ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

দুয়ার খুলছে পরিপাটি বইমেলার

আদিত্য আরাফাত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৬
দুয়ার খুলছে পরিপাটি বইমেলার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বইমেলার চিরচেনা যে দৃশ্যপট, বিড়ম্বনা, শরীরের সাথে শরীর ঘেঁষে বইকেনার যে পরিবেশ চোখে ভেসে উঠে, এবার সে চিত্র দেখা যাবে না। বিড়ম্বনামুক্তভাবে পাঠকরা যেনো মেলায় বই কিনতে, ঘুরতে, আড্ডা দিতে পারেন সেসব বিষয় মাথায় নিয়েই বাংলা একাডেমি এনেছে মেলায় নতুন আঙ্গিক।

এতে স্বস্তি পাবেন পাঠক, দর্শনার্থী, লেখক ও প্রকাশক।
 
বইমেলার দুয়ার খোলার আগে মেলার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, এবার অনেক বড় পরিসরেই হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বেড়েছে বইমেলার পরিধি। বাংলা একাডেমির উল্টো দিকের উদ্যানের সীমানা প্রাচীরের একটি অংশ ভেঙে তৈরি করা হয়েছে ৪৮ ফুটের অতিরিক্ত নতুন প্রবেশ পথ। , যার সাথে বাংলা একাডেমি অংশের সরাসরি সংযোগ থাকবে। মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় যেনো জটলা তৈরি না না হয় তাই নতুন এ গেট করা হয়েছে। পাশে বাঁশ এবং টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে মেলার আয়তন বাড়ানো হয়েছে।
 
গ্রন্থমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটো মূল প্রবেশ পথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের আটটি পথ থাকবে। এবারই প্রথম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের সুবিধার্থে নতুন ৪৮ ফুটের সুপ্রশস্ত গেটটি নির্মাণ করা হয়েছে।  
 
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিক দিয়ে প্রবেশের সময় যে ফাঁকা অংশ ছিল সেটাও চলে এসেছে মেলার ভেতরে। ফলে কালী মন্দিরের গেট দিয়ে সরাসরি বইমেলায় প্রবেশ করবেন দর্শনার্থীরা। এছাড়াও দোয়েল চত্বরে তিন নেতার মাজার দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকে মেলায় প্রবেশ করা যাবে। একইভাবে টিএসসির দিক থেকে উদ্যানে ঢুকে মেলায় প্রবেশ করা যাবে। মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় যেনো জটলা সৃষ্টি না হয় এ জন্যই বাংলা একাডেমি এবার আসা যাওয়ার পথ বাড়িয়েছে।
 
পরিবর্তন শুধু যে এই; তা-নয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে এসব সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে এবার বসছে মেলার স্টল। মুক্তমঞ্চ চলে এসেছে মেলা চৌহদ্দির ভেতরে। সেখানে প্রতিদিনই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিশু কর্নারও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। এগুলো এর আগের বছরগুলোতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেই হতো।
 
এদিকে পুরোনো কাঠামো বদলে ফেলে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে মেলা। প্যাভিলিয়নকে ঘিরে গুচ্ছ গুচ্ছ স্টল বিন্যাস করা হয়েছে। একেকটি প্যাভিলিয়নকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে স্টল। এছাড়া রয়েছে মসজিদ, মানুষের বসবার ব্যবস্থা। মেলার ভেতরের পথগুলোও এবার প্রশস্ত। সবমিলিয়ে মেলা এবার পরিপাটি হবে বলে আশা বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের।

বইমেলায় এবার পরিবর্তন কি এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের কাছে। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এবারের গ্রন্থমেলায় পরিবর্তন বা নতুনত্ব দুটোই বলা যায়। যত বড় স্পেসে এবার মেলা হচ্ছে তা রেকর্ড। গতবছর আড়াই লক্ষ বর্গফুটের জায়গায় মেলা হয়েছে। এবার মেলার আয়তন বেড়ে তা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার বর্গফুট। মানে বিশাল জায়গা।

তিনি বলেন, মেলায় যারা আসেন তারা যেনো স্বস্তিতে থাকতে পারেন, উপভোগ করতে পারেন সেজন্য আয়তন বাড়ানো হয়েছে।

এছাড়া পুরো মেলায় ২ শতাধিক সিসি ক্যামরা থাকবে। নিরাপত্তার জন্য টিএসসির পাশে এবং দোয়েল চত্বর থাকবে র‌্যাবের ক্যাম্প।

এছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্যও মেলার নিরাপত্তায় থাকবেন বলে তিনি জানান।

মেলার চারদিক
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং একাডেমি সম্মুখস্থ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দুই প্রান্তেই বইমেলা থাকবে। তবে উন্নয়ন সংস্থা, গণমাধ্যমসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার স্টল থাকবে বাংলা একাডেমিতে। এছাড়া প্রকাশনা স্টল থাকবে উদ্যানে।

একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮২টি প্রতিষ্ঠানকে ১১১টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩২০টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪০টি ইউনিট; মোট ৪০২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৫১টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬০০০ বর্গফুট আয়তনের ১৫টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

বইমেলায় বাংলানিউজ
বইমেলার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যম পরিবেশন করলেও এবার বাংলানিউজই বড় আয়োজন নিয়ে মেলা কাভার করছে। দেশের শীর্ষ এ সংবাদমাধ্যমটির বড় একটি টিম কাজ করবে পুরো মেলা জুড়ে। প্রতিমুহূর্তে মেলার বিভিন্ন তথ্য, খবর, ফিচার, চিত্র এবং সাক্ষাৎকারসহ মেলার নানাদিক পাঠকের সামনে তুলে ধরবে বাংলানিউজ। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে ৬৮ নং স্টলটি বাংলানিউজের। এখানে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বাংলানিউজে পরিবেশিত মেলার খবরও মেলায় আগতরা দেখার সুযোগ পাবেন।

লিটলম্যাগ কর্নার
৯২টি লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউজের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তরুণ লেখকদের আড্ডাস্থল হয়ে ওঠবে লিটলম্যাগের এ কর্নারটি।

মেলায় বাংলা একাডেমির বইয়ে ৩০ অন্যদের ২৫ শতাংশ
মেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০ শতাংশ কমিশনে এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির ২টি প্যাভিলিয়ন, একাডেমি প্রকাশিত অভিধান বিক্রয়কেন্দ্র, একাডেমির শিশুকিশোর প্রকাশনাভিত্তিক বিক্রয়কেন্দ্র এবং একাডেমির সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার-এর বিক্রয়কেন্দ্র থাকবে।

মেলার যত চত্বর
অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১৫টি গুচ্ছে সজ্জিত করা হয়েছে। চত্বরগুলো নামাঙ্কিত থাকবে ভাষাশহিদ আবুল বরকত, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান, রফিকউদ্দিন আহমদ, আবদুল জব্বার, শহিদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, আলতাফ মাহমুদ, সিরাজুদ্দীন হোসেন, ডা. আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীন, শিশুসাহিত্যিক সাজেদুল করিম, হাবীবুর রহমান, ফয়েজ আহমদ এবং রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই-এর নামে।

শিশুকর্নার এবার উদ্যানে
বিগত বছরগুলোতে শিশু কর্নার ছিল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। এবার শিশুকর্নার মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। শিশুকিশোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বইমেলায় ক্রয়-বিক্রয়ের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে সে জন্যই এই ব্যবস্থা। এই কর্নারকে শিশুকিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হবে।

মেলায় প্রযুক্তি
বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্তৃপক্ষ গ্রন্থমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ খবরাখবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করবে। ওয়াইফাই সুবিধা থাকবে মেলার উভয় অংশে।



বাড়তি নিরাপত্তা

এবারের বইমেলায় বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। মেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তাকর্মীরা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে দু’শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুটি স্টল-ওয়ারি একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এবং প্রশিক্ষিত অগ্নিনির্বাপক কর্মী থাকবেন। স্বচ্ছন্দে চলাফেরার সুবিধার্থে স্টলের সামনের চলাচল-পথে উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত স্বাধীনতা স্তম্ভ ও এর পার্শ্ববর্তী স্থানকে নান্দনিকভাবে গ্রন্থমেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে যাতে স্বাধীনতার স্তম্ভের আলোক-বিচ্ছুরণে মেলা প্রাঙ্গণ আলোকিত হয়ে ওঠে।

মেলার সময়সূচি                    
বইমেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

অপেক্ষা দুয়ার খোলার
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ৩টায় গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে তিনি বইমেলা পরিদর্শনে যাবেন। এরপর সর্ব সাধারণের জন্য বাঙালির চিন্তা চেতনার অমর একুশে গ্রন্থমেলার দুয়ার খুলবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬
এডিএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।