অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: একুশে গ্রন্থমেলার সঙ্গে জড়িয়ে বাঙালির আবেগ-অনুভূতি-চেতনা-সত্ত্বা। তাইতো মাঘ-ফাল্গুনের বিকেলে ছুটে আসা মেলা প্রাঙ্গণে।
ঠিক যেমনটি হয়েছে বুধবার (০৩ ফেব্রুয়ারি)। মেলার দ্বার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের মুখরিত কোলাহল ছড়িয়েছে বাংলা একাডেমি থেকে ওপারের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত। তার ওপর আবার চলছে আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব। সব মিলিয়ে শুরুতেই পাঠক-কবিদের ভিড় চোখে পড়ার মতো।
মেলার প্রথম দু’দিনের চেয়ে অনেকটা সরব এদিনের বইমেলা। শুক্র-শনি বা ছুটির দিনের মতো হয়তো দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবেশ করতে হয়নি মেলায় আগতদের, তবে লোকারণ্য যে কম তা বলা যাবে না। সময় যত যাচ্ছে, মানুষ তত বাড়ছে। আর কবিতা উৎসবে সকাল থেকে আগতরা তো রয়েছেনই।
মেলার প্রথম দু’দিনেই নতুন বইয়ের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। যদিও বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারি) মেলায় আসা নতুন বইয়ের সংখ্যা দিয়েছে মাত্র ৭টি। এ বিষয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমার ধারণা প্রকাশকরা যে তথ্য প্রতিদিন দেন তার থেকে অনেক বই বের হয়। কোনো প্রকাশক যদি সময় মতো দিনেরটা দিনে বইয়ের তথ্য দিতে না চান, তবে আমরা তো জোর করে শাস্তি দিতে পারি না। এ বিষয়ে তাদের সচেতন হতে হবে। এতে বাড়বে তথ্যপ্রবাহ। আর সাধারণ পাঠকরা তথ্য কেন্দ্র থেকে পূর্ণ সঠিক বিষয়গুলোই জানতে পারবেন।
এ বিষয়ে তিনি প্রকাশকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যে বই যেদিন মেলায় আসছে, তারা যেন সেই তথ্য সেই দিনই মেলার তথ্যকেন্দ্রে জমা দেন।
এদিন মেলায় এসেছেন ওপার বাংলার (পশ্চিমবঙ্গ) বিশিষ্ট সাহিত্যিক, কবি রাস বিহারী দত্ত এবং তার সঙ্গে কবি আনসার উল হক। তাদের সঙ্গে বাংলানিউজের কথা হয় বেশ খানিকক্ষণ। তারা জানান, জাতীয় কবিতা উৎসব, তারপর বাংলা একাডেমির আয়োজনে আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব সঙ্গে বইমেলা- এই তিন আয়োজন কেন্দ্র করে বাংলাদেশে আসা। থাকবেন আরও ক’টা দিন। কবিতা শোনাচ্ছেন, মেলা ঘুরছেন- দারুণ এক সময় পার করছেন বলে জানালেন।
কবি রাস বিহারী বলেন, মেলায় আসাটা মানুষের এক ধরনের ‘কৌতূহল পূরণ’। বই এবং ভাষার প্রতি প্রেম মানুষকে রোজ টেনে নিয়ে আসছে। অন্তত গত দু’টা দিন আমি তাই অনুভব করলাম। আমাদের কলকাতা বইমেলাও এতো জমে না যতটা মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা জমে। সারা মাস ধরে বইমেলা বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই।
ঠিক এমন সময় পাশে থাকা কবি আনসার উল হক বলেন, মানুষ মূলত আবেগের টানে আসেন। এটি আসলে আবেগের জায়গা, আবেগের মেলা। বইপ্রেমী, বাংলা ভাষার প্রতি মমতা যাদের রয়েছে তারা হরদমই আসবেন, ঘুরবেন। এটাই চির সত্য।
বই কিনতেও দেখা গেছে এদিন। হাতে নতুন কেনা বই, সঙ্গে স্টলে দাঁড়িয়ে অন্য বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানো, তা থেকে বের হচ্ছে সুবাস, আসলেই দারুণ এক পরিবেশ! রাজধানীর ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র তানজিলের কাছে প্রশ্ন ছিল বই কেনা বিষয়ে। তিনি বলেন, বই পড়া আমার শখ। ভালো লাগলে বই তো কিনতেই হবে। সঙ্গে বন্ধুরাও বই কিনবে, তখন শেয়ার করে পড়বো আমরা।
তানজিলের সঙ্গে এসেছেন বন্ধু ওমর, রানা, মেহেদী, ফরহাদ, মিশু। তারা বাংলানিউজকে জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এসে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছেন। মূলত বই পড়া এবং পাঠাভ্যাসই তাদের মেলায় টেনে এনেছে।
মায়ের হাত ধরে মেলায় এসেছে নাফিসা আনজুম ও নুসাইক আহমেদ নিঝুম। নাফিসা ভিকারুন্নিসা স্কুলের আজিমপুর শাখার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। আর নিঝুম কিন্ডারগার্টেনের প্লেগ্রুপে পড়ছে। তারা স্টল ঘুরে ঘুরে শিশুতোষ বইয়ের একটা তালিকা করছে। এ বিষয়ে তাদের মা রহমান লিপি বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার ছুটির দিন ওদের বাবাসহ আমি এসে শিশু প্রহরে বই কিনবো। এটার একটা মজা আছে, বাচ্চারা সে অপেক্ষাতেই রয়েছে। ওদের সঙ্গে নিয়ে এখন একটা তালিকা করছি মূলত। এ তালিকায় রয়েছে যেমন ভূতের বই, তেমনি বিজ্ঞান বিষয়ক বইও।
তিনি আরও বলেন, মা হিসেবে চাই সন্তানরা যেন বই পড়ায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। এভাবেই বড় করার স্বপ্ন দেখি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬
আইএ/এএ