ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

প্রাণে প্রাণে জমে ওঠে বইমেলা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৫
প্রাণে প্রাণে জমে ওঠে বইমেলা বইমেলায় বাংলা একাডেমির স্টল/ ছবি: আনন্দ/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতায় আক্রান্ত আমাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বৃহত্তর এ বদ্বীপ। দুর্বৃত্তের ছোড়া পেট্রোল বোমায় পুড়ে কয়লা হচ্ছে, একের পর এক তাজা প্রাণ।

ঢাকা মেডিকেল কিংবা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছেন অগণিত দগ্ধ মানুষ।
 
এই যখন একটি স্বাধীন দেশের প্রেক্ষাপট, তখন প্রতিটি নাগরিকের ভেতরেই পুড়ে যাওয়ার, দগ্ধ হওয়ার ভয় থাকাটাই স্বাভাবিক। সে কারণে পারতপক্ষে ঘর থেকে বের না হওয়ার চেষ্টা সবারই।

কিন্তু প্রাণে যখন বেজে ওঠে একুশের সুর, সঞ্চারিত হয়, ৫২-এর চেতনা, তখন কী আর ঘরের বন্দিজীবন ভালো লাগে কারো! লাগে না!
 
তাই তো, চলমান রাজনৈতিক বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে, দগ্ধ হওয়ার ভয়কে পাশ কাটিয়ে সবাই এসে মিলছেন অমর একুশের প্রাণের গ্রন্থমেলায়।

২০১৫ সালের মেলার শুরুটা তেমন উৎসাহব্যঞ্জক না হলেও চতুর্থ দিনের (বুধবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল গড়াতেই শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বরের রাস্তাগুলোতে পদচারণা বেড়েই চলেছে। প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে প্রাণের গ্রন্থমেলা।
 
প্রতি বছরই ফ্রেব্রুয়ারি মাসের জন্য যেমন উন্মুখ হয়ে অপেক্ষায় থাকেন বইপ্রেমী ক্রেতা-দর্শনার্থীরা, তেমনি কবি, লেখকদেরও অপেক্ষা থাকে এ মাসটিকে ঘিরে। সব মিলিয়ে সৃষ্টিশীল প্রাণের উচ্ছ্বাস-আনন্দ মিলনমেলায় পরিণত হয় বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণ, অধুনা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানও।
 
সন্ধ্যা নামার আগেই জমে উঠেছে চতুর্থদিনের বইমেলা। এ তল্লাটে এসে কারো মনে হওয়ারই জো নেই যে, হিংসায় উন্মত্ত রাজনৈতিক ব্যক্তি গোষ্ঠী ও সুবিধাভোগীরা।
 
রাজধানী উত্তরা থেকে এসেছেন হিমাংশু বিশ্বাস। একা আসেননি; সঙ্গে নিয়ে এসেছেন প্রিয়জনকে। জানতে চাইলে বাংলানিউজকে হিমাংশুর পাল্টা প্রশ্ন, এর চেয়ে দেশের অবস্থা কবে ভালো ছিল বলুন তো! এখন দৃশ্যমান দুটো পক্ষ। একদলের ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা, আরেক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা। আর এতে বলি হচ্ছে, সাধারণ মানুষ। ঘরে বসে থাকলেই কি আপনি নিরাপদ? মোটেই না।

তিনি বলেন, এখন যানবাহনে পুড়ে মরছেন। না বেরুলে ঘরে পুড়ে মরতে হবে। তাই, নির্ভয়ে এসেছি মেলায়। প্রতিদিন আসবো। পুড়ে মরলে মরবো।
 
এতটা সাহসী উচ্চারণ অবশ্য করেননি রেজাউল হক। একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। তিনদিনের ছুটিতে আছেন। এর মধ্যে দু’দিন কেটে গেছে। আজই শেষদিন। পরে আসা হবে কী হবে না, নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না। তাই, বই কেনার উদ্দেশ্যেই অর্ধাঙ্গিনীকে নিয়ে মেলায় এসেছেন।
 
রেজাউল বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কিছু টাকার বই কিনেছি। আরো কিছু কেনা হবে মেলার শেষের দিকে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে আরেকদিন সময় করে মেলায় আসবো। এখন নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারলেই হলো!
 
এই যখন ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মানসিক অবস্থা, তখন স্বাভাবিকভাবেই স্বস্তিতে থাকার কথা নয় প্রকাশকদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন প্রকাশক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তারা উদার গণতান্ত্রিক একটি পরিস্থিতি দেশে প্রত্যাশা করেন।
 
সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, প্রতিক্রিয়াশীলতা যে কোনো সমাজের জন্য ভয়াবহ। এখন যে দুর্যোগ চলছে, তা অচিরেই কেটে যাবে বলেও বিশ্বাস তাদের।
 
কথা হয়, তরুণ কবি তুহিন তাওহিদের সঙ্গে। তার একটাই আহ্বান, প্রাণের তাগিদেই একবার এসে প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে যান প্রাণের বইমেলায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৫

** বইমেলার তথ্য মিলবে দুই কেন্দ্রে
** মেলায় আসছে ‘জীবনানন্দ, সময়ের নিঃসঙ্গ নাবিক’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।