ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

অর্ধমাস শেষে স্বস্তির মেলা

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫
অর্ধমাস শেষে স্বস্তির মেলা ছবি: শোয়েব মিথুন/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গ্রন্থমেলা থেকে: এই সেদিন যেনো বইমেলা শুরু হয়েছিলো। দেখতে দেখতে অর্ধমাস কেটে গেলো।

অমর একুশের বইমেলা যাদের আবেগের জায়গায় বাস করে, তাদের কাছে প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুতই যেনো তাদের কাছে ফেব্রুয়ারির দিনগুলো ফুরিয়ে যাচ্ছে।
 
প্রকাশনা শিল্পের মন্দার যুগে প্রকাশকরাও চান মেলার সময় যদি আরেকটু বাড়তো! এমনিতেই অনলাইনের কারণে প্রকাশনা শিল্পের টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রিত বইয়ের বদলে বাড়ছে ই-বুকের পাঠক।
 
এ প্রজন্মের অনেক পাঠকও মনে করেন, প্রকাশনা শিল্প এখন কেবল টিকিয়ে রেখেছে অমর একুশে বইমেলা।

মেলায় কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়ুয়া এম এ রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বইমেলা আমাদের আবেগের জায়গায় বাস করায় এখানে অনেকেই ছুটে আসেন। যারা আসেন তাদের সবাই যে বই কেনেন তা নয়। আবার যারা বই কিনে নেন তাদের সবাই যে বই পড়েন তাও নয়। কেউ কেউ বুক শেলফে বই সাজিয়ে রাখেন।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বললেন, গতবার বইমেলায় আমি একটি প্রবন্ধের বই ও উপন্যাস কিনেছিলাম। সময়ের কারণে এখনও পড়া হয়নি। বুক শেলফেই রয়েছে।
 
রোদেলা প্রকাশনীর রিয়াজ খান বাংলানিউজকে বলেন, মুদ্রিত বইয়ের পাঠক এখনও রয়েছে। তবে অনলাইনের যুগে প্রকাশনা শিল্পে মন্দাভাব চলছে এটা ঠিক। তারপরও মুদ্রিত বইয়ের কদর এখনও রয়েছে।

রোববার (১৫ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলা পার করলো ১৫তম দিন। শুক্রবার পহেলা ফাল্গুন ও শনিবার ভালোবাসা দিবসে ভালো বিক্রির পর রোববার প্রকাশকরা গত দু’দিনের সে হাসি ধরে রাখতে পারেননি। তবে রোববারের বইমেলায় যারা এসেছেন, তাদের কাছে মেলার চিত্র ছিলো স্বস্তিকর। রোববার ভোররাতে বৃষ্টি হওয়ায় ধুলোবালি না থাকায় এদিন মেলায় ছিলো স্বস্তিকর পরিবেশ।
 
তবে বাংলা একাডেমির বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে পাঠকের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এ ভিড় শুধু বই দেখাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বিক্রিও হচ্ছে ভালো। মেলার প্রথম ১৪ দিনে বাংলা একাডেমির মোট ৫টি বিক্রয়কেন্দ্রে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫৮ লাখ টাকার বই।
 
মেলার নীতিমালা অনুযায়ী, অন্যান্য প্রকাশনীর বই যেখানে ২৫ শতাংশ ছাড়ে পাওয়া যায়, সেখানে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বই পাওয়া যায় ৩০ শতাংশ ছাড়ে। ২০০০ সালের আগে প্রকাশিত বইগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে শতকরা ৭০ ভাগ পর্যন্ত ছাড়। এজন্যই বইপ্রেমীরা ভিড় জমাচ্ছেন একাডেমির ৫টি বিক্রয়কেন্দ্রেই। ঘুরে ফিরে দেখছেন বই। যাওয়ার সময় হাত ভরে নিয়ে যাচ্ছেন একাডেমি থেকে প্রকাশিত মননশীল ও সৃজনশীল বইগুলো। এ বছর বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়েছে ৯৫টি নতুন বই।

রোববারও মেলায় এসেছিলেন শিশু সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এদিনও শিশুদের আবদার মেটাতে দিয়েছেন একের পর এক অটোগ্রাফ। ফিরে যাওয়ার সময়ও মেলা গেটে ঘিরে ধরেছিল শিশুরা। তারপরও কাউকে বিমুখ করেননি তিনি। বরং বলেন, ‘শান্ত হয়ে দাঁড়াও, তোমাদের সবাইকে অটোগ্রাফ দেবো’।
 
নজরুল মঞ্চের চিত্র
বিকেল থেকে সন্ধ্যা অব্দি নজরুল মঞ্চে ১০টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। এর মধ্যে মুহম্মদ জাফর ইকবাল উন্মোচন করেন মদিনা জাহান রিমির ‘ইনসমনিয়া’, ‘দেড়শ মাইল দূরের স্বর্গ’ ও শাহরিয়ার হোসেনের ‘শেষ অধ্যায়’ বইগুলো। অরুপ রতন চৌধুরীর ‘মরণ নেশা ফেন্সিডিল’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নতুন বই
বাংলা একাডেমির সমন্বয় ও জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মেলার ১৫তম দিনে নতুন বই এসেছে ৭১টি। এর মধ্যে, গল্প ৭টি, উপন্যাস ১১টি, প্রবন্ধ ৭টি, কবিতা ১৫টি, গবেষণা ৫টি, ছড়া ২টি, শিশুতোষ ৩টি, জীবনী ৪টি, বিজ্ঞান ১টি, ভ্রমণ ৩টি, অনুবাদ ২টি ও অন্যান্য বিষয়ের উপর এসেছে ১১টি নতুন বই।

এর মধ্যে জাগৃতি থেকে এসেছে পিয়াস মজিদের ‘কামু মার্কেস ইলিয়াস ও অন্যান্য’, অনন্যা থেকে এসেছে লুৎফর রহমান রিটনের ‘হরিণ একটা বান্ধ্যা ছিল ছিল গাছেরই তলায়’, ফজলুল আলমের ‘দেহ সুখ’ ও ‘সংস্কৃতির যত শত্রু’, বিজয় প্রকাশ থেকে এসেছে মোস্তফা সোহেলের ‘ভালোবাসা ও একটি জল ফড়িং’, তারিক সজিবের ‘তুমি আমারই ছিলে’, ঐতিহ্য থেকে জুরজি জায়দানের ‘শাজারাতুর দুর’ উল্লেখযোগ্য।

মূলমঞ্চের আয়োজন
বিকেলে মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহমদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. ফিরোজ মাহমুদ। আলোচনায় অংশ নেন নিশাত জাহান রানা ও মৃত্তিকা সহিতা। অনুষ্ঠানে আসতে না পারায় অধ্যাপক শামসুল হোসাইনের বক্তব্য পাঠ করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক সায়েরা হাবীব। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মাহমুদ শাহ কোরেশী।
সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া আহমেদ ও মুস্তাফা ওয়ালিদ। আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আরশিনগর বাউল সংঘ’ শিল্পীদের পরিবেশনার পাশাপাশি সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাইদুর রহমান বয়াতী, মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, সোনিয়া বয়াতি, পাগলা বাবলু, মমতা দাসী বাউল, রণজিৎ দাস বাউল, কোহিনুর আকতার গোলাপী ও আমজাদ দেওয়ান।

সোমবারের বইমেলা
বেলা ৩টায় দুয়ার খুলবে মেলার। চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্য্যন্ত। বিকেল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আহমেদ রেজা। আলোচনায় অংশ নেবেন কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, রশিদ আশকারী ও মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫

** টাস্কফোর্সের অভিযানে ১ স্টল বন্ধ, ২ বই জব্দ
** অর্ধমাসে বাংলা একাডেমির বিক্রি সাড়ে ৫৭ লাখ
** বইমেলায় দুর্যোগ মোকবেলা বিষয়ক প্রচারণা
** বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করলেন ওবায়দুল কাদের
** জমে উঠছে রোববারের বইমেলা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।