গ্রন্থমেলা থেকে: ২০ দলের ডাকা হরতাল-অবরোধের ২৫তম দিন ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরুর সময় প্রকাশকদের কপালে ছিলো চিন্তার বলিরেখা। শঙ্কা ছিলো মেলা জমে ওঠা নিয়ে।
কিন্তু হরতাল ও অবরোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ২৪তম দিন (২৪ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশকদের প্রত্যাশা পূরণের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
মঙ্গলবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পৌনে ৩টায় দোয়েল চত্বর হয়ে মেলার দিকে অগ্রসর হতেই চোখে পড়ে দীর্ঘ লাইন। দু’দিক থেকে টিএসসি ও দোয়েল চত্বর পিছনে রেখে বাংলা একাডেমির গেটে রাখা তিনটি আর্চওয়ের সামনে তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী, শিশু ও বয়স্ক লোকরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে। অন্তত এই একটি জায়গায় বঙ্গসন্তানরা খুবই সুশৃঙ্খল।
বাংলা একাডেমির সামনে না দাঁড়িয়ে ডান দিকে মোড় নিয়ে সোজা চলে যাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানেও দীর্ঘ লাইন। ফাল্গুনের মধ্যদুপুর থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত আর্চওয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে কোনো ক্লান্তি নেই বইপাগল মানুষগুলোর মধ্যে।
৩টায় মেলার দরজা উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পিঁপড়ার সারির মতো উদ্যানের ভেতরে প্রবেশ করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই সময় প্রকাশনের প্যাভিলিয়নে জমে ওঠে ভিড়। এখন থেকে প্রকাশিত মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘সেরিনা’ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ‘গাংচিল’ উপন্যাসটি কেনার জন্যই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।
কথা হয় বিক্রয়কর্মী গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়ার সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বই বিক্রির যে প্রত্যাশা ছিলো সেটি পূরণের পথে রয়েছে। গত দু’দিনে যা বিক্রি হয়েছে আগামী চারদিন তা অব্যাহত থাকলে টার্গেট পূরণ হবে অনায়াসে।
সময় প্রকাশনের প্যাভিলিয়নটির ঠিক পাশের প্যাভিলিয়নটি অন্য প্রকাশের। প্রতিদিনই এ প্যাভিলিয়নটি একটু দেরি করে খোলে। অন্য যে কোনো স্টল বা প্যাভিলিয়ন থেকে বেশি বিক্রি হলেও অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নটি কেন দেরি করে খোলা হয়, তা বোধগম্য নয়। মেলা শুরুর আধা ঘণ্টাকাল পর্যন্ত কালো ত্রিপল দিয়ে মুড়িয়ে রেখে অকাল প্রয়াত নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় কি না, কে জানে?
বই বিক্রির খবর নিতে আরো বেশ কয়েকটি স্টলে ঢুঁ মেরে প্রত্যাশা পূরণের ইতিবাচক খবরটিই পাওয়া যায়।
ঐতিহ্যবাহী ও প্রসিদ্ধ প্রকাশনা সংস্থাগুলো বই বিক্রি নিয়ে মোটামুটি খুশি। হরতাল অবরোধের মধ্যেও পাঠক ও ক্রেতার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার ব্যাপারে শুরুতে শঙ্কা থাকলেও এখন তা দূর হয়ে বেড়েছে প্রত্যাশার পরিধি।
কথা হয় ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) বিক্রয়কর্মী লিয়নের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বই বিক্রি অনেকটা বেড়েছে। এখন যারা মেলায় আসছেন তাদের বেশিরভাগই ক্রেতা। দুই হাতভরে বই কিনে বাড়ি ফিরছেন তারা। এভাবে বাকি দিনগুলো চলতে থাকলে টার্গেট পূরণ কঠিন হবে না।
ইউপিএল, সময় ও অন্যপ্রকাশের মতো বড় বড় প্রকাশনীগুলোর বইবিক্রি যেমন আশার সঞ্চার করেছে, ঠিক তেমনিভাবে নতুন আসা কয়েকটি প্রকাশনীও বইবিক্রিতে এগিয়ে রয়েছে।
শুধু যে বই বিক্রেতা বা প্রকাশকদের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে তা নয়, হরতাল-অবরোধের মধ্যেও নির্বিঘ্নে মেলায় আসতে পেরে এবং বই কিনতে পেরে যারপরনাই খুশি পাঠক ও ক্রেতারা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কথা হয় মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও অনুকূল থাকায় বইয়ের দীর্ঘ তালিকা নিয়ে মেলায় এসেছি। এখন বেছে বেছে বই কিনছি। মেলার পরিবেশটাও চমৎকার লাগছে।
মেলামঞ্চের আয়োজন
প্রতিদিনের মতো আজও মেলা শুরু হয়েছে বিকেল ৩টায়। ৪টায় মূলমঞ্চে শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি-গ্রন্থমালা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপন্থাপন করেন ড. মাহবুবুল হক। আলোচনায় অংশ নেন অসীমানন্দ গঙ্গোপাধ্যায়, গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া, মো. শহীদ উজ জামান, মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও মাহবুবা নাসরীন।
সভাপতিত্ব করেন রণজিৎ কুমার বিশ্বাস।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪,২০১৫
** মেলায় ‘যে সুতোয় বোনা যায় সমতল আবাস’
** মেলায় মতিয়র রহমানের ‘ধর্ম দর্শন বিজ্ঞান’
** নাশকতার বিরুদ্ধে নিঃশব্দ প্রতিবাদ বইমেলা