বইমেলা থেকে: মেলার ভিতর কিছু কিছু স্টলে এখনও হাতুড়ি-বাটলের ঠক ঠক শব্দ শোনা যাচ্ছে। বইমেলার পর্দা উঠলেও স্টল সাজাতে ব্যস্ত এখনও অনেক প্রকাশক।
সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বের হতেই সবার জন্য খোলা হয় বইমেলার দুয়ার। মেলার দুই অংশ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তখন মুখরিত হয়ে ওঠে দর্শনার্থীর আনাগোনায়।
তবে এখনও পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত হয়ে উঠেনি মেলা প্রাঙ্গণ। চালু হয়নি প্রায় অর্ধশত প্রকাশনা সংস্থার স্টল। বিভিন্ন স্থানে আর্বজনাও পড়ে থাকতে দেখা গেলো।
মঙ্গলবারের মধ্যে এসব ঠিক হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে মেলা কর্তৃপক্ষ। বিশাল এ পরিসরের মেলা ভালোভাবেই জমবে বলে আশা প্রকাশ করছেন প্রকাশকরা।
চালু না হওয়া স্টলগুলোর মধ্যে রয়েছে-অঙ্কুর প্রকাশনী, বর্ণপ্রকাশ, ত্রয়ী প্রকাশন, বইপত্র, মর্ডান পাবলিকেশনস, শাহীন পাবলিকেশনস, শিল্পতরু, ঘাষফুল, যুক্ত, প্রচলন, ছোটদের মেলা, অনুপ্রাণন, পারিজাত, অয়ন, মুক্তচিন্তা, কালি ও কলম প্রকাশন, গ্রন্থপ্রকাশ, উৎস প্রকাশন, পলাশ প্রকাশনী, পাঠশালা, সুলেখা প্রকাশনী ইত্যাদি।
মেলার বাংলা একাডেমি অংশে এখনও লিটল ম্যাগ কর্নারের ৯২টি স্টলের একটিও চালু হয়নি। এর পাশাপাশি মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনেক জায়গাতেই কাঠ, বাঁশ, দড়ি-দড়া, শোলা ও হার্ডবোর্ড ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আশা করছি মেলার দ্বিতীয় দিনে এসব সমস্যা আর থাকবে না। অনেকেই দেখলাম নিজেদের স্টলের সামনের অংশ নোংরা করে রেখেছেন। এক্ষেত্রে নিজেদের সচেতন হওয়া উচিত।
মেলার প্রথম দিনেই প্রকাশ হয়েছে জনপ্রিয় সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবালের নতুন দুইটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বই। কাকলী প্রকাশনী থেকে এসেছে ‘তিতুনি এবং তিতুনি’ ও তাম্রলিপি থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘ক্রেনিয়াল’।
বই দুইটি প্রকাশের খবর পেয়ে জাফর ইকবাল ভক্তরা বেশ ভালোই ভিড় জমিয়েছে প্রকাশনী দুটির স্টলের সামনে। হালকা ভিড়ের মধ্যে বিক্রি দেখে সামনের দিনগুলো ভালো যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন কাকলীর স্বত্বাধিকারী এ কে নাসির আহমেদ সেলিম।
নতুন বই মেলার তথ্যকেন্দ্র চালু না হওয়ায় সোমবার নতুন বইয়ের সংখ্যা জানাতে পারেনি কর্তপক্ষ। তবে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, প্রথম দিনেই শতাধিক বই এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে অবসর প্রকাশনী থেকে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর দুইটি বই ‘রবীন্দ্রনাথ কেন জরুরি’ ও ‘উত্তরাধিকারের অনিবার্য প্রশ্ন’, অন্যপ্রকাশ থেকে হরিশংকর জলদাসের ‘একলব্য’ ও মোস্তাক আহমেদের ‘নিলির ভালোবাসা’, জাগৃতি থেকে এসেছে আবুল হোসেনের খোকনের ‘সূর্যসৈনিক’, ঐতিহ্য থেকে এসেছে দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের ‘মাশরাফি’, তাম্রলিপি থেকে এসেছে আহসান হাবীবের ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ‘, শাহরিয়ার হোসেনের ‘স্বর্ণপ্রাতে’, সূচিপত্র এনেছে দীপু মাহমুদের ‘নিতুর ডায়েরি ১৯৭১’, অ্যার্ডন পাবলিকেশন এনেছে আমিনুর রহমানের সম্পাদনায় ‘পৃথিবী সেরা সমকালীন চার কবির কবিতা’ ও ‘নিকারগুয়ার কবিতা’, ফরিদ কবিরের ‘আমার গদ্য’ ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ এনেছে তপন দেবনাথ ‘দূর নক্ষত্রের গল্প’, স্টুডেন্ট ওয়েজ এনেছে সৈয়দ শামসুল হকের ‘মিশ্রগদ্য’, আগামী প্রকাশনী এনেছে আহমদ শরীফের ‘মানস মুকুরে বিম্বিত স্বদেশ’।
দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারি) মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠান। এতে থাকবে বাংলা একাডেমিকে ‘ফিরে দেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভা। প্রবন্ধ পাঠ করবেন শফিউল আলম।
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ আবদুল কাইউমের সভাপতিত্বে আলোচনা করবেন বিশিষ্টজন ফজলে রাব্বি, আজিজুর রহমান আজিজ, বেগম আকতার কামাল ও মোহিত কামাল। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬
এডিএ/টিআই