ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

এবার অস্ট্রেলিয়ার গল্পের দিকে ফজল হাসান

শিল্প-সাহিত্য প্রতিবেদক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫
এবার অস্ট্রেলিয়ার গল্পের দিকে ফজল হাসান ছবি:দেলোয়ার হোসেন বাদল/ বাংলানিউজটোয়েন্টফোর.কম

বইমেলা থেকে: অস্ট্রেলিয়ায় যান ১৯৮৪ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণীতে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করার পর অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ফরেস্ট্রিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

বর্তমানে অস্ট্রিলিয়ার ফেডারেল সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় অবস্থান।

গল্পকার ও অনুবাদক ফজল হাসান—গত ৩১ বছর ধরে স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়াতেই বসবাস করছেন। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-য় ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ থেকে বেরিয়েছে তাঁর অনুবাদে দুটি বই—‘চীনের শ্রেষ্ঠ গল্প’ এবং ‘নির্বাচিত ম্যান বুকার বিজয়ীদের সেরা গল্প’। এ উপলক্ষে দু’বছর পর গত ৬ ফেব্রুয়ারি দেশে আসেন তিনি। থাকবেন এ মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত।

মেলায় এসে কেমন লাগছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতি দুই বছরে বইমেলার সময় একবার করে দেশে আসি। এর আগে এসেছিলাম ২০১৩ সালে। ’ জানান, এবার দেশে এসে একইসঙ্গে অনেক ভালো আবার অনেক খারাপ দুটোই লাগছে। ‘ভালো লাগছে বলাই বাহুল্য বই বেরিয়েছে সেজন্য, আর খারাপ লাগার জায়গাটাও অন্যদের সঙ্গে “কমন” পড়বে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অব্যাহত হরতাল অবরোধজনিত অনিরাপত্তাবোধ। ’

নতুন প্রকাশিত দুটি অনুবাদ বই প্রসঙ্গে ফজল হাসান বলেন, ‘এবার প্রকাশিত আমার দুটি বইয়ের একটি চীনের গল্প নিয়ে। আমার মনে হয়েছে, চীনা সাহিত্যের সঙ্গে আমাদের তেমন যোগাযোগ নেই। হাতে গোনা কয়েকজন লেখক, বিশেষ করে লু স্যুন, দুজন নোবেল বিজয়ী কথাসাহিত্যিক জাও হিঞ্জিয়ান এবং মো ইয়ান ছাড়া প্রায় সবাই আমাদের কাছে অপরিচিত।

কিন্তু চীনা সাহিত্যের রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য, গৌরবময় ইতিহাস এবং অনবদ্য ভাষা। ’ তিনি জানান, বইটিতে সংকলিত গল্পগুলোর প্রকাশনার সময়কাল গত শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে শুরু করে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত।

ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশের দাবি, চীনের আধুনিক এবং সমকালীন গল্প নিয়ে এটাই বাংলা ভাষায় অনূদিত একমাত্র সংকলন।

এর আগে ২০১৩ সালে একই প্রকাশনী থেকে ফজল হাসানের অনুবাদে বের হয় আফগানিস্তানের সমকালীন আঠার সাহিত্যিকের বাছাই করা ছোটগল্পের সংকলন ‘আফগানিস্তানের শ্রেষ্ঠ গল্প’। বইটি পাঠকমহলে সাড়া ফেলে বলে জানান প্রকাশক জহিরুল আবেদীন জুয়েল।

আফগানিস্তানের গল্প অনুবাদ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফজল হাসান বলেন, ‘১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আগ্রাসনের পরপরই অনেক আফগান কবি-সাহিত্যিক জীবননাশের আশংকায় মাতৃভূমি ছেড়ে পাকিস্তানে ও ইরানে পালিয়ে যান। পরে বিভিন্ন সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে থিতু হন তারা। যদিও এ সব অভিবাসী লেখকরা ভিন দেশের অচিন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছেন, কিন্তু তাদের লেখায় বারবার ফুটে ওঠে যুদ্ধের বিভৎস ঘটনা, শরণার্থী জীবনের দুঃখ-দুর্দশা, মানসিক টানাপোড়েন এবং স্বদেশে ফেরার আকুলি-বিকুলির মত স্পর্শকাতর বিষয়গুলো।

এ ছাড়া নরনারীর চিরকালীন সম্পর্ক এবং জীবনের নানা জটিল বিষয়ও ফুটে ওঠে আফগান গল্পে। বলা হয়, নির্বাসিত এবং অভিবাসী আফগান কবি-সাহিত্যিকরাই সমকালীন আফগান সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রেখেছে। গল্পের বাইরের এসব নানা গল্পও আমাকে আফগান গল্প অনুবাদে উৎসাহী করেছিল। ’

ওই বছরই ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ থেকে তাঁর অনুবাদে আরও একটি বই প্রকাশিত হয়, ‘ইরানের শ্রেষ্ঠ গল্প’। এবং এ বইটিতেও বাংলাদেশি পাঠকদের সঙ্গে ইরানের সমকালীন গল্প সাহিত্যের একটা ধারণা দেবার প্রয়াস ছিল।

অর্থাৎ আপনি বিভিন্ন দেশ ধরে ধরে ওইসব দেশের সমকালীন গল্পগুলো অনুবাদ করছেন। ইরান, আফগানিস্তানের পর এবার  চীন। দীর্ঘসময় ধরে নিজে অস্ট্রেলিয়ায় থাকছেন, অস্ট্রেলিয়ার সমকালীন গল্প নিয়ে কোনও বই করার ইচ্ছে আছে কি?

‘ঠিক ধরেছেন! আমার পরের বইটা অস্ট্রেলিয়ার সমকালীন গল্প নিয়ে। আশা করছি আগামী বছরই বইটা পাঠকদের হাতে পৌঁছাবে। ’ এসময় তাঁর অনুবাদে বিভিন্ন গল্প বিভিন্ন সময় বাংলানিউজে প্রকাশ হয়েছে জানিয়ে তিনি বাংলানিউজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এবং বলেন, ‘আশা করছি আমার পরের অনুবাদ, অস্ট্রেলিয়ার গল্পগুলোও বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য বিভাগকে দিতে পারব। ’

গত বছর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত মেলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গত বছর আমি মেলায় আসতে পারিনি, তাই সম্প্রসারিত আয়োজনটি এবারই প্রথমবার প্রত্যক্ষ করছি। ভালো লাগছে। এবং মনে করছি, দুই অংশে খণ্ডিত না রেখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই পুরো মেলাটিকে সরিয়ে আনা যেতে পারে। তাতে সুবিধা বেশি। ’

আর, এ বছর প্রকাশিত অপর অনুবাদ বই নির্বাচিত ম্যানবুকার বিজয়ীদের সেরা গল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সংকলনের প্রতিটি গল্পেই রয়েছে গল্পকারের এক ধরনের বক্তব্য এবং লেখকের গল্প বলার নিজস্ব স্টাইল। গল্পকারের দেশ ও সময়কে তুলে ধরা ছাড়াও সংকলিত গল্পগুলোতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মূল্যবোধ এবং ঘাত-প্রতিঘাতের বিষয় ফুটে উঠেছে। ’ ফজল হাসানের আশাবাদ, ‘বিখ্যাত লেখকদের গল্পগুলো বিদগ্ধ এবং উৎসাহী পাঠকদের ভালো লাগবে। ’

দুটি বইয়েরই প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশের স্টলে বইগুলো পাওয়া যাবে। এছাড়া অনলাইনে বই বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠান রকমারি.কম থেকে অর্ডার করেও বই দুটি সংগ্রহ করা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।