যে ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: প্রিয় লেখকদের গল্প, কবিতা বা প্রবন্ধের নানা বই এখনো প্রকাশের অপেক্ষায়। বইমেলা প্রাঙ্গণে এসে একদল তরুণ পাঠক তাদের পছন্দের লেখকদের নতুন বই খুঁজে না পেয়ে যারপরনাই ক্ষুব্ধ হলেন।

তবে মেলা থেকে তো আর খালি হাতে ফিরে যাওয়া যায় না। তাদের অনেকে শেষে চিরায়ত রচনাবলি আর বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিকদের কালজয়ী কিছু উপন্যাস কিনে ঘরে ফেরেন।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবির রায়হানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ যেন বইমেলার একটা নিয়ম হয়ে গেছে, সব ভালো বই প্রকাশ হবে মেলার শেষ ভাগে। তখন ভিড়ের ঠেলায় মেলা প্রাঙ্গণে ঢোকাই মুশকিল হয়। একটা নতুন বই নেড়েচেড়ে, একটু দেখেশুনে কিনবো তার উপায় নেই। বাসায় ভাইবোনদের জন্য আমি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা কিনে নিয়ে যাচ্ছি।

পাঠক সোহেলী শারমিন ছাত্রাবস্থায় হুমায়ূন আহমেদের বই, ভারতের লেখকদের ক্লাসিক্যাল বই পড়তেন। পরে ভ্রমণকাহিনির বই পড়েছেন কিছু সময়। এখন তার আগ্রহ ইতিহাস আর রাজনীতির বইয়ের প্রতি। প্রথমা থেকে নিজের জন্য মশিউল আলমের ‘দ্বিতীয় খুনের কাহিনি’ বইটি সংগ্রহ করেছেন। আর মেয়ের জন্য কিনেছেন ক্লাসিক গল্পের বই ‘ঝুমি এল চিড়িয়াখানায়’, ‘বাংলাদেশের লোকশিল্প’ আর ড্রয়িং বুক।

একই কথা বলেন তরুণ পাঠক জুবায়ের আলমের। একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এ তরুণ বলেন, মেলায় এসে আমি বেশ কিছু গবেষণার বই খুঁজেছিলাম। আর ফিকশনের প্রতি আমার অসম্ভব ভালো লাগা। মেলায় যেসব নতুন বই এসেছে, তার অধিকাংশই মানসম্মত নয়। বেশ কটি উপন্যাসের বই নেড়ে দেখলাম, এত মানহীন!

কথা হয় কথাসাহিত্যিক ফারুক মঈনুদ্দীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ এ বইমেলায় বই কেনার ব্যাপারটি বার্ষিক ক্রীড়াকর্মের মধ্যে নিয়েছেন। শুধু যে বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশিত হয়, ব্যাপারটি এমন নয়। বছরজুড়েই কিন্তু বই প্রকাশিত হয়। শুধু বইমেলাকে কেন্দ্র করে যে বইগুলো তাড়াহুড়ো করে প্রকাশিত হয়, তাতে অনেক ভুলভ্রান্তি থেকে যায়।

অমর একুশে বইমেলা প্রকাশকদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতী ফারুক মঈনুদ্দীন। তিনি বলেন, বইমেলা এখন প্রকাশকদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। পৃথিবীর অনেক বইমেলা কিন্তু এখন প্রকাশকরাই আয়োজন করেন। এতে বাংলা একাডেমি সহযোগিতা করতে পারে। আর বইমেলায় প্রবেশ করতে ন্যূনতম একটি প্রবেশ ফি রাখা উচিত। নতুন বই প্রকাশের পর তা ডিজিটাল ফরম্যাটে প্রকাশ করার উদ্যোগ থাকা উচিত।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, বইমেলা এখন ফিরেছে সেই চিরচেনা রূপে। পাঠকরা আর ঘরে বসে নেই। বইয়ের টানে নানা বয়সী পাঠকের পদচারণায় মুখর মেলাপ্রাঙ্গণ। হাতে হাতে শোভা পাচ্ছে বই। এ এক অন্যরকম ভালো লাগার দৃশ্য। মেলার যতই দিন গড়াচ্ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বই বিক্রি। তবে প্রাণের মেলায় এখনও পাঠকদের পছন্দের শীর্ষে রয়ে গেছেন কালজয়ী লেখকরা। জীবিত না থাকলেও তারা আজও রয়েছেন পাঠকদের হৃদয়ে।

রোববার ছিল অমর একুশে বইমেলার ১৮তম দিন। এদিন মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন নতুন বই এসেছে ৮৩টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'স্মরণ: জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বরোচিষ সরকার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন লুভা নাহিদ চৌধুরী ও এম আবদুল আলীম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কবি কামাল চৌধুরী।

প্রাবন্ধিক বলেন, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয় নির্মাণবিষয়ক গবেষণাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন বিভিন্ন সংকলনগ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনার মধ্য দিয়ে। তিনি তার প্রবন্ধগুলোতে এমন সব প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন, যা সমকালের মুসলমান বাঙালির হীনম্মন্যতা দূর করে, বাঙালির সমন্বিত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করে, সাংস্কৃতিক বহুত্বের মধ্যে উদার মানবিক দিকগুলোকে সামনে নিয়ে আসে, বাঙালির আত্মপরিচয়ের মূল বিন্দুগুলোকে স্পর্শ করে, সর্বোপরি বাঙালির জাতীয়তাবাদী উপাদানগুলো সামনে তুলে ধরে।

আলোচকরা বলেন, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তার কর্মময় জীবনে জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় নানা দুর্যোগে তিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পরিমিতিবোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, আন্তরিকতা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা তার জীবনচর্যা ও সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। আজীবন তিনি বাঙালির সংস্কৃতির শেকড়ের সন্ধান করেছেন। তার মূল্যবান চিন্তা ও জ্ঞানসমৃদ্ধ প্রবন্ধ দেশের বাইরেও সমাদৃত হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে কামাল চৌধুরী বলেন, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বহুমাত্রিক ও বর্ণাঢ্য জীবনযাপন করেছেন। সমগ্র জীবনব্যাপী তিনি বাঙালির মুক্তি ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছেন এবং এ স্বপ্ন আমাদের সবার মধ্যে সঞ্চারিত করেছেন। তিনি তার পাণ্ডিত্য, জ্ঞান ও কর্মের মধ্য দিয়ে তরুণ সমাজকে পথ দেখাবেন।

রোববার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, শিশুসাহিত্যিক রোমেন রায়হান, কবি সৈকত হাবিব ও গীতিকবি মনোরঞ্জন বালা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি কামাল চৌধুরী, মুস্তাফিজ শফি, নজমুল হেলাল, মাহবুবা ফারুক, রাকীব হাসান, রিশাদ হুদা ও নাজমা আহমেদ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মো. শওকত আলী, মো. এনামুল হক, শিরিন সুলতানা, সুপ্রভা সেবতী, অনিকেত রাজেশ ও ফেরদৌসী বেগম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মামুনুর রশীদের রচনা ও নির্দেশনায় ‘কহে ফেসবুক’ নাটক পরিবেশন করে ‘আরণ্যক নাট্যদল’।

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার ১৯তম দিন। এদিন মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'স্মরণ: হাসান আজিজুল হক' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মোজাফ্ফর হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ফারুক মঈনউদ্দীন ও মহীবুল আজিজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪
এইচএমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।