অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-য় প্রকাশিত হয়েছে কবি মাসুদ খানের ছোটবড় মোট ৩৭টি আলেখ্য নিয়ে বই ‘দেহ-অতিরিক্ত জ্বর’। বইটি প্রকাশ করেছে চৈতন্য।
কী ধরনের লেখা রয়েছে বইটিতে—আর আলেখ্য ফর্মটি নিয়ে জানতে চাইলে—ই-মেইলেযোগে কানাডা প্রবাসী এই কবি বলেন, কবিতার পাশাপাশি বেশ কিছু লেখা লিখেছি যেগুলি আসলে না-কবিতা-না-কথাসাহিত্য-না-নিবন্ধ-না-জার্নাল... আবার হয়ত ছুঁয়ে গেছে সবগুলিকেই। ’
‘সাহিত্যের এই যে নানান জঁর, নানান আঙ্গিক—এদের মধ্যকার ভেদরেখাগুলি ঠিক কীরকম, কিংবা যে অভিন্ন শিল্পত্ব এইসব ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকের ভেতর সঞ্চার করে সৌন্দর্য, তার স্বরূপটা আসলে কেমন—সেসবের একটা বোঝাবুঝি, একটা নিরীক্ষার চেষ্টা রয়েছে লেখাগুলিতে। আঙ্গিকের নাম দিয়েছি ‘আলেখ্য’।
মেলার প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের লিটলম্যাগ চত্বরে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। দেহ-অতিরিক্ত জ্বর থেকে মাসুদ খান রচিত একটি আলেখ্য:
জ্যামিতি
প্রবাদ আছে— বিল গেটসের হাত থেকে একশো ডলারের নোট পড়ে গেলে তিনি কি তা ওঠাবেন? প্রবাদে প্রশ্নই শুধু নয়, উত্তরও বের করা হয়েছে হিসাব কষে। —না, ওঠাবেন না, কারণ টাকাটা ওঠাতে যতক্ষণ লাগবে, ততক্ষণে তিনি আয় করতে পারবেন তার চেয়েও বেশি।
কারো কাছে পড়ে-যাওয়া টাকা ওঠানো মানে সময় নষ্ট। অথচ এই একুশ শতকে, একই সময়ে, এমনও রয়েছে— পুরা এক সপ্তাহ হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে কেউ পাচ্ছে মাত্র পাঁচ ডলার। অর্থাৎ একজনের সময় বা শ্রমের মূল্য আরেকজনের চেয়ে প্রায় বারো লক্ষ গুণ বেশি। তথ্যটি কেমন অলৌকিক আর আধিভৌতিকের মতো শোনায়। বিঁধে যায় সরাসরি মর্ম বরাবর।
গায়ে-হিম-ধরানো এই তথ্যের ভেতরকার যে-আধিভৌতিকতা, তার চৌহদ্দির চারধারে নিশান আকারে দাঁড়ানো অন্তত কয়েকটি কুহকী প্রপঞ্চ— সময়, সমাজ, ব্যক্তি, অর্থ, রাজনীতি... আর এইসব প্রপঞ্চের উদ্ভব, বিকাশ ও বিলয় নিয়ে ভাবতে ভাবতে একেবারে পুড়ে-পুড়ে গেছেন যাঁরা যুগে যুগে, সেইসব ভাবুকেরাও বিস্ময়ে হা হয়ে আছেন। তথ্যটির ভেতরে বিরাজমান যে রোমহর্ষকতা, ভয়ের যে আবহ, আপাতত সেসবের মাত্রা ও গভীরতা নিয়ে ভাবছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৫