গ্রন্থমেলা থেকে: খোলা আকাশে গোল হয়ে সবাই আড্ডাচ্ছলে আলোচনা করছেন। একজন বাউল সাধক বলছেন সুফিবাদ নিয়ে।
সাদা চামড়ার হলেও রিবেক মার্টিনের এসব বিষয় অজানা নয়। ভিনদেশি হলেও তিনি বাংলা ভাষার গবেষক। বলেছেন প্রাচীন ভাষার সাহিত্য চর্যাপদ নিয়েও। এসব আলোচনা, গানে ছিলো না কোনো আনুষ্ঠানিকতা।
বুধবার (৯৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্রন্থমেলার একপ্রান্তে খোলা আকাশের নিচে বসে এভাবেই বাউলদের কয়েকজন অনুসারী আড্ডা, আলোচনা গানে মাতেন। মেলার আসা অনেকেই এখানে বসে বাউলদের গান শুনেছেন।
গ্রন্থমেলার পরিবেশটাই এমন; কেবল বইয়ের বেচাকেনায় সীমাবদ্ধ থাকে না। বই কেনা বেচার বাইরেও এখানে চলে আড্ডা, গান, আলোচনাসহ সাংস্কৃতিক আয়োজন। মেলাকে ঘিরে উৎসবে পরিণত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ।
তৃতীয় দিন বিকেলে রাজধানীর রামপুরা থেকে আসা সৌরভ খন্দকার বলেন, মেলায় বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। উদ্যানে ঘুরতে দেখি বাউল গান চলছে। বসে পড়লাম সেখানে।
ধানমন্ডি থেকে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিমা তাবাসসুম বাংলানিউজকে বলেন, একটি উপন্যাস কিনলেও আজ মূলত এসেছি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে। স্টলে স্টলে ঘুরে বই উল্টে-পাল্টে দেখেছি। পরে বই কিনবো।
মেলার তৃতীয় দিনে অনেকটা গুছিয়ে উঠেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। প্রায় সবগুলো স্টল এখন পরিপাটি। নেই পেরেক ঠোকার শব্দ, রঙের ঝাঁঝালো গন্ধ। বুধবার মেলার ঝাঁপি বিকেল ৩টায় খুললেও সন্ধ্যায় মেলার দুই প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে। এবারের বইমেলা নিয়ে সবার আশাও বেশি। এর বিশেষ কারণও রয়েছে। এবারের বইমেলায় চারটি শুক্রবার, চারটি শনিবার, একুশে ফেব্রুয়ারি ও মাসটি ২৯ দিনের হওয়ায় বন্ধের দিনের সংখ্যাও বেশি। যে কারণে সাধারণ মানুষ অনেকগুলো ছুটির দিন পাবেন। প্রকাশকরাও মুখিয়ে আছেন ছুটির দিনগুলোর জন্য।
এবারের বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে শিশু কর্নারটি সংযুক্ত হয়েছে।
শিশুসাহিত্য বইঘরের সত্ত্বাধিকারী জেসমিন আক্তার মুন্নি বলেন, খুব ভালো লাগছে যে মেলার শিশু কর্নারটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আমরা বেশ উৎসাহ পাচ্ছি। শিশুরা ইতোমধ্যেই তাদের মা-বাবার সঙ্গে আসা শুরু করেছে। যেটি আগে শিশুপ্রহরের দিন বেশি দেখা যেত।
নতুন বই
বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা যায়, বুধবার মেলায় নতুন বই এসেছে মোট ৬৩টি। এর মধ্যে গল্প ১৩, উপন্যাস ১২, প্রবন্ধ ৪, কবিতা ১০, গবেষণা ২, ছড়া ২, শিশুসাহিত্য ৬, জীবনী ১, রচনাবলি ১, মুক্তিযুদ্ধ ২, ভ্রমণকাহিনী ১, ইতিহাস ১ ও অন্যান্য বিষয়ের ৮টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
মেলায় আসা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে অবসর থেকে প্রকাশিত ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘রবীন্দ্রনাথ কেন জরুরি’, হরিশংকর জলদাসের ‘চিত্তরঞ্জন অথবা যযাতির বৃত্তান্ত’, তাম্রলিপি থেকে গুলতেকিন খানের কবিতার বই ‘আজো কেউ হাঁটে অবিরাম’, অন্যপ্রকাশ থেকে নওশাদ জামিলের কবিতার বই ‘ঢেউয়ের ভেতর দাবানল’, পিয়াস মজিদের গল্পগ্রন্থ ‘নগর ঢাকায় জনৈক জীবনানন্দ’, ঐতিহ্য থেকে দেওয়ান বারীন্দ্রনাথের ‘প্রাইভেট লাইফ অব ইয়াহিয়া খান’, আফসার ব্রাদার্স থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘যখনি জাগিবে তুমি’, চৈতন্য থেকে আসমা বীথির কবিতার বই ‘টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ি’, চারুলিপি থেকে ড. আশরাফ সিদ্দিকীর ‘বাংলাদেশের লোককাহিনী, একই প্রকাশনা থেকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ‘যখন সাংবাদিক ছিলাম’, অনুপম প্রকাশনী থেকে যতীন সরকারের ‘রচনাসমগ্র-৫’, দ্বিজেন শর্মার ‘সাহিত্যসমগ্র’, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ভৌতিক কাহিনী ‘অন্য জীবন’, আগামী থেকে রশীদ হায়দারের ‘তিন, একজনই’, অনন্যা থেকে ইমদাদুল হক মিলনের ‘ছোট সবুজ মানুষ’, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘কলামসমগ্র-৩’, মাওলা ব্রাদার্স থেকে মহাদেব সাহার ‘মধুর মুহূর্তগুলি চলে যায়’, বেঙ্গল পাবলিকেশনস থেকে শাহনাজ মুন্নীর ‘থেমেছে শহর’, সংকলনগ্রন্থ ‘স্থপতি মাজহারুল ইসলাম’, উৎস প্রকাশন থেকে স্বকৃত নোমানের ‘তাজউদ্দিন আহমেদ’।
বৃহস্পতিবারের আয়োজন
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে শুরু হবে মূল মঞ্চের আয়োজন। ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী: গবেষণা কার্যক্রম, অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেবেন অধ্যাপক মনসুর মুসা, ড. ভূঁইয়া ইকবাল, ড. আমিনুর রহমান সুলতান। সভাপতিত্ব করবেন ড. মনিরুজ্জামান। এছাড়া সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬
এডিএ/এএ
** কেউ মনে রাখেনি আমার দীপনকে