বইমেলা থেকে: লাগাতার অবরোধ। এর মধ্যে ছিল হরতালও।
তবে মেলার যেহেতু এখন শুরুর সময়, তাই লাভ-লোকসানের ধারণাটা পেতে আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
বৃহস্পতিবার মেলা ঘুরে দেখা গেছে, অবরোধ-হরতাল উপেক্ষা করে প্রতিদিনই মেলায় দর্শনার্থী আসছেন। এ সব দর্শনার্থীদের মধ্যে ক্রেতাও আছেন। দেশের রাজনৈতিক এমন পরিস্থিতিতে লোকজন যে আসছেন, প্রকাশকরা তাতেই খুশি। খুশি আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমিও।
রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক রিয়াজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, এখন যারা মেলায় আসছেন, তাদের অর্ধেকও হয়ত ক্রেতা নন, কিন্তু দর্শনার্থীরা এসে মেলাটাকে জমিয়ে রেখেছেন। তাছাড়া অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী দেখা গেছে, মেলার দিন দশেক পর বিক্রি শুরু হয়। এখন অনেকে এসে তালিকা সংগ্রহ করছেন। যাছাই-বাছাই করে পরে তারা বই কিনবেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশফাক হোসাইন বলেন, মেলার দ্বিতীয় দিন এসেছি। আর আজ (বৃহস্পতিবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি) মেলায় আসছি। তবে আজ একটি বই কিনেছি। কয়েকটি স্টল থেকে বইয়ের তালিকা নিয়েছি। বাছাই করে পরে কিছু বই কিনবো।
পঞ্চম দিনে ১৫৪ বই
বৃহস্পতিবার মেলায় এসেছে ১৫৪টি বই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো আগামী প্রকাশনী থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘বাংলাদেশের স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’, তাম্রলিপি থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘গ্রামের নাম কাঁননডুবি, আহমদ পাবলিসিং থেকে সেলিনা হোসেনের ‘একাত্তরের ঢাকা’, কাকলী প্রকাশনী আনিসুল হকের ‘মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস’, জলরং প্রকাশনা থেকে মোহাম্মদ মামুনুর রশীদের ‘ধীর সুর বিলম্বিত ব্যথা’, ঐতিহ্য থেকে জাকির তালুকদারের ‘কার্লমার্কস: মানুষটি কেমন ছিলেন’ তাম্রলিপি থেকে আহসান হাবীবের ‘ধুপপুর জঙ্গলে এলিয়েন’ ইত্যাদি।
বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে চারটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।
মূলমঞ্চের আয়োজন
বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- অধ্যাপক গোলাম মুস্তাফা।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন- অধ্যাপক মনসুর মুসা এবং হাকিম আরিফ।
সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইউম।
প্রাবন্ধিক অধ্যাপক গোলাম মুস্তাফা বলেন, ভাষা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে সুনীতিকুমার বাঙালির জীবন-ইতিহাসের সামগ্রিক রূপ অনুসন্ধান করেছেন। কিন্তু তাতে তৃপ্ত না হয়ে তিনি সমগ্র ভারতের জীবন ও সংস্কৃতিকে অধ্যয়ন ও আস্বাদন করেছেন।
তিনি বিশ্বের সব জাতির জীবন ও সংস্কৃতির প্রতিই আগ্রহী ছিলেন। মানুষের সৃজনশীলতার সব প্রচেষ্টাকেই তিনি উপলব্ধি ও উপভোগ করতে চেয়েছেন। নিজেকে প্রসারিত করতে চেয়েছেন বিশ্বের বিদ্বৎ-চর্চার ধারায়।
তিনি বলেন, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় পাণ্ডিত্যে-মনীষার-রসোপভোগ্যতায় তাঁর তুলনা বিরল। একশত পঁচিশতম জন্মবর্ষে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই।
আলোচকদ্বয় বলেন, ভাষাবিজ্ঞানে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অবদান অনন্য সাধারণ। ভাষাবিজ্ঞান চর্চায় আধুনিকতা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।
বাংলাভাষার পাশাপাশি অন্যান্য ভারতীয় ভাষাগোষ্ঠীর উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়েও তিনি নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ কাউয়ুম বলেন, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বহুমাত্রিক ভাষাবিদ। তাঁর স্মরণে বাংলা একাডেমি আলোচনা সভার আয়োজন করে তাঁর কাছে বাঙালির ঋণ স্বীকারের যে সূচনা করলো, এজন্য বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানাই।
পরে একাডেমির মূলমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
মেলায় শিশুপ্রহর ঘোষণা
অমর একুশে গ্রন্থমেলা শিশুদের অভিভাবকসহ স্বাচ্ছন্দ্যে বই কেনার সুবিধার্থে আগামী ৬, ৭, ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। শিশুপ্রহরের সময়কাল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা।
শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করবেন শিল্পী হাশেম খান।
শুক্রবারের মূলমঞ্চের আয়োজন
শুক্রবার গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে রজনীকান্ত সেনের সার্ধশত জন্মবর্ষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক নূরুল আনোয়ার।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন দীপা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিখা আরেফীন এবং লুভা নাহিদ চৌধুরী।
সভাপতিত্ব করবেন জামিল চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৫
** বইমেলায় দুই মন্ত্রী
** বইমেলায় প্রযুক্তির ছোঁয়া