অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: পরণে বাসন্তী রঙের শাড়ি, খোঁপায় হলুদ গাঁদার মালা। এক হাতে বই, অন্য হাত বন্দি প্রিয় মানুষের হাতে।
বইমেলার দুই চত্বরে ফাগুনের প্রথম দিন শুক্রবার এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে।
শীতের শুষ্কতাকে বিদায় করে, সজীবতার আহ্বান নিয়ে ধরায় এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। বসন্তের আগমনীতে নবরূপে সেজেছে প্রকৃতিও।
বসন্তের প্রথমদিনে মেলায় লেগেছিল ফাগুনের রঙ। মেলা জুড়ে যে দিকেই চোখ যায় শুধুই চোখে পড়ে হলুদ আর বাসন্তী রঙের সমারোহ। বইমেলা জুড়েই বসেছিল রঙের মেলা।
একে তো শুক্রবার। তারমধ্যে বসন্তের প্রথমদিন। তাই নানা বয়সের পাঠকের অংশগ্রহণে জমে ওঠে একুশের বইমেলা।
অবরোধ উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ভিড় করছেন প্রাণের এই মেলা চত্বরে।
এদিকে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখে বেজায় খুশি প্রকাশকরা। যেন এমনটা আশাই করছিলেন তারা।
আর এই প্রত্যাশাকে বালুচরে না ডুবিয়ে স্রোতের মতো বইমেলায় মিশছে সব মানুষের ভিড়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে আণবিক শক্তি কমিশন এবং দোয়েল চত্বর থেকে পুষ্টি ভবনের গেট—বইমেলায় প্রবেশের দুটি পথেই ছিল দীর্ঘ লাইন।
হলুদ রঙে রাঙা এসব পাঠক-দর্শনার্থীকে সারিবদ্ধভাবে দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন হলুদ কোনো ফুলের বাগান।
বসন্তের ছোঁয়া যে শুধু পাঠক মনেই লেগেছিল, তা কিন্তু নয়। ফাগুনের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তুলেছিলেন বইমেলার স্টলগুলোর বিক্রয়কর্মীরাও।
উপচেপড়া ভিড়ের সঙ্গে বইমেলায় স্টলগুলোতে বিক্রিও ছিল উল্লেখযোগ্য। মেলার প্রায় প্রতিটি স্টলেই ছিল বইপ্রেমীদের ভিড়।
বইপ্রেমীরা বসন্তের রঙের সঙ্গে নিয়েছেন নতুন বইয়ের ভাঁজ খোলার মন মাতানো গন্ধ। যাচাই-বাছাই আর পরখ করে কিনে নিচ্ছেন পছন্দের লেখকের নতুন বই।
বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কথা হয় রোদেলার প্রকাশক রিয়াজ খানের সঙ্গে।
বললেন,‘হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির কারণে ঢাকার বাইরের মানুষ মেলায় আসতে পারেনি। তবে রাজধানীর অনেককেই মেলা কাছে টানতে পেরেছে। তারা ছুটে এসেছেন। যেমন আজ (শুক্রবার) পহেলা ফাল্গুনের মেলা জমজমাট বলাই চলে। ’
এদিকে বিকেলে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে কয়েকটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করছেন অতিথিরা।
বিক্রয়কর্মীরা জানান, ভালোবাসা দিবস আগমুহূর্ত আর বসন্তের প্রথম দিনে মেলায় ভালোবাসার গল্প-উপন্যাস-কবিতাই বেশি কিনছেন পাঠকরা।
মেলার ১৩তম দিন শুক্রবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার শিশু প্রহর।
এ প্রহরে বাবা-মার হাত ধরে মেলায় আসে শিশু-কিশোররা। তবে এসময় অন্যান্য বয়সের মানুষের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ্যণীয়।
বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানায়, শিশু-কিশোরদের বই পড়া ও কেনায় আগ্রহী করে তুলতে গত বছর থেকে বইমেলা চলাকালীন প্রতি শুক্রবার শিশু প্রহর ঘোষণা করা হয়েছে।
পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ঘড়ির কাঁটা ১১টার ঘর পেরুতেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার দরজা খুলে দেওয়া হয়।
তবে শিশুদের বেশিরভাগ বইয়ের স্টল বাংলা একাডেমি চত্বরে থাকায় এখানেই ভিড় ছিল বেশি।
অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিশুদের চেয়ে বড়দের ভিড়ই বেশি লক্ষ্য করা গেছে। মেলায় আসা পাঠক-দর্শনার্থী মেলার দুই প্রান্তেই ঢুঁ মারছেন। গ্রহণ করছেন মেলার স্বাদ।
এর আগে সকালে মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। শিশুদের প্রিয় ‘সিসিমপুরে’র ইকরি-হালুমদের পরিবেশনাও অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫
** ‘খালেদার হৃদয়ে শান্তির কপোত উড়ুক’
** কিশোরদের ভিড় এখনো ‘সেবা’য়
** আহ! বাসন্তী প্রহর…