ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

না থেকেও আছেন হুমায়ূন!

আল-আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৪
না থেকেও আছেন হুমায়ূন!

বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ প্রয়াত হয়েছেন ২০১২ সালের ১৯ জুলাই। মৃত্যুর পর প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ভক্ত পাঠকদের কাছে তার জনপ্রিয়তা এখন পর্যন্ত এতোটুকু কমেনি।



বাঙালির সবচেয়ে দীর্ঘ উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা বলতেই এক সময় পাঠক-দর্শনার্থীরা বুঝতেন হুমায়ূন আহমেদের নতুন বই। মেলায় যে সব প্রকাশনী তার নতুন বই প্রকাশ করতো সেসব স্টলের সামনে থাকতো পাঠক-দর্শনার্থীদের দীর্ঘ লাইন। বাংলা সাহিত্যে লেখকের জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদ যুক্ত করেছেন নতুন মাত্রা।

বুধবারের বইমেলায় যেসব পাঠক হুমায়ূন আহমেদের বই কিনেছিলেন বাংলানিউজকে তারা বলেন, তার মতো আরেকজন লেখক সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তা এ রকমই থেকে যাবে।

‍অন্যদিকে প্রকাশক ও বিক্রেতারা বলছেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় হুমায়ূন আহমেদের বই এখনও পাঠকদের প্রথম পছন্দ ও বিক্রির শীর্ষে।

জীবিতাবস্থায় তিনি নিয়মিতই আসতেন একুশের বইমেলায়। পাঠক-দর্শনার্থীরা দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে তার অটোগ্রাফ দেওয়া বই কিনতেন। বিশেষ করে অন্যপ্রকাশ হুমায়ূন আহমেদের ১০০টিরও বেশি বই প্রকাশ করেছে- তাদের স্টলের সামনে এ দৃশ্য ছিল বইমেলার নিয়মিত চিত্র।

কিন্তু এবারের বইমেলাসহ বিগত ৩টি বইমেলায় হুমায়ূন আহমেদের অটোগ্রাফ দেওয়ার দৃশ্য দেখা না গেলেও অন্যপ্রকাশের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পাঠক-দর্শনার্থীদের হুমায়ূনের বই কেনার দৃশ্য এখনও নিয়মিত।

এবারের বইমেলায় অন্যপ্রকাশের স্টলকে সাজানো হয়েছে হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করে। অন্যপ্রকাশের স্টলের সামনে গেলেই দেখা যায়, ফতুয়া গায়ে জানালার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। দেখে যে কারোরই মনে হবে, জানালায় দাঁড়িয়ে মেলা এবং তার ভক্তদের বই কেনা দেখছেন তিনি।

এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্র হিমুকে উৎসর্গ করে অন্যপ্রকাশের স্টলের বাইরের রং করা হয়েছে ‘হলুদ’। অন্যপ্রকাশের স্টল সাজানোর পরিকল্পনায় ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম সহচর শাকুর মজিদ।

অন্যপ্রকাশের প্রেস কো-অর্ডিনেটর মোজাম্মেল হক শিশির বাংলানিউজকে জানান, এ বছরও মেলার প্রথম কয়েকদিনে অন্যপ্রকাশ থেকে হুমায়ূন আহমেদের ৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ কাক ও কাঠগোলাপ, কাকারু, সংকলন গ্রন্থ হিমু ১০ এবং হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ৭।

অন্যপ্রকাশ থেকে আগামী সপ্তাহে হুমায়ূন আহেমেদের লেখা ‘লীলাবতির মৃত্যু’ নামে একটি বই প্রকাশিত হবে। এছাড়াও এবার অন্যপ্রকাশ থেকে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে লেখা সালেহ আহমেদের ‘সৌখিনদার হুমায়ূন’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে বলেও জানান মোজাম্মেল হক শিশির।

এছাড়া আগামী শুক্রবার সময় প্রকাশনী থেকে হুমায়ূন আহমেদ ও মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা ‘একাত্তর ও আমার বাবা’ নামে একটি বই প্রকাশিত হবে।

সময় প্রকাশনীর ম্যানেজার আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, হুমায়ূন আহমেদ ও জাফর ইকবাল এ দুই ভাইয়ের এক সাথে লেখা এটাই প্রথম বই। এই বইটি ৪২ বছর আগে লেখা হলেও এখনো কোথাও ছাপা হয়নি। বইটিতে হুমায়ূন আহমেদের হাতের লেখাও থাকবে।

এছাড়া বিভাষ প্রকাশনী থেকে এবার হাসান হাফিজ সম্পাদিত হুমায়ূন আহমেদ স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

অন্যপ্রকাশ থেকে হুমায়ূন আহমেদের বই কিনছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী সম্রাট তালুকদার।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ মারা গেলও আমাদের কাছে তিনি জীবিত। বইমেলার নাম এলেই স্যারের নাম সবার আগে আসে। তার লেখার মধ্যে যে জীবন ঘনিষ্ঠতা ছিল তা আর কোথাও পাই না। তিনি খুব ছোট বিষয়কেও খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। এ জন্যই তার বই পড়তে ভালো লাগে।

বীরেন্দ্র দাশ নামে বই কিনতে আসা আরেকজন পাঠক বাংলানিউজকে বলেন, বইমেলায় আসার উদেশ্যই স্যারের সাম্প্রতিক বই কেনা। হুমায়ূন আহমেদের লেখার মাঝে অন্যরকম প্রাণ আছে, যা আর কারও লেখায় পাই না। তার বই একবার পড়তে শুরু করলে শেষ না করে উঠতে পারি না। যতোদিন তার বই সবাই পড়ে শেষ না করবে ততোদিন তার বই এভাবে চলতেই থাকবে।

হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশকদের মধ্যে অন্যপ্রকাশের পরেই আছে অনন্যা। এ প্রকাশনীর প্রকাশক হাফিজুল ইসলাম টুটুল বাংলানিউজকে জানান, অনন্যা থেকে এ পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদের ৪০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের এখানে এখন পর্যন্ত স্যারের লেখা বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। এভাবে হয়তো আরও ৫০ বছর চলতেই থাকবে। যতোদিন পর্যন্ত না তার মতো আরেকজন লেখক সৃষ্টি হয়
ততোদিন পর্যন্ত তিনি এমন জনপ্রিয়ই থাকবেন।

কাকলী প্রকাশনীর প্রকাশক নাসির আহমেদ সেলিম বাংলানিউজকে জানান, কাকলী প্রকাশনী থেকে এ পর্যন্ত ৩৩টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এসব বই এখনো আগের মতোই জনপ্রিয় আছে।

এছাড়া অন্বেষা প্রকাশনী থেকে ২৩টিসহ অবসর প্রকাশনী, পার্ল প্রকাশনী, অনুপম প্রকাশনী, আফসার ব্রাদার্স’র স্টলেও হুমায়ূন আহেমেদের লেখা বই পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।