গ্রন্থমেলা থেকে: উপচেপড়া ভিড়। লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ প্রবেশ করছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে।
শুক্রবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় টিএসসি সংলগ্ন এলাকায় বইমেলা থেকে বের হওয়ার পরই তাকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। মুক্তচিন্তার এ ব্লগার ও লেখককে হত্যার প্রতিবাদে মুখর ছিলো বইমেলা।
মেলা শেষ হওয়ার আগের দিন বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন লেখক-প্রকাশকরা। শুদ্ধস্বরের স্টলের সামনে কালো ডিজিটাল ব্যানারে লেখা হয়েছে- ‘কলমযোদ্ধা শহীদ অভিজিৎ রায়। আমরা তোমাকে ভুলবো না। ’
এ প্রকাশনা সংস্থা থেকে এবার এসেছে, অভিজিৎ রায় ও মীজান রহমানের যৌথ লেখা ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’।
এছাড়া শুদ্ধস্বর প্রকাশনী থেকেই বের হয়েছিল অভিজিৎ রায়ের ‘সমকামিতা’, ‘অবিশ্বাসের দর্শন’, ‘ভালবাসা কারে কয়’-নামক বইগুলো।
আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গণি বলেন, কোনো বই নিষিদ্ধ করা যেমন ঠিক নয়, তেমনি কোনো লেখককে হত্যা তো দূরের কথা, অপদস্থ করা যাবে না। লেখার প্রতিবাদ লেখা দিয়ে করতে হবে। মুক্তবুদ্ধির লেখক হত্যা রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
তাম্রলিপির কর্ণধার এ কে এম তারিকুল ইসলাম রনি বলেন, এ হত্যা মেলার জন্য হুমকিস্বরূপ। এর বিচার না হলে আরও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবে।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে বহুমাত্রিক লেখক ও ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদের উপর সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকী এবং বৃহস্পতিবার টিএসসিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে স্মরণ করা হয়।
বর্ধমান হাউসে গ্রন্থমেলার তথ্যকেন্দ্রের সামনে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি ড. মুহাম্মদ সামাদ, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কবি তারিক সুজাত, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি, অন্যপ্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম, ব্লগার মারুফ রসূল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, এক দশকে পেরিয়ে গেলেও হুমায়ুন আজাদের উপর বর্বর সন্ত্রাসী হামলার বিচার না হওয়ায় মৌলবাদী ঘাতকচক্র নৃশংসভাবে তরুণ গবেষক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছে। অবিলম্বে এই ঘাতকদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধে সরকার এবং সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
শুক্রবার মেলার ২৭তম দিনের দ্বার উন্মোচন হয় সকাল ১১টায়। এর এক ঘণ্টা আগেই অর্থাৎ, সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত শিশু চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কার তুলে দেন অর্থনীতিবিদ ড. খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।
প্রকাশিত নতুন বই
অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৭তম দিনে শুক্রবার মোট নতুন বই এসেছে ১৯০টি। এর মধ্যে উপন্যাস ১৯টি, গল্পের বই ৩৮টি, প্রবন্ধের বই ১০টি, কবিতার বই ৫৪টি, গবেষণামূলক বই ১টি, ছড়ার বই ৭টি, জীবনী ৩টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ৩টি, বিজ্ঞান বিষয়ক বই ৪টি, ভ্রমণকাহিনি ৮টি, ইতিহাস বিষয়ক বই একটি, রাজনীতি বিষয়ক বই ২টি, স্বাস্থ্য বিষয়ক বই ২টি, রম্য একটি, অনুবাদের বই ২টি, অভিধান একটি, সায়েন্স ফিকশন একটি এবং অন্যান্য বিষয়ের বই ৩৩টি।
উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে অন্যপ্রকাশ থেকে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ‘গল্প পঞ্চাশ্য’, আগামী প্রকাশনী থেকে সেলিম রেজা নিউটনের ‘অভ্যাসের অন্ধকার’, কবি প্রকাশনী থেকে বিভূতিভূষণ মণ্ডলের ‘প্রসঙ্গ : রবীন্দ্র-নজরুল ও অন্যান্য প্রবন্ধ’, জোনাকি প্রকাশনী থেকে কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের ‘জয় বাংলা ও অন্যান্য গল্প’, অনন্যা থেকে তারিক সুজাতের ‘সবুজে ধুয়েছি পা’, ভাষা প্রকাশ থেকে আফরোজা সোমার ‘ডাহুক’ প্রভৃতি।
মোড়ক উন্মোচন
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের নজরুল মঞ্চে শুক্রবার মোট ২৫টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। গণপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত কিয়ান রাশেদ সাদীর ‘সি অব ড্রিমস’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাকের ‘বাংলাদেশের নদ-নদীর গতি-প্রকৃতি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত।
সন্ধ্যার আয়োজন
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল শেখ উজ্জ্বলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাঙালি ফাউন্ডেশন’ এবং ড. মো. জিয়াউর রহমান-এর পরিচালনায় ‘হামিবা সাংস্কৃতিক একাডেমী’র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ইফফাত আরা নার্গিস, নাশিদ কামাল, মাসুদা নার্গিস আনাম, নাদিরা বেগম, অনামিকা ত্রিপুরা, নারায়ণ চন্দ্র শীল, ক্যামেলিয়া সিদ্দিকা, তানজিনা করিম স্বরলিপি, মো. আলতাফ হোসেন এবং নাজিয়া মিশকাত তমা।
শনিবারের আয়োজন
শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার শেষ দিন। এদিন সকাল ১১টার পরিবর্তে মেল শুরু হবে সকাল ১০টায়, শেষ হবে রাত ৯টায়। এদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে নাট্যকার শম্ভুমিত্র শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শিল্প সমালোচক আবুল হাসনাত। আলোচনায় অংশ নেবেন হাসান ইমাম, মামুনুর রশীদ, এসএম মহসীন। সভাপতিত্ব করবেন রামেন্দু মজুমদার। সন্ধ্যা ৬টায় আয়োজিত হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে শুভেচ্ছা ভাষণ দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিসচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। হবে পুরস্কার বিতরণ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫
** মুক্তমনাদের হত্যার বিচার দাবি ছাত্রলীগেরও
** হুমায়ুন আজাদ-অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীরা একই গোষ্ঠীর
** কেউ সন্তুষ্ট কেউ অসন্তুষ্ট বিক্রিতে
** পাঠকের হাতে বই, প্রকাশকের মুখে হাসি