বইমেলা থেকে: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-য় শাকুর মজিদের মোট তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে দুটি ভ্রমণ কাহিনী ও একটি স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ।
ফেব্রুয়ারির ১৬ষ্ঠ দিন বইমেলা প্রাঙ্গণে এলে নতুন প্রকাশিত বই, লেখালেখি ও বাৎসরিক বইমেলা আয়োজন নিয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় শাকুর মজিদের।
প্রথমেই চিরচেনা সেই প্রশ্ন, মেলায় এসে কেমন লাগছে-র জবাবে তিনি বলেন, ‘মেলায় এসে বিভ্রান্ত। কোন দিকে যাব, বুঝতে পারি না। মেলা দুই ভাগ। কোথায় কী আছে আগে জানি না, ধূলা বালির মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে কাহিল। পছন্দের স্টলও খুঁজে পাই না। ’
পছন্দের স্টল খুঁজে না পাওয়ার কারণ কী?—শাকুর মজিদ বলেন, ‘প্রথমত মেলার স্টলগুলোর বিন্যাস অগোছালো। স্টল নাম্বারগুলোর সাথে কোনও দিক নির্দেশনা নেই। কোন স্টল বর্ধমানে আর কোনটা সোহরাওয়ার্দীতে তা জানার কোনও সুযোগ নেই। একটা মেলাকে ভেঙ্গে দুই টুকরা করা হয়ে গেছে। ’
আপনি কি মেলাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণের বিরোধী? নাকি চান যেকোন একখানেই হোক, এমন যে, বাংলা একাডেমিতেই আর মেলার দরকার নেই?
এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একসময় মনে হতো শুধু বাংলা একাডেমিতেই মেলা হলে ভালো, এখন মনে হয়, বাংলা একাডেমির কোনও প্রয়োজনই নেই। ’
শাকুর মজিদ বলেন, ‘মেলার আয়োজন করা বাংলা একাডেমির আসল কাজ নয়। তাঁরা গবেষণা, প্রকাশনা, সেমিনার, পুরস্কার প্রদান এসবেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। বইমেলার মত বড় আয়োজন করার মত লোকবল এবং কারিগরি কৌশল জানা লোক বাংলা একাডেমিতে নেই। সে কারণে বছর বছর ধরে মেলা নিয়ে নানা রকমের বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। ’
পাশের দেশে, কলকাতার বইমেলা আয়োজনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘ওখানে আয়োজক হছে প্রকাশকদের গিল্ড, তারাও দুইবার জায়গা বদল করে এখন শহরতলীতে সরিয়ে নিয়েছে মেলা। আমাদের দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ও বাংলা একাডেমির প্রতিনিধিবৃন্দ প্রতি বছরই সে উৎসব দেখতে যান। ওখান থেকে কিছু শিক্ষা নিলেও আমাদের মেলা আরো সুশৃঙ্খল হতো। ’
বর্তমানে সম্প্রসারিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানস্থ মেলা প্রসঙ্গে মন্তব্য চাইলে শাকুর মজিদের অভিযোগ, ‘মেলার পরিসর বড়, কিন্তু অনেক জায়গা অব্যবহৃত রেখে দেয়া হয়েছে। তৃষ্ণার্ত দর্শক-ক্রেতার জন্য এক গ্লাস পানি খাওয়ারও ব্যবস্থা নেই। ’
ভ্রমণ রচনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন কিভাবে? প্রথম কবে আপনার ভ্রমণের বই বের হয়?
‘আমি দেশ ভ্রমণে প্রথম বেরই ১৯৯৯ সালে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৩ রাত ছিলাম। এর আগে আমার ভারত ও নেপাল দেখা ছিল, সেখানকার ছবি তোলা ছিল। আমিরাত সফরের পর ৩ দেশের তুলনামূলক বিশ্লেষণ ধর্মী ছবি নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী করি “ট্রাভেলার্স ক্লিক্স” নামে। এর পর আমিরাত সফর নিয়ে কয়েকটি লেখা লিখি এবং ২০০৩ সালে “আমিরাতে তেরো রাত” নামে প্রথম ভ্রমণগ্রন্থ প্রকাশ হয়। এরপর লিখতে থাকি, এবং এ মেলা পর্যন্ত আমার মোট ১৭টি ভ্রমণ গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। ’
শাকুর মজিদ জানান, নিজের দেখা অভিজ্ঞতাগুলো অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করার জন্যই তিনি ভ্রমণ নিয়ে লেখেন। এবং যেহেতু তিনি প্রচুর ছবিও তোলেন, ফলে লেখার সঙ্গে বইগুলোতে অনেক ছবিও জুড়ে দিতে পারেন।
কী ধরনের লেখা আপনি বেশি পড়েন—জানতে চাইলে শাকুর মজিদ বলেন, ‘আমি নন ফিকশন টাইপের লেখা পড়ি বেশি। ইতিহাস, নৃতত্ব, জীবনীধর্মী। গল্প উপন্যাশ কবিতা আগে পড়েছি অনেক, এখন ভালো লাগে না। ’
ভ্রমণগ্রন্থ ‘অন্নপূর্ণায়’-এর প্রচ্ছদ ডিজাইন করেছেন লেখক নিজেই, ছেপেছে উৎস প্রকাশনী, দাম ২৭০ টাকা। এছাড়া শাকুর মজিদের অপর ভ্রমণগ্রন্থ ‘প্রাগের ঠাকুরোভা লবণপুরের মোজার্ট’ প্রকাশ করেছে অবসর প্রকাশনা সংস্থা। এ বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন আবিদ এ আজাদ, মূল্য ২৫০ টাকা। আর, ১৯৮০ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের দিনলিপি নিয়ে অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত তাঁর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘ক্যাডেটের ডায়েরি’র প্রচ্ছদ ডিজাইন করেছেন মাসুম রহমান, মূল্য ২২৫ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫