ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

গড়ে প্রতিদিন ১৩১ বই, পাঠযোগ্য কতটি?

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫
গড়ে প্রতিদিন ১৩১ বই, পাঠযোগ্য কতটি? ছবি: জিএম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ঘিরে প্রতিবছরই প্রকাশিত হয় তিন থেকে চার হাজার বই। মেলা চলাকালে প্রতিদিনই চলে নতুন বই প্রকাশের উৎসব।



গল্প-কবিতা-উপন্যাসসহ অসংখ্য বইয়ের ছড়াছড়ি। নতুন কবি-লেখকে ভরে উঠছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এটা আশার কথা। কিন্তু মেলা ঘিরে যেসব বই প্রকাশিত হচ্ছে এসবের মধ্যে পাঠযোগ্য বই কতটি? এ প্রশ্ন রুচিশীল পাঠকদের।

মঙ্গলবার (১০ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার দশদিন চলছে। এ দশদিনে প্রকাশিত হয়েছে মোট ১ হাজার ৩১৩টি। হিসেব কষে দেখা যায় গড়ে এসেছে ১৩১টি বই।

বইমেলার দশদিনে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোনো বাছ-বিচার ছাড়াই প্রকাশককে উল্টো টাকা দিয়ে এবারও কেউ কেউ মেলায় বই এনেছেন। এসবের মধ্যে রয়েছেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, শিল্পপতির স্ত্রী, সরকারি আমলা প্রমুখ। এসব বইয়ের মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

এদের অনেকেই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পাঠকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। বইমেলায় প্রবেশের সময়েও দর্শনার্থীদের বিজ্ঞাপন ধরিয়ে দেওয়া হয়!
বইমেলা কেন্দ্রিক এসব ‘মৌসুমী লেখক’দের কেউ কেউ অন্য লেখক দিয়ে বই লেখানোর অভিযোগও রয়েছে।

মেলার দশদিনে ১ হাজার ৩৩১টি বই এলেও এরমধ্যে পঞ্চাশটি বই নির্বাচন করতে হোঁচট খেতে হচ্ছে রুচিশীল পাঠকদের।

কবি আসাদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এটা ঠিক মেলা ঘিরে অসংখ্য বই প্রকাশিত হচ্ছে। এরমধ্যে সব বই যে পাঠযোগ্য হবে তাতো নয়। সব বইকে গীতাঞ্জলি ভাবারও কোনো কারণ নেই। অসংখ্য বইয়ের মধ্যে বেরিয়ে আসবে ভালো বই। ভালো লেখক।

মেলায় কথা হয় তরুণ কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের সঙ্গে। যিনি মেলায় আসা বিভিন্ন বই নিয়ে গবেষণা করে থাকেন।

এ কথাসাহিত্যিক বাংলানিউকে বলেন, প্রতিবছর বইমেলায় আসে ৩ থেকে ৪ হাজার বই। যদি মেলায় গড়ে ৩ হাজার বই ধরি তাহলে এরমধ্যে প্রকাশক বিনিয়োগ করেন ১ হাজার বই। বাকি ২ হাজার বই লেখকের টাকায় বের হয়।

মেলায় আসা মোট বইয়ের মধ্যে পাঠযোগ্য বড়জোর ৩ থেকে ৪শ’র বেশি থাকে না বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, লেখক নিজের টাকায় প্রকাশ করলে সে বই সাধারণত পাঠযোগ্য হয় না।
 
মেলা ঘিরে কিছু মানহীন বই প্রকাশ হচ্ছে বলে জানালেন মাওলা ব্রাদার্সের প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক। তবে এসব বইয়ের ভিড়ে পাঠযোগ্য বই এবং ভালো লেখক পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় আসা বইয়ের মধ্যে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার মতো কিছু বই টিকে থাকবে।

এ প্রকাশক আরও বলেন, আমাদের দেশে প্রকাশনা শিল্প এখনও পুরোপুরি আর্ট ও ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়নি। দেশের প্রকাশনাগুলোর সামনে অনেক সমস্যা। প্রকাশনাগুলোকে টিকে থাকতে গিয়ে কারো কারো বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ শোনা যায়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, পরিচিত ওপন্যাসিক, কবি-লেখক ছাড়া প্রায় ৮০ শতাংশ বই বের হচ্ছে লেখকের টাকায়।

দশম দিনের বইমেলা
দশ দিন পার করলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা। মঙ্গলবার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দু’প্রান্তেই বিকেলে লোক সমাগম দেখা গেলেও সন্ধ্যায় কিছুটা ভাটা দেখা গেছে। সন্ধ্যায় মেলায় এসেছেন জনপ্রিয় উপন্যাসিক ইমদাদুল হক মিলন। তিনি অনন্যার স্টলে বেশ কিছুটা সময় অবস্থান করেন এবং পাঠকদের অটোগ্রাফ দেন।

মেলায় তার নতুন বই এসেছে বেশ কয়েকটি। অনন্যা থেকে ‘সাড়ে তিন হাত ভূমি’, ‘পারুলক্যন্যা’, ‘সুরভি’ ও ‘ভূত এসে দেখা করে গেলো’ এবং বেঙ্গল পাবলিশার্স থেকে ‘গুনাই বিবির কিসসা। ’ এবারের গ্রন্থমেলা নিয়ে বলতে গিয়ে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘মেলায় এসে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

অন্যান্যবার এমন সময়ে হাঁটাচলার জায়গা থাকে না। মেলার গ্রাহকদের মধ্যে শিশু-কিশোর ও নারীরা একটা বড় অংশ। তাদেরও দেখা মিলছে খুবই কম। ঢাকার বাইরে থেকে যারা বই সংগ্রহ করতে আসেন তারা যেমন ঢাকায় আসতে পারছেন না, ঠিক তেমনি ঢাকার বাইরেও বই যাচ্ছে না। রাজনৈতিক কর্মসূচিতো থাকবেই। কিন্তু ভাষার এই মাসে হরতাল-অবরোধ না দিলেই খুশি হতাম।

মঙ্গলবার ১২৫ বই
অমর একুশে গ্রন্থমেলার দশম দিনে মঙ্গলবার মোট ১২৫টি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে উপন্যাস ২৫টি, গল্পগ্রন্থ ১৭টি, কবিতার বই ৩৫টি, প্রবন্ধের বই ৭টি, গবেষণা একটি, ছড়া একটি, শিশুসাহিত্য ২টি, জীবনী ৪টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৩টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ৪টি, ভ্রমণকাহিনি ৫টি, ইতিহাস বিষয়ক ৩টি, ধর্মীয় ২টি এবং অন্যান্য বিষয়ক বই ১৬টি।

উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে অনন্যা থেকে প্রকাশিত মহাদেব সাহার ‘ভুলে যাওয়ার চেয়ে ভালো কিছু নেই’, নালন্দা থেকে গোলাম কুদ্দুছের ‘ভাষার লড়াই ও রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন’, বিদ্যাপ্রকাশ থেকে স্বকৃত নোমানের ‘বহুমাত্রিক আলাপ’, কথাপ্রকাশ থেকে বদরুদ্দীন উমরের ‘ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন’, কৃষ্ণচূড়া প্রকাশনী থেকে মুহম্মদ শফির ‘রবীন্দ্রনাথ ও কাদম্বরী’, আগামী প্রকাশনী থেকে বিমলেন্দু হালদারের ‘বাংলাদেশ সৃষ্টি প্রেক্ষাপট ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’, অবসর প্রকাশনা সংস্থা থেকে মশিউল আলমের ‘সাদা রাত’ প্রভৃতি।

মোড়ক উন্মোচন
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের নজরুল মঞ্চে মঙ্গলবার মোট ৬টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু মোড়ক উন্মোচন করেন অভিনেত্রী কুসুম শিকদারের কবিতার বই ‘নীল ক্যাফের কবি’র। এছাড়া আরও যাদের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে শাওয়ান মনিরের ‘মুক্তির পথ’, শাকির দেওয়ানের ‘ভয়ংকর ভূতের ভয়ংকর কাণ্ড’ প্রমুখ।

মূলমঞ্চের আয়োজন
বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের নব্বইতম জন্মবর্ষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন  ড. মুহাম্মদ সামাদ, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম এবং ড. এম. অহিদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন কমরেড অজয় রায়।  

বুধবারের আয়োজন
বুধবার অমর একুশে মেলার দুয়ার খুলবে যথারীতি বেলা ৩টায়। চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নেতা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের নব্বইতম জন্মবর্ষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রশীদ। আলোচনায় অংশ নেবেন ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম, ড. জিল্লুর রহমান খান, অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক শাহীনুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী সিকদার এবং সুভাষ সিংহ রায়। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫

** বই মেলায় বিকাশ দিয়ে বই কিনলে ১০ শতাংশ ক্যাশ ব্যাক
** ‘আগুন বোঝো, পোড়া মানুষের কাতরানি বোঝো না’
** মেলায় শাকির দেওয়ানের ‘ভয়ংকর ভূতের ভয়ংকর কাণ্ড’
** জ্ঞানের পসরায় পিপাসু পাঠক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।