হরতাল অবরোধের মধ্যেও প্রথম দুদিনেই জমজমাট হয়ে যাওয়া বইমেলার সম্পূর্ণ বিপরীত দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের লিটলম্যাগ চত্বর। মেলার দ্বিতীয় দিনেও বরাদ্দপ্রাপ্ত স্টল খোলেনি বেশ কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিন।
‘কবিতাপত্র’, ‘হুচ্’, ‘শাহবাগ’, ‘নির্মাণ’ ও ‘কৃষাণ’-সহ ‘গাণ্ডীব’-এর মত ঐতিহ্যবাহী লিটল ম্যাগাজিনই এখন পর্যন্ত মেলায় নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেনি।
আর যারাও বা স্টল নিয়ে বসেছে—বেশিরভাগেরই নেই মেলা উপলক্ষে বা এ বছর প্রকাশিত নতুন কোনও সংখ্যা। প্রায় প্রত্যেকটি স্টলেই সাজিয়ে রাখা ছিল লিটল ম্যাগাজিনগুলোর পুরনো এবং এক, দুই বা তিন, চার বছর আগে প্রকাশিত সর্বশেষ সংখ্যা-সমূহ।
এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই এ বছর নতুন কোনও সংখ্যা করার সম্ভাবনা নেই। অবশ্য দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া।
মেলা চলাকালেই নতুন সংখ্যা আসবে বা আসতে পারে এমন জানিয়েছে লিটল ম্যাগাজিন ‘বেহুলাবাংলা’, ‘শব্দতরী’, ‘চারবাক’, ‘জঙশন’, ‘দ্রষ্টব্য’, ‘কবিতাবাংলা’, ‘ধমনি’, ‘মেঘ’, ‘চৈতন্য’, ‘অর্বাক’ ও ‘চালচিত্র’। ইতোমধ্যেই নতুন সংখ্যা প্রকাশ করেছে ‘চিহ্ন’।
লিটল ম্যাগাজিন কি ঝিমিয়ে পড়েছে?—এমন প্রশ্নের জবাবে ‘ঊষালোক’-এর সম্পাদক মোহাম্মদ শাকেরুল্লাহর আশাবাদ, আরও দুয়েকদিন গেলে মেলার অন্যান্য অংশের মত লিটলম্যাগ চত্বরও জমে উঠবে।
তবে লিটল ম্যগাজিন ‘অনৃত’-র সম্পাদক সরদার ফারুক মনে করেন, সার্বিক সাহিত্য চর্চা থেকে জাতীয় দৈনিক নির্ভরতা কমে যাওয়ায় বিপরীত শক্তি হিসেবে উত্থিত হবার প্রয়োজনই বিলুপ্ত হয়েছে লিটল ম্যাগাজিনের।
কিন্তু এ ব্যাপারে কবি জুয়েল মাজহারের বক্তব্যটা একটু ভিন্ন। তাঁর মতে, শুধুমাত্র বিপরীত শক্তি বা প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার জায়গা থেকেই লিটল ম্যাগাজিন না। বরং চালু রুচির বাইরে নতুনতর রুচির সম্ভাবনার লালন পালনই লিটল ম্যাগাজিনের ধর্ম।
এ ব্যাপারে প্রচ্ছদশিল্পী চারু পিন্টুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লিটল ম্যাগাজিনকে হতে হবে ‘কনসেপ্ট বেইসড’। নইলে কয়েকগুচ্ছ কবিতা, ‘হাফ ডজন গদ্য’ আর দুতিনটি সাক্ষাৎকারের একঘেয়ে সাহিত্য সংকলন বৈ কিছুই হবে না সেগুলো।
কবি ও চিৎকার ব্যান্ডের ভোকাল পদ্মের ভাবনাটা অবশ্য যৌক্তিকই ঠেকতে পারে পাঠকদের কাছে। তিনি মনে করেন, বর্তমান ‘ফ্রি অনলাইন মিডিয়ার যুগে’ রুচি ও মেজাজে লিটল ম্যাগাজিনগুলোকে একটু ‘ব্যাকডেটেডই লাগে’।
তাঁর ধারণা, একই চরিত্রে লিটল ম্যাগাজিনগুলোর চেয়ে এখনকার বেশ কয়েকটি ওয়েবজিনই অধিক কার্যকর অবস্থায় রয়েছে। এ সময় তিনি অনলাইন ব্লগজিন ও ওয়েবসাইট ‘লাল জিপের ডায়েরি’, ‘সাহিত্য ডটকম’ ও ‘বাছবিচার ডটনেট’-এর কথা উল্লেখ করেন।
আর তেমনই যদি হয় ঘটনা, তবে আগামী মেলা থেকেই লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে এ ধরনের অনলাইন পোর্টালগুলোরও স্টল বরাদ্দ পাওয়া উচিত কিনা?
অনলাইনে বই বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠান রকমারি.কমের ব্র্যান্ডিং বিভাগের জাবেদ জাফির বলছেন, কেন নয়! বই বা ম্যাগাজিনকে শুধুমাত্র ছাপা মাধ্যমেই সীমিত না রেখে এর অন্যান্য সম্ভাবনাগুলোকেও সামনে আনার দায়িত্ব বাংলা একাডেমির।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৫