অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: বই মেলায় কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক আফসানা বেগমের নতুন দু’টি বই প্রকাশিত হয়েছে। বই দু’টির একটি মৌলিক রচনা ও অপরটি অনুবাদের।
মৌলিক বইটি উপন্যাসের। নাম- প্রতিচ্ছায়া। আর অন্যটি ২০১৩ সালে ছোটগল্পের জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া কানাডার লেখক অ্যালিস মুনরোর ছোটগল্পের সংকলনের অনুবাদ। নাম- পলাতক। এ দু’টি লেখকের প্রকাশিত ষষ্ঠ ও সপ্তম বই।
দু’টি বই-ই প্রকাশ করেছে সন্দেশ প্রকাশনী (স্টল নম্বর ৩২৬-৩২৭-৩২৮)। এর মধ্যে ৮০ পৃষ্ঠার প্রতিচ্ছায়া উপন্যাসটির বিনিময় মূল্য ১৫০ টাকা। ৩০৩ পৃষ্ঠার ‘পলাতক’ নামে অনুবাদের বইটির বিনিময় মূল্য ৪৮০ টাকা।
উপন্যাসটির ব্যাপারে জানতে চাইলে লেখক বলেন, দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্যের আড়ালে মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। একজনের আচার-ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা তার সম্পর্কে কম-বেশি ধারণা পাই। কিন্তু ভেতরের যে মানুষটি থাকে, তার দেখা পাওয়া সহজ নয়। একজন মানুষ নিজেও কি সবসময় জানে, ভেতরে ভেতরে সে কতো ইচ্ছে লালন করে বা কী করার ক্ষমতা রাখে? প্রতিচ্ছায়া উপন্যাসে তেমনই এক চরিত্রের ভেতরের মানসিক পরিস্থিতি উদঘাটনের চেষ্টা করেছি। চেপে রাখা ইচ্ছে কাউকে কতোটা ভয়াবহ মানসিক বৈকল্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে, সেটি তুলে ধরাই ছিলো উদ্দেশ্য। বিদ্যমান সামাজিক পরিস্থিতিতে তীব্র শাসনে মানুষ হওয়া একটি মেয়ের কাহিনী ও ভয়াবহ পরিণতি দেখানো হয়েছে এই উপন্যাসে।
আর অনুবাদ বইটি অ্যালিস মুনরোর বিখ্যাত গল্প সংকলন ‘রানঅ্যাওয়ে’র বাংলা অনুবাদ ‘পলাতক’। সংকলনটিতে মোট আটটি গল্প আছে।
অনূদিত বইটির প্রসঙ্গে আফসানা বেগম বলেন, অ্যালিস মুনরোর ছোটগল্প সাধারণত বড় গল্পের মতো, আর কাহিনীর বিস্তারটিও উপন্যাসের আঙ্গিকে। ছোটগল্পের প্রচলিত ধারণার বাইরের প্রতিটি গল্প অনন্য। অন্য প্রান্তের দেশ কানাডার লেক, পাহাড় আর অলিগলির গল্প হলেও তার রচনা নারীর সর্বজনীন সংগ্রামের কথা বলে।
আগের লেখার সঙ্গে প্রকাশিত নতুন উপন্যাসটির পার্থক্য বা ভিন্নতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভিন্নতার কথা বলতে গেলে বলতে পারি, আগে এরকম মনোলগ বা স্ট্রিম অব কনশাসনেস নিয়ে কাজ করিনি। সেদিক দিয়ে আমার আগের লেখার সঙ্গে একটি দৃশ্যমান পার্থক্য থাকছে। তবে মূল পার্থক্য এর গদ্যের চলনে।
অনুবাদ বইটির বিষয়ে বলেন, অ্যালিস মুনরো এখনো সেভাবে অনূদিত হয়নি। সেদিক থেকে এই সংকলনটি গুরুত্বপূর্ণ।
উপন্যাস প্রতিচ্ছায়ার রচনাকাল ২ থেকে ৬ ডিসেম্বর, ২০১৩।
রচিত হবার পেছনের গল্পটি শুনতে চেয়েছিলাম তার কাছে। বললেন, মানুষের ব্যবহার বা প্রতিক্রিয়ার পেছনের কারণটি আমাকে বরাবর ভাবায়। তাই অতীত, যা তার মন- মানসিকতা তৈরির জন্য দায়ী, সেটা নিয়ে ভাবি। আমি মনে করি, প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব অবস্থানে সঠিক ও তার প্রতিটি কাজের পেছনে নিজস্ব যুক্তি থাকে। এমনকি মানসিক বৈকল্যের শিকার হয়ে মানুষ যখন ভয়াবহ অপরাধ করে ফেলে, তার পেছনেও জোরালো যুক্তি সে তৈরি করে। এরকম একটি ব্যাপারকে কল্পিত কাহিনীর মাধ্যমে উপস্থাপন করতে গিয়েই উপন্যাসটি লেখা।
আর, ২০১৩-তে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরে অ্যালিস মুনরোর গল্প অনুবাদে আগ্রহী হই। সে সময়ে প্রকাশকের অনুরোধে কাজটি শুরুর পরিকল্পনা করি। আটটি গল্প অনুবাদ করেছি ২০১৪ সাল জুড়ে। বছরটিতে বিভিন্ন পত্রিকায় গল্পগুলো প্রকাশিত হয়েছে।
বই প্রকাশের জন্য বইমেলার সময়টিকেই বেছে নিলেন কেন—প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এটি সম্পূর্ণভাবে প্রকাশকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হয়েছে। তিনি অনুমান করেন, দেশের প্রচলিত রীতি অনুযায়ীই হয়তো এমন পদক্ষেপ। পাঠক বইমেলায় নতুন বইয়ের খোঁজে আসে, বছরের পর বছর এমনটাই হয়ে আসছে। তাই নতুনকে প্রকাশ করার তাগিদটাও বইমেলার সময়েই।
প্রতিচ্ছায়া বইটির প্রচ্ছদ করেছেন সেলিম আহমেদ। অনুবাদ গল্পের বই পলাতকের প্রচ্ছদ শারমিন নওরিনের। বইমেলা ছাড়াও অনলাইন বুকশপ রকমারি.কমে অর্ডার দিয়ে বই দু’টি সংগ্রহ করা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৬
টিকে/আরএম